Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চাচা-ভাতিজার দেখা, তবু চোরাস্রোত

ঘরোয়া নাটকে এ বার নতুন দৃশ্য। মুখোমুখি বসলেন যুযুধান দুই চরিত্র। চাচা ও ভাতিজা। বিরোধী কটাক্ষ সামলাতে প্রকাশ্যে আস্থার বার্তাও দিলেন। তবু নেপথ্যে ‘পালোয়ান’দের লড়াই থেমেও থামছে না যদুকুলের দঙ্গলে।

অখিলেশ যাদব

অখিলেশ যাদব

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৫৮
Share: Save:

ঘরোয়া নাটকে এ বার নতুন দৃশ্য। মুখোমুখি বসলেন যুযুধান দুই চরিত্র। চাচা ও ভাতিজা। বিরোধী কটাক্ষ সামলাতে প্রকাশ্যে আস্থার বার্তাও দিলেন। তবু নেপথ্যে ‘পালোয়ান’দের লড়াই থেমেও থামছে না যদুকুলের দঙ্গলে।

যৌবনে কুস্তিগির ছিলেন মুলায়ম সিংহ। এখনও ‘পহেলবান’ নামেই তাঁকে ডাকে উত্তরপ্রদেশের বেশ কিছু এলাকা। তাঁর কৌশলী প্যাঁচেই আপাতত প্রকাশ্য বিবাদ চাপা পড়েছে সমাজবাদী পার্টি পরিবারে। কাকা শিবপালের থেকে কেড়ে নেওয়া সিংহভাগ মন্ত্রক আবার তাঁকেই ফিরিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। দলের ভারও থাকছে শিবপালের হাতেই। কিন্তু একই সঙ্গে আবার তৈরি হয়ে চলেছে টানাপড়েনের নিত্যনতুন ক্ষেত্রও।

সভাপতি হিসেবে ভোটের টিকিট বণ্টনের ভার থাকার কথা শিবপালের হাতে। কিন্তু অখিলেশ চান, তাঁকে না জানিয়ে একটি টিকিটও যেন দেওয়া না হয়। সেই কারণেই এ বার রাজ্যের সংসদীয় বোর্ডের প্রধান হতে চেয়ে বাবার উপরে চাপ বাড়িয়ে চলেছেন তিনি। শোনা যাচ্ছে, শিবপাল মেনে নিলে সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতেও রাজি মুলায়ম।

প্রশ্ন হল, নিজের ছেলে অখিলেশের বদলে শিবপালকে কেন এতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন সপা-র ‘নেতাজি’?

ঘনিষ্ঠ মহলে মুলায়ম আজ বলেছেন, সমাজবাদী পার্টিটাই তিনি গড়ে তুলেছেন দুই ভাই শিবপাল এবং রামগোপাল যাদবের সাহায্যে। এই প্রসঙ্গে কেউ কেউ মনে করাচ্ছেন পুরনো এক ঘটনার কথা। মুলায়ম তখন অসুস্থ। সারা দেশের নেতারা

তাঁর খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। অথচ অখিলেশ বাবাকে দেখতে এসেছিলেন সবার শেষে। সেই ঘটনায় ‘নেতাজির’ কিছুটা অভিমান হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে তিনি ছেলেকে বসিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু দল চালানো ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করার ক্ষেত্রে ‘তরুণ’ অখিলেশের চেয়ে ‘অভিজ্ঞ’ শিবপালের বিচারবুদ্ধির উপরে তাঁর ভরসা যে কিছুটা হলেও বেশি, সেই বার্তা তিনি এ বার দিয়েছেন।

আর শিবপালের এই বাড়তি গুরুত্বটাই অখিলেশের ক্ষোভের কারণ। যার প্রভাব পড়েছে অনুগামীদের মধ্যেও। আজ সকালেই অখিলেশ আর শিবপালের সমর্থকেরা রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন। তা দেখে মুলায়ম ফের দু’জনের সঙ্গেই বৈঠক করেন। তার পর শিবপালের সঙ্গে দেখা করতে যান অখিলেশ। এবং বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যাইনি। কাকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমি ছোটবেলা থেকেই নানা ধরনের খেলা খেলি। সেল্ফ-গোল আমি করব না। দলের সভাপতি শিবপাল যাদবকে পূর্ণ সমর্থন করব।’’ সপা-র কলহ নিয়ে বিরোধীদের ফায়দা তোলা রুখতে দলের কর্মীদেরও শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।

কিন্তু মুখে এ কথা বলেও বাবার কাছে অখিলেশ চেয়েছেন টিকিট বণ্টনের রাশ। বলেছেন, ‘‘এটা কোনও অন্যায় নয়। কে কে টিকিট পাবেন, তা দেখার অধিকার কি আমার নেই?’’ অখিলেশ শিবিরের বক্তব্য, মায়াবতীর বসপা থেকে বেরোনো কিছু নেতা আগেই অভিযোগ করেছেন, ভোটের টিকিট পাওয়া নিয়ে উত্তরপ্রদেশের সব দলেই কমবেশি টাকার খেলা চলে। অখিলেশ চান, তাঁর দলে যেন এই ধরনের জলঘোলা না হয়।

শিবপাল অবশ্য দলের সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে সংগঠনের আমূল পরিবর্তনের ছক কষে ফেলেছেন। মুলায়মের কাছে সেই তালিকা নিয়ে রদবদলের প্রক্রিয়া শুরুও করে দিয়েছেন। এবং কৌশলে বার্তা দিতে চেয়েছেন, পালোয়ানদের লড়াইয়ে ভাইপোকে কুপোকাত করেছেন তিনি। এখনও তিনিই মুলায়মের সব থেকে আস্থাভাজন ব্যক্তি।

এ বার ‘খেলোয়াড়’ অখিলেশের চাল দেওয়ার পালা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Akhilesh yadav Samajwadi party mulayam singh yadav
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE