নেপথ্যে ‘মউ’ স্বাক্ষরের আদানি ও রেবন্ত রেড্ডি। সামনে রাহুল গান্ধী। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
শিল্পপতি গৌতম আদানিকে আক্রমণ করা রাহুল গান্ধীর প্রায় রোজনামচায় পরিণত হয়েছে। বুধবার সেই রাহুলেরই দলের নেতা তথা তেলঙ্গানার নতুন মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি ‘মউ’ স্বাক্ষর করলেন আদানি গোষ্ঠীর একাধিক সংস্থার সঙ্গে। তা-ও আবার দেশে নয়, সুইৎজ়ারল্যান্ডের দাভোসে গিয়ে। রেবন্ত মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন গত ৮ ডিসেম্বর। দেখা যাচ্ছে, এর মধ্যেই নিজের রাজ্যে আদানিদের বিনিয়োগ টানতে মরিয়া তিনি।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এবং তেলঙ্গানা সরকার যৌথ ভাবে কিছু প্রকল্পের পরিকল্পনা নিয়েছে। যার বেশির ভাগটাই তথ্যপ্রযুক্তি ও শক্তি সংক্রান্ত। সেই সব প্রকল্পেই ১২৪০০ কোটি টাকার ‘মউ’ স্বাক্ষরিত হয়েছে। সেই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন স্বয়ং গৌতম আদানিও। রেবন্তের সঙ্গে আদানির ছবি নিয়ে ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে খোঁচা দিতে নেমেছে গেরুয়া শিবিরের আইটি সেল। আদানিদের বিভিন্ন সংস্থা এই প্রকল্পে যুক্ত হবে। এর মধ্যে রয়েছে ‘গ্রিন এনার্জি’র মাধ্যমে জল সরবরাহের প্রকল্পও। তা ছাড়া ড্রোন ও মিসাইল প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও বড় বিনিয়োগ করবে আদানিরা। আদানি গোষ্ঠীর তরফে বলা হয়েছে, হায়দরাবাদ এই মুহূর্তে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের এলাকা হিসেবে দেশের মধ্যে অন্যতম সম্ভাবনাময়। সেই কথা মাথায় রেখেই ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ও তেলঙ্গানা সরকারের যৌথ প্রকল্পে শামিল হচ্ছে তারা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আদানির ‘সখ্যের’ অভিযোগ তুলে রাহুলের আক্রমণ কয়েক বছর ধরেই চলছে। এ নিয়ে উত্তাল হয়েছে সংসদও। আদানিদের শেয়ারদর ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর অভিযোগ তুলেছিল মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট। তা নিয়ে কম হইচই হয়নি। রাহুলকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘নরেন্দ্র মোদী সরকারের নীতি হল হম দো, হমারে দো।’’ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের স্লোগান ধার করে রাহুল বোঝাতে চেয়েছিলেন, সরকার চালান দু’জন (মোদী-অমিত শাহ)। এবং তা দুজনের জন্য (আদানি-অম্বানী)।
মোদীর সঙ্গে আদানিকে জুড়ে বিজেপির রোষানলে পড়েছেন তৃণমূলের সাংসদ মহুয়া মৈত্রও। অন্তত তাঁর তেমনই বক্তব্য। যে বক্তব্যের সঙ্গে একমত রাহুলও। মহুয়া আপাতত বিবিধ অভিযোগে লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত। তিনি লোকসভা সচিবালয়ের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন। তার মধ্যেই তাঁকে দিল্লির বাংলো ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে নোটিস দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। এই পরিস্থিতিতে তেলঙ্গানার কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীর এবং কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে আদানিদের ‘মউ’ সই কি রাহুলকে বিড়ম্বনায় ফেলতে পারে?
অনেকের মতে, তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ, রাহুল ‘রাজনৈতিক’ আক্রমণ করেছেন। আর রেবন্ত মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ‘প্রশাসনিক’ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাঁর রাজ্যে আদানিদের বিনিয়োগ পেতে চেয়েছেন। বিআরএসকে হারিয়ে তেলঙ্গানায় কংগ্রেসের সরকার গড়ার আগে ভোটের প্রচারে অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। অতীতে রাহুল যখন আদানিদের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ করেছেন, বিজেপি এবং ওই শিল্পপতিকে এক বন্ধনীতে ফেলে আক্রমণ শানিয়েছেন, তখনও আদানিদের বিনিয়োগ ছিল রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়ে। দুই রাজ্যেই তখন কংগ্রেসের সরকার। এখন অবশ্য দু’টি রাজ্যেই বিজেপির সরকার। গত ডিসেম্বরে পালাবদল হয়েছে রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়ে। ফলে এর সঙ্গে কংগ্রেসি রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। রাজনীতি এবং প্রশাসন আলাদা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy