বিচার নিয়ে ‘অযথা তাড়াহুড়ো’ করায় একটি মামলায় নিম্ন আদালতের কড়া সমালোচনা করল সুপ্রিম কোর্ট। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে অপহরণ, ধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার ওই মামলায় নিম্ন আদালত দোষীদের ২ মাসের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়। শীর্ষ আদালতের বক্তব্য, ডিএনএ রিপোর্ট যে বিশেষজ্ঞেরা তৈরি করেছেন তাঁরা সাক্ষ্য দেননি। ফলে এ ক্ষেত্রে সুবিচার হয়নি।
মামলাটি ফের বিচারের জন্য নিম্ন আদালতে ফেরত পাঠিয়েছে বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি সঞ্জয় কারোল ও বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে অপহরণ, গণধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার ওই মামলায় ১২ বছরের কম বয়সি মেয়েকে গণধর্ষণের ধারায় মৃত্যুদণ্ড হয় দোষীদের। সেই রায় বহাল রাখে হাই কোর্টও। দোষীরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। তাদের আইনজীবীরা ফরেন্সিক পরীক্ষার সম্পূর্ণ নথি ও বিশেষজ্ঞ সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়ার আবেদন জানান। সম্পূর্ণ নথি খতিয়ে দেখে শীর্ষ কোর্টের বক্তব্য, “ডিএনএ প্রোফাইলিং রিপোর্টের উপরেই গোটা মামলাটা দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু সেই রিপোর্ট যে বিশেষজ্ঞেরা তৈরি করেছেন তাঁদের কারও সাক্ষ্য নেয়নি সরকার পক্ষ। এটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন আসামির পক্ষের আইনজীবীরা।”
কয়েকটি রায়ের কথা উল্লেখ করে শীর্ষ কোর্ট জানায়, ওই বিশেষজ্ঞদের সাক্ষ্য না নেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। মামলা নিম্ন কোর্টে ফের বিচারের জন্য ফেরত পাঠিয়ে শীর্ষ কোর্ট জানায়, দোষীদের নিজেদের আইনজীবী না থাকলে শীর্ষ কোর্টের রায় মেনে তাঁদের জন্য আইনজীবী নিয়োগ করতে হবে। আনোখিলাল বনাম মধ্যপ্রদেশের মামলায় শীর্ষ কোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছিল, যে মামলায় মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সম্ভাবনা আছে, তাতে অন্তত ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আইনজীবীকেই লিগ্যাল সার্ভিসের মাধ্যমে অভিযুক্তদের আইনজীবী বা আদালতবান্ধব নিয়োগ করা যাবে।
বর্তমানে নানা মামলায় যখন দ্রুত বিচারের দাবি উঠছে তখন এই রায় তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত প্রবীণ আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর কথায়, “চার্জশিট হল বিচারের শুরু। ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে না পারলে অভিযুক্তের জামিন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এখন অনেক ক্ষেত্রেই তদন্তকারী সংস্থার উপরে অভিযুক্তের জামিন না পাওয়া নিশ্চিত করার চাপ থাকে। ফলে দ্রুত চার্জশিট পেশ করতে হয়। অন্য দিকে এখন তদন্তকারীদের মুখে হেফাজতে রেখে বিচারের (কাস্টডি ট্রায়াল) কথা শোনা যাচ্ছে। ফলে চার্জশিট পেশের সময়ে জামিন পাওয়ার অধিকার থেকে অভিযুক্ত বঞ্চিত হচ্ছে।”
আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতার মতে, “দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে গিয়ে যদি সাক্ষ্যপ্রমাণ ঠিক ভাবে পেশ না করা হয় তবে সুবিচার হয় না। নিম্ন আদালতে যদি মামলার ভিত্তি ঠিক না থাকে তবে উচ্চ আদালতে রায় বদল হতেই পারে। এই রায়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট দিগ্নির্দেশ করেছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)