Advertisement
১৩ জানুয়ারি ২০২৫

বাদল অধিবেশনের শুরু থেকেই সংসদ যেন রণাঙ্গন

সকালবেলাই বলে দেয় সারা দিনটি কেমন যাবে। সংসদের বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনেই আজ স্পষ্ট হয়ে গেল, এ বারের সংসদীয় অধিবেশন কার্যত সর্বভারতীয় রাজনীতির একটি রঙ্গমঞ্চে পরিণত হতে চলেছে। জমি বিল থেকে শুরু করে অন্য সব বিলের অনুমোদন আপাতত বিশ বাঁও জলে। মূল বিষয়টি হল, ললিত মোদীর বিস্ফোরক তথ্যের প্রেক্ষিতে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ইস্তফার দাবি।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ও অনমিত্র সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৫ ১২:২১
Share: Save:

সকালবেলাই বলে দেয় সারা দিনটি কেমন যাবে।

সংসদের বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনেই আজ স্পষ্ট হয়ে গেল, এ বারের সংসদীয় অধিবেশন কার্যত সর্বভারতীয় রাজনীতির একটি রঙ্গমঞ্চে পরিণত হতে চলেছে। জমি বিল থেকে শুরু করে অন্য সব বিলের অনুমোদন আপাতত বিশ বাঁও জলে। মূল বিষয়টি হল, ললিত মোদীর বিস্ফোরক তথ্যের প্রেক্ষিতে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ইস্তফার দাবি। সঙ্গে আছে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের ইস্তফার বিষয়টিও। কিন্তু যেহেতু তিনি একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, যেহেতু অরুণ জেটলির মতো আইনজ্ঞ মন্ত্রীরা জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিষয় সংসদে টেনে আনা যায় না। তাই কংগ্রেস-বাম তথা প্রতিপক্ষ শিবির আজ বসুন্ধরার ইস্তফা নিয়ে সে ভাবে সোচ্চার হয়নি। কংগ্রেস শিবিরের বক্তব্য, প্রথম সুষমাকে নিশানা করা হবে বলে দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিশানায় বসুন্ধরা বা মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান থাকলেও, এক সঙ্গে নিশানা না বানিয়ে এক এক করে বাকি বিজেপি নেতাদেরও নিশানা বানাবে দল।

সকালে বিজেপি সাংসদ দিলীপ সিংহ ভুরিয়ার মৃত্যুতে লোকসভা মুলতুবি করে দেওয়া হয়। কিন্তু রাজ্যসভা শুরু হতে না হতেই বিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে সরব হয়। কংগ্রেসের রাজ্যসভার দলনেতা আনন্দ শর্মা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা দাবি করেন। এক কথায় রাজি হয়ে যায় বিজেপি। কংগ্রেসের দাবি মেনে জেটলি যে ২৬৭ ধারায় আলোচনা মেনে নেবেন তা জোটলির কৌশলী পদক্ষেপ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। জেটলির চালে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে যাওয়া কংগ্রেস তখন পাল্টা কৌশলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার শেষে ভোটাভুটি দাবি করে। যা মানতে চায়নি শাসক শিবির। দাবি-পাল্টা দাবির মধ্যেই বারংবার মুলতুবি হয়ে যায় রাজ্যসভার অধিবেশন। আগামিকাল ফের বিষয়টি নিয়ে উভয় কক্ষেই সরব হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস শিবির। অরুণ জেটলি বলেন, ‘‘কংগ্রেস ও বাম আসলে আলোচনা চাইছে না। রাজ্যসভায় আলোচনার দাবি উঠেছিল। আমরা তা মেনে নিয়েছিলাম। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও সংসদের কাছে জবাব দিতে প্রস্তুত। বিরোধীরা যে ভোটাভুটির দাবি তুলেছে তা আসলে সভা পণ্ড করার উদ্দেশ্যেই করা হচ্ছে। মূল লক্ষ্যটি আলোচনা হয়। তা হল সংসদকে অচল করে দেওয়া।’’ বিজেপি ওই দাবি করলেও সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘টুজি কেলেঙ্কারির সময়ে ওই বিজেপি দল জেপিসি-র দাবিতে সরব ছিল। কংগ্রেস তাতে রাজি না হওয়ায় সে সময়ে সংসদের কাজ ভণ্ডুল করে দিয়েছিল বিজেপি। এখন সেই বিজেপি ভোল পাল্টালে হবে কী করে!’’

কংগ্রেস নেতারা বলছেন, এ কথা ঠিক, এটা শুধু আইন ও সংসদীয় রীতিনীতির প্রশ্ন নয়। বিষয়টি রাজনৈতিক। নরেন্দ্র মোদীর সবে এক বছর হয়েছে। ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন বিক্রি করেছিলেন তিনি। নরেন্দ্র মোদীর সরকার দাবি করেছিল ভ্রষ্টাচার-মুক্ত ভারত উপহার দেবে। কিন্তু এক বছরের মাথাতেই ললিত মোদীর বোমা বিস্ফোরণ অনেক প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। আর যে নরেন্দ্র মোদী ধারাবাহিক ভাবে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে নিজের কথা বলেন, এ ব্যাপারে এখনও তিনি মুখ খোলেননি। এখন চলছে কৌশল ও পাল্টা রণকৌশলের রাজনীতি। মনমোহন সিংহের জমানায় টু’জি, কমওয়েলথ কেলেঙ্কারির মতো বিষয়গুলির বিরুদ্ধে বিজেপি সরব হয়েছিল। আজ যদি কংগ্রেস সেই বিজেপি-র বিরুদ্ধে কলঙ্কলেপনের সুযোগ পায় তবে সে সুযোগ ছাড়বে কেন।

অন্য দিকে বিজেপি সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী না সুষমা স্বরাজের ইস্তফা দেওয়ার পক্ষে, না তিনি বসুন্ধরাকে ইস্তফা দিতে বলেছেন। কারণ, বিজেপির আশঙ্কা তাতে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যাবে। আজ যদি বসুন্ধরা-সুষমা ইস্তফা দেন তবে কি কাল থেকে কংগ্রেস সুবোধ বালক হয়ে যাবে, সংসদ চলতে দেবে? গত বারের বাজেট অধিবেশনের সময়ে দুর্নীতির ইস্যু ছিল না। তাও বিরোধীদের ঝামেলায় অধিবেশন চালাতে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল সরকারকে। আসলে বিরোধীরা সংসদ চালাতে দেবে না এটাই এটাই এখন দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া বিজেপি শিবির মনে করছে, ওই দু’জনকে ইস্তফা দিতে বললেও বিল নিয়ে আলোচনা কংগ্রেস শুরু করতে দেবে এমন নয়। বরং রক্তের স্বাদ পাবে বিরোধীরা। তখন মধ্যপ্রদেশ-মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীদের পাশাপাশি বেশ কিছু কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে টর্গেট করবে বিরোধীরা।

তাই আজ থেকে যেটা শুরু হল সেটা স্নায়ুর যুদ্ধ। এক দিকে কংগ্রেস-সিপিএম অন্য সব অ-বিজেপি রাজনৈতিক দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে সরকারকে ঘেরার রণকৌশল নিয়েছে। অন্য দিকে বিজেপি ইস্তফা না দেওয়ার কঠোর অবস্থান প্রধানমন্ত্রী নিয়ে রেখেছেন সেটা থেকে নরম অবস্থান নেবেন কি না তাই এখন দেখার।

গতকাল সবর্দলীয় বৈঠকে সুষ্ঠু পরিবেশে সংসদ চালানোর আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বেঙ্কাইয়া নাইডু, রাজনাথ সিংহ স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে গোটা পরিস্থিতি বিবৃত করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করেন সুষমা স্বরাজ ও বেঙ্কাইয়া নাইডু। প্রধানমন্ত্রী ফোন করেন সনিয়াকে। সকালে সংসদ শুরু হওয়ার আগে সংবাদমাধ্যমের সামনে নিজের বক্তব্যে, সংসদ ভাল ভাবে চলার প্রশ্নে আশা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে প্রথম থেকেই যুদ্ধং দেহি মনোভাবের পরিবর্তে আপাতত নরম অবস্থান নিয়ে এগনোর কৌশল নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।

অন্য বিষয়গুলি:

Rajya Sabha Sushma Raje Chouhan monsoon session Lalit Modi Lok Sabha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy