Advertisement
০১ মে ২০২৪
Fraud News

হারানো ছেলে সেজে মাকে প্রতারণা, ২২ বছর পরে ঘরে ফেরা ‘সন্ন্যাসী’ আসলে ভুয়ো!

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, পরিচয় ভাঁড়িয়েছিলেন ওই সন্ন্যাসী। ঝাড়খণ্ডে যে মঠের সন্ন্যাসী হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি, সেটিও ভুয়ো। সেই নামে কোনও মঠই নেই।

The monk who returned home after 22 years is actually fake

২২ বছর পর ‘সন্ন্যাসী’ সেজে ঘরে ফিরেছিলেন ছেলে। ছবি এক্স (সাবেক টুইটার)

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:৪৯
Share: Save:

দিন কয়েক আগেই ছেলে ঘরে ফেরার আনন্দে মেতেছিলেন দিল্লির বাসিন্দা রতিপাল সিংহ। তখনও তিনি জানতেন না, বড় ‘প্রতারণা’র শিকার হতে চলেছেন তাঁরা। হারানো ছেলের ঘরে ফেরার আনন্দ যে এ ভাবে বিষাদে পরিণত হবে, তা কল্পনাতেই আসেনি সিংহ দম্পতির। ২২ বছর পর তাঁদের ছেলে পিঙ্কু সন্ন্যাসী বেশে ঘরে ফিরেছেন, ভেবেছিলেন তাঁরা। কিন্তু পরে জানতে পারেন, সেই ব্যক্তি তাঁদের হারিয়ে যাওয়া সন্তান নন। শুধু তা-ই নয়, ‘নকল’ সন্তানের দ্বারা প্রতারিতও হয়েছেন তাঁরা।

কয়েক দিন ধরেই রতিপাল সিংহ এবং তাঁর ছেলে পিঙ্কুর কাহিনি ঘুরছে সমাজমাধ্যমে। ২২ বছর পর ঘরে ফেরা ছেলে এবং মায়ের গল্প কাঁদিয়েছিল অনেককেই। জানা যায়, ২০০২ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল পিঙ্কু। খেলাধুলা নিয়ে বাবা এবং মায়ের কাছে বকুনি খেয়ে বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে। ছেলেকে আর খুঁজে পায়নি সিংহ পরিবার।

প্রায় দুই যুগ পর উত্তরপ্রদেশের অমেঠী জেলায় দেখা মেলে হারানো পিঙ্কুর। গ্রামে গিয়ে তিনি নিজেই নিজের পরিচয় দিয়ে মায়ের খোঁজ করেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে খবর যায় দিল্লিতে। ছুটে আসেন সিংহ দম্পতি। মায়ের সঙ্গে দেখা হলে তাঁর কাছে ভিক্ষা চান সাধুবেশী পুত্র। ছেলের চেহারায় একটি দাগ দেখে তাঁকে চিনতে পারেন মা।

কিন্তু ছেলেকে আটকে রাখতে পারেননি রতিপাল। যুবক নিজেই মায়ের কাছ থেকে ভিক্ষা নিয়ে ফিরে গিয়েছেন। গ্রামবাসীরাও পিঙ্কুকে ভিক্ষা হিসাবে ১৩ কুইন্টাল খাদ্যশস্য দান করেছিলেন। তাঁর পিসি তাঁকে ১১ হাজার টাকা দিয়ে একটি মোবাইল ফোনও কিনে দেন। ১ ফেব্রুয়ারি মঠে ফিরে যান বলে জানান তিনি।

তার পরই প্রকাশ্যে আসে প্রতারণার গল্প। দিন দু’য়েক পরেই পিঙ্কু বাবাকে ফোন করে জানান, তিনি বাড়ি ফিরতে চান। তবে যে ধর্মীয় সংগঠনের আশ্রয়ে তিনি থাকেন, তারা তাঁকে ফেরানোর জন্য ১১ লাখ টাকা দাবি করছে। সেই টাকা দিলেই ঘরে ফিরতে পারবেন তিনি।

যা শুনে কেঁদে ওঠে মায়ের মন। রতিপাল প্রথমে এত টাকা দিতে রাজি ছিলেন না। তবে স্ত্রীর জোরাজুরিতে শেষ পর্যন্ত জমি বিক্রি করে টাকা জোগাড় করেন। ছেলেকে ফোনে জানান, টাকা জোগাড় হয়েছে, টাকা দিতে মঠে যাবেন তিনি। কিন্তু পিঙ্কুর তাতে আপত্তি ছিল। টাকাটা অনলাইনে পাঠানোর কথা বলেন। কেন রতিপালকে যেতে বারণ করছেন, তার পিছনে কিছু যুক্তিও দিয়েছিলেন পিঙ্কু। যদিও সেই যুক্তি রতিপালের কাছে বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। তার পরই পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, পিঙ্কুর পরিচয়ে যিনি সিংহ পরিবারে এসেছিলেন, তিনি আদৌ তাঁদের হারানো সন্তান নন। ঝাড়খণ্ডে যে মঠের সন্ন্যাসী হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি, সেটিও ভুয়ো। সেই নামে কোনও মঠই নেই। পুলিশের তদন্তে আরও উঠে আসে, সন্ন্যাসী বেশে যিনি সিংহ পরিবারে গিয়েছিলেন, তাঁর আসল নাম নাফিস। তিনি উত্তরপ্রদেশের গোন্ডা গ্রামের বাসিন্দা।

এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, নাফিস এবং তাঁর ভাই একই ভাবে প্রতারণা করেন। ২০২১ সালের জুলাই মাসে নাফিসের ভাই রাশিদ সন্ন্যাসী বেশে এক পরিবারের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা প্রতারণা করেছিলেন। সার্কল অফিসার অজয়কুমার সিংহ জানান, রতিপাল সিংহের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। যদিও এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fraud Monk Delhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE