আগামী অর্থ বছরেও অর্থনীতির শ্লথ গতি বজায় থাকবে বলে জানাল আর্থিক সমীক্ষা। এর কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে অনিশ্চয়তাকে দায়ী করে মোদী সরকারের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরণের সুপারিশ, বিশ্বায়নের সুযোগ নিয়ে ফায়দা তোলার দিন শেষ। এখন ঘরোয়া অর্থনীতির দিকে মন দিয়েই আর্থিক বৃদ্ধিতে চাঙ্গা করতে হবে।
কী ভাবে? মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার মত, অর্থনীতিতে গতি আনতে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যগুলি ব্যবসার পরিবেশ সহজ করুক। যাতে ব্যবসার খরচ কমে। ছোট-মাঝারি শিল্প আরও লোককে চাকরি দিতে পারে। মানুষের আয় বাড়ে। আর্থিক বৃদ্ধিতে শিল্পমহলের ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি মনে করিয়েছেন, কর্পোরেট সংস্থাগুলির মুনাফার অঙ্ক ১৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু কর্পোরেট সংস্থাগুলির যে হারে লাভের অঙ্ক বেড়েছে, সেই তুলনায় কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি থমকে রয়েছে।
শহরের বাজারে চাহিদা নিয়ে নালিশ জানিয়ে শিল্পপতিরা বাজারে শ্যাম্পু-সাবান থেকে গাড়ি-বাইকের বিক্রি কমছে বলে জানিয়েছিলেন। আজ মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা বার্তা দিয়েছেন, শিল্পপতিরা কর্মীদের বেতন বাড়াক। কর্মীরাই বেশি করে সংস্থার পণ্য কিনবেন। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ষাটের দশকে ফোর্ড মোটর কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ফোর্ড তাঁর নিজের সংস্থার গাড়ি বিক্রি বাড়ানোর জন্যই কর্মীদের বেতন বাড়িয়েছিলেন।
রাজ্য সরকার ও শিল্পমহলকে কী করতে হবে, তা নিয়ে কথা বললেও মোদী সরকার আর্থিক বৃদ্ধিকে চাঙ্গা করার জন্য কোন রাস্তায় হাঁটবে, আয়করে ছাড় দেবে কি না, তা নিয়ে নীরব থেকেছে আর্থিক সমীক্ষা। কারণ, তার উত্তর মিলবে শনিবার সকালে নির্মলা সীতারামনের অষ্টম বাজেটে।
আজ অর্থমন্ত্রী সংসদে আর্থিক সমীক্ষা পেশ করেছেন। সমীক্ষার পূর্বাভাস, আগামী অর্থ বছর ২০২৫-২৬-এ আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬.৩% থেকে ৬.৮%-এর মধ্যে থাকবে। কোভিডের প্রভাব অর্থনীতি থেকে মুছে গিয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি হচ্ছে বলে গ্রামের বাজারে চাহিদা বাড়বে। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি কমে আসবে। সার্বিক অর্থনীতির পরিবেশ স্থিতিশীল বলে অদূর ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে গতি আসবে। কিন্তু ভূ-রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা, জিনিসপত্রের দাম আচমকা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগা নিয়ে সংশয় থাকছে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে ক্ষমতায় এসে কী নীতি নেবেন, কোন দেশের উপরে শুল্ক চাপাবেন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন, ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইনের যুদ্ধ কোন দিকে যাবে, তা নিয়েওঅনিশ্চয়তা বিদ্যমান।
চলতি আর্থিক বছরে বৃদ্ধির হার ৬.৪%-এর মধ্যে থাকবে বলে সরকারি পূর্বাভাস। চার বছরে সর্বনিম্ন। আর্থিক সমীক্ষার ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী, আগামী বছরেও বৃদ্ধির হার ৭%-এর কম থাকছে। পরপর দু’বছর। অথচ সমীক্ষাই জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ২০৪৭-এ ‘বিকশিত ভারত’ বা উন্নত অর্থনীতির স্বপ্ন পূরণ করতে হলে অন্তত এক দশক ধরে প্রতি বছর ৮% হারে বৃদ্ধি প্রয়োজন। লগ্নির হার বর্তমানে জিডিপি-র ৩১%। তা বেড়ে ৩৫% হতে হবে। কারখানা ক্ষেত্রকে কৃত্রিম মেধার মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে ব্যয় করতে হবে। ২০৩০ পর্যন্ত কৃষির বাইরে প্রতি বছর ৭৮.৫ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। সাক্ষরতার হার ১০০%, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়ন ও দ্রুত গতিতে উন্নত মানের পরিকাঠামো তৈরিকরতে হবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)