Advertisement
E-Paper

বিহারের এই শিক্ষকের গল্প চোখে জল এনে দেবে

‘হিউম্যানস অব বম্বে’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপ পোস্টটি শেয়ার করেছে। সেখান থেকে জানা গিয়েছে, গরিব পরিবার থেকে উঠে আসা এক মেধাবী ছাত্রকে কী ভাবে আর্থিক দিক থেকে সহযোগিতা করে চিকিত্সক বানিয়েছেন ওই শিক্ষক।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:২২
শিক্ষকের সঙ্গে বরাবরই যোগাযোগ ছিল তাঁর প্রিয় ছাত্রের। তবে  ছবি: ‘হিউম্যানস অব বম্বে’ ফেসবুক গ্রুপের সৌজন্যে।

শিক্ষকের সঙ্গে বরাবরই যোগাযোগ ছিল তাঁর প্রিয় ছাত্রের। তবে ছবি: ‘হিউম্যানস অব বম্বে’ ফেসবুক গ্রুপের সৌজন্যে।

ছাই রঙা পাঞ্জাবি, লুঙ্গি পরে সিঁড়ির উপর বসে আছেন এক বৃদ্ধ। ফেসবুকে এমনই একটি ছবি ঘুরছে। সকলেই কুর্নিশ জানাচ্ছেন ওই বৃদ্ধকে। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছেন তিনি।

ওই বৃদ্ধ পেশায় এক জন শিক্ষক। বিহারের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বহু ছাত্রছাত্রীকে তিনি গড়ে তুলেছেন। যে কোনও শিক্ষকের এটাই তো বড় কর্তব্য। শিক্ষক হিসেবে ওই বৃদ্ধও তাই করেছেন। তবে শিক্ষকতার ঊর্ধ্বে গিয়ে তিনি যা করেছেন, গোটা শিক্ষক সমাজ আজ তাঁর জন্য গর্ববোধ করছে। শুধু শিক্ষক সমাজই নয়, ছাত্রসমাজও এই শিক্ষককে কুর্নিশ জানাচ্ছে।

‘হিউম্যানস অব বম্বে’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপ পোস্টটি শেয়ার করেছে। সেখান থেকে জানা গিয়েছে, গরিব পরিবার থেকে উঠে আসা এক মেধাবী ছাত্রকে কী ভাবে আর্থিক দিক থেকে সহযোগিতা করে চিকিত্সক বানিয়েছেন ওই শিক্ষক।

(আজকের তারিখে গুরুত্বপূর্ণ কী কী ঘটেছিল অতীতে, তারই কয়েক ঝলক দেখতে ক্লিক করুন— ফিরে দেখা এই দিন।)

পোস্টটি থেকে জানা গিয়েছে, ছেলেটি পড়ার জন্য ব্যাকুল ছিল। কিন্তু তাঁর সেই ইচ্ছায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল আর্থিক অনটন। ক্লাস নেওয়ার সময় ছাত্রটির প্রতিভা ওই শিক্ষকের নজরে আসে। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের পক্ষে ওই ছাত্রের পড়াশোনা চালানো তো দূর, স্কুলের পোশাক এবং খাতা-বই কিনে দেওয়ারও সামর্থ্য ছিল না। একটা প্রতিভা এ ভাবে নষ্ট হয়ে যাবে! মেনে নিতে পারেননি ওই শিক্ষক। নিজেই উদ্যোগী হয়ে ছাত্রটিকে পড়াশোনার প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে দেওয়া শুরু করেন। এ ভাবে কয়েকটা বছর কেটে গিয়েছিল। তত দিনে ওই ছাত্রের পরিবারের আর্থিক অবস্থা একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকে। পরিস্থিতি এমন হয় যে ফি দিতে না পারার জন্য স্কুল থেকে তাকে বার করে দেওয়ারও উপক্রম হয়। এ বারও ত্রাতা হিসেবে এগিয়ে আসেন ওই শিক্ষক। নিজের মাইনের টাকা থেকেই তাঁর অন্যতম প্রিয় ছাত্রের স্কুল ফি দেওয়া শুরু করেন। তিনি বলেন, “এমনটা নয় যে শিক্ষকতা করে আমারও যথেষ্ট আয় ছিল। কিন্তু পরিবার চালানোর মতো আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল। ওই ছাত্রটিকে সাহায্য করার সুযোগ যখন এসেই গেল, ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমানোর বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম।”

আরও পডুন: ‘তোতা’ আবার খাঁচাবন্দি, অলোক বর্মার অপসারণে কটাক্ষ কংগ্রেসের

স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে ঢোকার পরেও শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল প্রিয় ছাত্রের। তবে এ বার সে নিজেই উদ্যোগী হয়, স্কুলে ফি দিতে না পারার মতো ঘটনাকলেজেও যাতে না ঘটে। কলেজের ফি মেটানোর জন্য ঋণ নেয় সে। ওই শিক্ষক বলেন, “আমি ওকে বলেছিলাম, যখনই তোমার কোনও প্রয়োজন হবে, এসো। কিন্তু, ও কলেজের খরচ মেটাতে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করাও শুরু করে।”

আরও পডুন: ‘মনমোহন-চিত্রে’ দর্শক ডেকেও নিরাশ বিজেপি

পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেলে তার যে চিকিত্সক হওয়ার স্বপ্নপূরণ হবে না! তাই পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ চালিয়ে গিয়েছে সে। আজ ছেলেটি এক জন সফল চিকিৎসক। শিক্ষক বলেন, “আমার আজ বলতে গর্ব হচ্ছে যে ও আমার ছাত্র ছিল।”

এক জন সফল চিকিৎসক হয়েও শিক্ষকের ঋণ ভোলেননি তিনি। হাজার কাজের চাপের মধ্যেও তিনি শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। নিয়মিত তাঁর খোঁজ রাখেন। স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে শিক্ষক বলেন, “সেই অসহায় ছোট্ট ছেলেটা, যাকে স্কুল থেকে দেখেছি, আজ ও শহরের এক জন নামকরা ডাক্তার। ওঁর জীবন সফরের নৌকায় এক জন সওয়ারি হতে পেরে আমি গর্বিত।”

শিক্ষকের ওই অবদান এখন সকলের মুখে মুখে ঘুরছে। নেটিজেনদের মধ্যে এক জন এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন, “এক জন হয়তো গোটা বিশ্বকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না। কিন্তু এক জনের জগত বদলে দিতে পারে... আর সেই দৃষ্টান্তই উঠে এসেছে বিহারের এই শিক্ষকের হাত ধরে।”

(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরাবাংলা খবরপেতে পড়ুন আমাদেরদেশবিভাগ।)

Bihar Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy