Advertisement
E-Paper

তেতে উঠছে তামাম বিশ্ব, বঙ্গের দোষ কী

শীতের দেখা সে ভাবে মিলছে না বলে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় হা-হুতাশের শেষ নেই। কিন্তু শুধু এ তল্লাটকে দোষ দিলে কি চলবে?বিজ্ঞানীরা বলছেন, চলবে না। বলতে গেলে গোটা দুনিয়ায় ইদানীং গরম হাওয়া বইছে। কাশ্মীর, হিমাচল, উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে টানা বরফ পড়ছে ঠিকই।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৫

শীতের দেখা সে ভাবে মিলছে না বলে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় হা-হুতাশের শেষ নেই। কিন্তু শুধু এ তল্লাটকে দোষ দিলে কি চলবে?

বিজ্ঞানীরা বলছেন, চলবে না। বলতে গেলে গোটা দুনিয়ায় ইদানীং গরম হাওয়া বইছে। কাশ্মীর, হিমাচল, উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে টানা বরফ পড়ছে ঠিকই। কানাডা ও লাগোয়া মার্কিন মুলুকের কোথাও কোথাও জমাটি ঠান্ডা যথারীতি জাঁকিয়ে বসেছে। তবে সার্বিক ছবিটা খুঁটিয়ে দেখে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া স‌ংস্থা (ডব্লিউএমও) জানাচ্ছে, গরমের দিকেই পাল্লা ভারী। উষ্ণতায় নয়া নজির গড়ে ফেলেছে ২০১৬ সাল।

ডব্লিউএমও-র তথ্য মোতাবেক, ২০১৪-য় পৃথিবীর গড় উষ্ণতা রেকর্ড গড়েছিল। যা ভেঙেছিল ২০১৫। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ ও আবহাওয়া গবেষণা সংস্থা ‘নোয়া’র বিজ্ঞানীদের সমীক্ষায় পরিষ্কার, আগের দু’বছরের রেকর্ড ভেঙে ২০১৬ আপাতত উষ্ণ-তালিকায় সবার উপরে। নাসার দাবি: ২০১৩ থেকে ২০১৬— এই তিন বছরে ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে আধ ডিগ্রি ফারেনহাইট। ১৮৮০ ইস্তক পর পর তিন বছরে এমন বৃদ্ধির নমুনা আগে দেখা যায়নি।

গরমে গন্ডগোল

• বদলে যাবে জলবায়ুর চেহারা

• হিমবাহ গলে জল হবে

• সাগরতল উঁচু হবে দিন দিন

• ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে প্রাণান্ত

• উপকূলীয় জীবনে বিপর্যয়

• পরজীবীবাহিত রোগের দাপট

এই দাবির সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করছে নোয়া’র সমীক্ষা। তার বক্তব্য: ১৯৩৯, ১৯৪০, ১৯৪১— এই তিন বছরেও পৃথিবীর তাপমাত্রা অনেকটা বেড়েছিল। কিন্তু গত তিন বছরের তুলনায় তা নস্যি। বস্তুত ১৯৪১-এ বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির বহর দেখে গেল গেল রব উঠলেও রেকর্ড-তালিকায় ১৯৪১ এখন ৩৭তম!

উষ্ণায়নের সঙ্কট কতটা গভীর, এতেই তার প্রমাণ। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রায় ‘সামান্য’ এই আধ ডিগ্রি ফারেনহাইট উত্থানের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এতে বিশ্ব জুড়ে আবহাওয়া দ্রুত পাল্টে যেতে পারে। হিমবাহ বেশি বেশি গলে গিয়ে বাড়িয়ে দিতে পারে সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা। বিভিন্ন ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়া অতিসক্রিয় হয়ে মহামারি ডাকতে পারে। কোথাও ভয়াবহ বন্যা, কোথাও বা ভয়ঙ্কর খরা বিপর্যস্ত করে দিতে পারে জনজীবন।

পৃথিবী এ ভাবে গরম হচ্ছে কেন?

চলতি শতকের গোড়া থেকে এর উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত পরিবেশবিদ ও আবহবিজ্ঞানীরা। তাঁদের বড় অংশের পর্যবেক্ষণ— দূষিত গ্যাস ও কার্বন নিঃসরণ যে ভাবে তুঙ্গে উঠছে, তাতে এটা অনিবার্য। বস্তুত উষ্ণ বছরের তালিকায় প্রথম ১৭-র মধ্যে ১৬টিই চলতি শতকের!

উষ্ণতাবৃদ্ধির বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিবেশ গবেষণা সংস্থা আইপিসিসি-ও। এবং বিজ্ঞানীদের হুঁশিয়ারি যে নিছক কথার কথা নয়, তার ইঙ্গিতও মজুত। যেমন ভারতে বর্ষার চরিত্রবদলের নেপথ্যে বিশ্ব উষ্ণায়নেরই হাত দেখছেন অনেকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞানের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক তপনকুমার জানার কথায়, ‘‘জলবায়ু বদলাচ্ছে কি না, তা সবচেয়ে ভাল বোঝা যায় বর্ষার হাল-চাল দেখে। তাপমাত্রা এমন বাড়তে থাকলে বর্ষার চরিত্র আপাদমস্তক বিগড়ে যাবে।’’ দিল্লির মৌসম ভবনের এক আবহবিজ্ঞানীর মন্তব্য, ‘‘বর্ষা ঢুকছে দেরি করে। জুন-জুলাইয়ে তেমন হচ্ছে না। এ সব জলবায়ুতে বড় ধরনের পরিবর্তনেরই আভাস।’’

দেখতে হবে, তেতে ওঠা এ হেন আবহে ২০১৭ কিছুটা শীতল স্পর্শ দিতে পারে কি না।

Winter Cold Hot WMO
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy