বিহারে ভোটার তালিকায় পরিমার্জনের ফলে প্রায় দু’কোটি ভোটারের নাম বাদ যেতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে বিরোধীদের। ওই সংখ্যক ভোটারের যদি ভোট দেওয়ার অধিকার চলে যায়, তা হলে অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট কী ভাবে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। তাঁর দাবি, ভোটার তালিকার বিশেষ পরিমার্জনের যে কাজ চলছে, অবিলম্বে তা বন্ধ করা হোক।
অন্য দিকে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এর মধ্যে বিহারের প্রায় ৮০ শতাংশ ভোটার ‘এনুমারেশন ফর্ম’ জমা দিয়েছেন। যোগ্য-অযোগ্যদের চিহ্নিত করে ভোটার তালিকা সংশোধন করতে সব ভোটারের এইন ফর্ম জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল দশটি বিরোধী রাজনৈতিক দল ও একাধিক সংগঠন। ওই মামলায় গতকাল সুপ্রিম কোর্ট গতকাল ভোটারদের সচিত্র পরিচয়পত্র, আধার কার্ড, রেশন কার্ড বিবেচনা করতে বলেছে নির্বাচন কমিশনকে। যাতে কোনও যোগ্য ব্যক্তি তালিকা থেকে বাদ না পড়েন। সুপ্রিম কোর্টের সেই বক্তব্যের সূত্র ধরেই আবেদনকারীদের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি দাবিকরেন, আগামী দিনে বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের ক্ষেত্রে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও রেশনকার্ডকে গ্রহণ করতে বাধ্য হবে কমিশন। তাঁর কথায়, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে কোনও পরিস্থিতিতেই আধার ভোটার ও রেশন কার্ডকে প্রত্যাখ্যান করা যাবে না।’’ সুপ্রিম কোর্ট গতকাল ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে কোনও স্থগিতাদেশ দিতে চায়নি। যা আসলে বিরোধীদের পরাজয় বলে দাবি করে কমিশনের পাশে দাঁড়ান বিজেপি নেতৃত্ব। আজ এ প্রসঙ্গে সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়নি বলে যে প্রচার চালানো হচ্ছে তা ঠিক নয়। শুনানি সবে শুরু হয়েছে। পরবর্তী শুনানি হবে ২৮ জুলাই। তারপরেই স্থগিতাদেশের বিষয়ে চূড়ান্ত রায় দেবে আদালত।’’
পাশাপাশি আইন পরিবর্তন না করে কী ভাবে নির্বাচন কমিশন কারও নাগরিকত্ব যাচাই করতে পারে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সিঙ্ঘভি। তিনি বলেন, ‘‘গোটা প্রক্রিয়াটি চালানো হচ্ছে শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক নির্দেশের মাধ্যমে। এর জন্য কোনও আইনে কোনও ধরনের পরিবর্তন করা হয়নি। অথচ আদালতের নির্দেশ রয়েছে যে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মানার পরেই কারও নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বিহারে নির্বাচন কমিশন সব ধরনের সুরক্ষাকবচ এড়িয়ে গিয়ে কাজ করছে। যা অন্যায়।’’
বিহারের ভোটার তালিকায় ৭.৯০ কোটি ভোটার রয়েছে। কমিশনের মতে, যে ৪.৯৬ কোটি ব্যক্তির নাম ২০০৩ সালে ভোটার তালিকায় ছিল, তাঁদের কোনও ধরনের প্রমাণ জমা দেওয়ার দরকার নেই। বিরোধীদের মধ্যে এই সংশোধনের ফলে প্রায় দু’কোটি ভোটারের নাম বাদ পড়তে চলেছে। আজ অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, ‘‘যদি দু’কোটি ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েন, সে ক্ষেত্রে সেই নির্বাচন নিরপেক্ষ ভাবে হয়েছে বলে কী ভাবে দাবি করতে পারে কমিশন?’’ বিরোধী নেতা কপিল সিব্বলের আবার অভিযোগ, ‘‘বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে চুক্তি হয়ে রয়েছে। বিজেপির লক্ষ্য হল সব রাজ্যে নির্বাচনে জয়। সেই কারণে মহারাষ্ট্রে ভোটার বাড়ানো হয়েছিল আর বিহারে ভোটার কমানোহচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের এই সংশোধনের মাধ্যমে ঘুরিয়ে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি চালু করার চেষ্টাকরেছে বিজেপি।’’
অন্য দিকে, বিজেপির বক্তব্য, এ দেশে ভোট দেওয়ার অধিকার কেবল ভারতীয়দের আছে। সকলেই জানে খোলা সীমান্ত থাকার সুবাদে নেপাল ও বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ গত কয়েক দশক ধরে ভারতে ঢুকে বিহারের বিভিন্ন জেলায় বসবাস করছে। সেই সব অবৈধ ভোটারদের চিহ্নিত করতেই ভোটার তালিকার সংশোধনে হাত দিয়েছে কমিশন। যাঁরা ভারতীয়,যাঁরা যোগ্য, তাঁদের বাদ দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)