Advertisement
E-Paper

পান্ডা বনাম প্রশাসনের দ্বন্দ্বে দীর্ণ শ্রীক্ষেত্র

গত শুক্রবার বিকেলেই সরকারি কর্তারা বাংলা, হিন্দি, ওড়িয়া, তেলুগু, ইংরেজিতে ‘মন্দিরে কাউকে টাকা দেবেন না, কারও কাছে টাকা নেবেন না’-এই মর্মে ঘোষণা চালু করতে বলেছিলেন। শ্রী মন্দিরে সে-বার্তা কানে আসেনি।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৮ ০৩:০৪
সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশকে হাতিয়ার করেই মন্দিরে সেবায়েতদের সঙ্গে টাকার লেনদেন বন্ধ করতে মরিয়া মুখ্য প্রশাসক।

সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশকে হাতিয়ার করেই মন্দিরে সেবায়েতদের সঙ্গে টাকার লেনদেন বন্ধ করতে মরিয়া মুখ্য প্রশাসক।

মাসখানেক আগে জগন্নাথ মন্দিরে কয়েক জন মরাঠি ভক্ত বেধড়ক মার খাওয়ার অভিযোগে নড়ে বসেছিল প্রশাসন। দক্ষিণার দাবিতে গর্ভগৃহের সেবায়েত খুটিয়া, ভাণ্ডার মেকাপেরা তাঁদের পিটিয়ে হাতের সুখ করে নেন। এর পরেই গর্ভগৃহ লাগোয়া তল্লাটে সিসি টিভি বসানোর জেদ ধরেন মন্দিরের মুখ্য প্রশাসক প্রদীপকুমার জেনা। সেবায়েতদের একাংশের আপত্তি এড়িয়ে পাঁচটি বাড়তি সিসি টিভি বসেওছে সেখানে।

এই পটভূমিতে জগন্নাথ মন্দিরে ‘পান্ডারাজ’ বন্ধ করে ভক্তদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যের পরিবেশ গড়ে তুলতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশকে হাতিয়ার করেই মন্দিরে সেবায়েতদের সঙ্গে টাকার লেনদেন বন্ধ করতে মরিয়া মুখ্য প্রশাসক।

কিন্তু এই চেষ্টা কত দূর সফল হবে, প্রশ্ন থাকছে। যেমন, গত শুক্রবার বিকেলেই সরকারি কর্তারা বাংলা, হিন্দি, ওড়িয়া, তেলুগু, ইংরেজিতে ‘মন্দিরে কাউকে টাকা দেবেন না, কারও কাছে টাকা নেবেন না’-এই মর্মে ঘোষণা চালু করতে বলেছিলেন। শ্রী মন্দিরে সে-বার্তা কানে আসেনি। রত্নভাণ্ডারের চাবির অন্তর্ধানে চাপে রয়েছে মন্দির প্রশাসন তথা ওড়িশা সরকার। তার উপরে সামনে রথ! সর্বোচ্চ আদালত যা-ই বলুক, এখনই সেবায়েতদের সঙ্গে মন্দির প্রশাসন কতটা লড়বে তা নিয়ে অনেকেই সংশয়ে। তবে ৩০ জুন সুপ্রিম কোর্টের কাছে জেলা জজের রিপোর্টে মন্দির প্রশাসনের খামতির দিকগুলি নিয়ে খোলা মনেই তথ্য দিচ্ছেন সরকারি কর্তারা। সর্বোচ্চ আদালত তিরুপতি বা সোমনাথ মন্দিরের পরিচালন ব্যবস্থা থেকে শিক্ষা নিতে বললেও পুরীর মন্দিরে তার প্রয়োগ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সন্দেহ রয়েছে।

দুনিয়ার অন্যতম বিত্তশালী ঈশ্বর তিরুপতির থানে সব সোনাদানা হুন্ডিতেই জমা হয়। জগন্নাথ মন্দিরেও হুন্ডির বন্দোবস্ত রয়েছে। কোর্ট বলছে, সেখানেই সব প্রণামী জড়ো হোক। তবে ভক্ত বা সেবায়েতদের একাংশে তাতেও আপত্তি। মন্দিরের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, মেদিনীপুরের ভক্তদের পান্ডা রামচন্দ্র দয়িতাপতিই বলছেন, ‘‘গয়ার মতো পুরীতেও পান্ডাকে দক্ষিণা না দিলে অনেক ভক্তই পুণ্যকাজে ফাঁক থাকল মনে করেন!’’ মিজোরামের অ্যাডভোকেট জেনারেল জগন্নাথ-গত-প্রাণ বিশ্বজিত দেবেরও কথা, ‘‘আইন যা-ই বলুক, ভক্ত যদি দর্শন করানো, ভোগ এনে দেওয়ার জন্য পান্ডাকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কিছু দিতে চান, তার কী হবে?’’

এখানেও তিরুপতির সঙ্গে পার্থক্য। তিরুপতি চালান বেতনভুক কর্মচারীরা। জগন্নাথধামে সব বংশানুক্রমিক সেবায়েত। ১৯৬০-এ ওড়িশা সরকার মন্দির প্রশাসনের দায়িত্ব নেয়। তারাও সেবায়েতদের মাইনে দেয়। এই দু'নৌকায় পা নিয়েও প্রশ্ন। আবার কারও মতে, সেবায়েতরা জগন্নাথ-সংস্কৃতির অঙ্গ। রামচন্দ্র দয়িতাপতি বলছেন, ‘‘সেবায়েত ছাড়া মন্দির তো টুরিস্ট স্পট!’’

কিন্তু পুজো দেওয়ানোর নামে তোলাবাজির অভিযোগও বাস্তব। সেবায়েতদের অফিসঘর বা নিজোগে ৫১ টাকাতেও পুজো সারার বন্দোবস্ত আছে! কিন্তু পান্ডাদের কড়া সেলসম্যানশিপ হাজার-হাজার টাকা উসুল করতে জানে। জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার আলাদা পুজো, ভাল ভাবে দর্শন— মধ্যবিত্ত দরেও ৫-৬ হাজার টাকার ধাক্কা। পালাপার্বণ অনুযায়ী ভক্তের বিশ্বাসে সুড়সুড়ি দিয়ে মন্দির-চত্বরে নানা কিসিমের পসরা বসে। জগন্নাথের কাপড়ের টুকরো, প্রভুর জ্বরের পথ্যি, ব্রহ্মবস্তুর ফুল বা রথের কাঠ— সবই ভক্তের কাছে মহার্ঘ। কৌশলে মন্দিরে চটজলদি ব্রাহ্মণভোজনের পুণ্যের টোপও মজুত। মুখ্য প্রশাসক বলছেন, ‘‘একটু সময় লাগলেও, সব বন্ধ করব। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, মন্দির ভক্তবন্ধু করে তোলারই জরুরি পদক্ষেপ।’’

Jagannath Temple Puri Ratna Bhandar পুরী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy