Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
উরি হামলা

গাফিলতি ছিল, মানছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী

উরির সেনাছাউনির নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গাফিলতির কথা মেনে নিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। দিল্লিতে আজ একটি অনুষ্ঠানে উরি প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘কোথাও তো ভুল-ত্রুটি ছিল। আমি এ নিয়ে বিশদে কিছু বলতে চাই না। কারণ এটি সংবেদনশীল বিষয়।’’

উদ্বেগ। দিল্লিতে মনোহর পর্রীকর। ছবি: পিটিআই।

উদ্বেগ। দিল্লিতে মনোহর পর্রীকর। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৮
Share: Save:

উরির সেনাছাউনির নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গাফিলতির কথা মেনে নিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। দিল্লিতে আজ একটি অনুষ্ঠানে উরি প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘কোথাও তো ভুল-ত্রুটি ছিল। আমি এ নিয়ে বিশদে কিছু বলতে চাই না। কারণ এটি সংবেদনশীল বিষয়।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘যখন কোনও কিছুতে ভুল হয়, তখন সকলেরই লক্ষ্য থাকে যাতে সেটা দ্বিতীয় বার না হয়। কোথায় ভুল হয়েছে, তা প্রথমে খুঁজে বের করব। তার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব যাতে এর পুনরাবৃত্তি না হয়।’’

উরির ঘটনার তদন্তে নেমে শুরু থেকেই গোয়েন্দারা মনে করছেন, অন্তর্ঘাতের কারণেই কার্যত বিনা প্রতিরোধে জঙ্গিরা ভিতরে ঢুকতে পেরেছিল। ছাউনিতে থাকে বা যাতায়াত করে— এমন কেউ সাহায্য করেছে জঙ্গিদের। সেই সাহায্যকারী কে বা কারা তার খোঁজ চলছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, সেনাছাউনির পিছনের দিকে দু’টি জায়গায় লোহার তারজালি কেটে ভিতরে ঢুকেছিল চার জঙ্গি। এর পর কী ভাবে ১৫০ মিটার ভিতরে কোনও বাধা ছাড়াই ঢুকে গেল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সে দিন ছাউনিতে ঢুকে নিরাপত্তারক্ষীদের ঘায়েল করে একেবারে বেছে বেছে হামলা চালায় জঙ্গিরা। অফিসারদের মেস ছাড়াও অস্থায়ী তাঁবুতে থাকা সেনারা ছিল মূল নিশানা। যাতে তাঁরা তাঁবুর বাইরে বের হতে না পারেন, সেজন্য পরিকল্পিত ভাবে গ্রেনেড ছুঁড়ে ডিজেল ভাণ্ডারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জঙ্গিদের রক্তের নমুনা ও ডিএনএ স্যাম্পেল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। জঙ্গিদের থেকে যে সব কালাশনিকভ উদ্ধার হয়েছে, তা কোন দেশে বানানো সেই ছাপ অনুপস্থিত বলে জানিয়েছে এনআইএ। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, ওই ছাপ ঘষে তুলে দেওয়া হয় যাতে পাকিস্তানের দিকে আঙুল তোলা না যায়। তবে জঙ্গিদের থেকে উদ্ধার হওয়া খাবার, ওষু‌ধ, সিরিঞ্জ পাকিস্তানে তৈরি। পঠানকোট, উধমপুর আর উরি— সবক’টি জঙ্গি হামলাতেই জঙ্গিরা একই ধরনের কিট ব্যবহার করছে বলে দেখা গিয়েছে। জঙ্গিদের থেকে হ্যান্ডসেটটি পাওয়া গিয়েছে সেই ধরনের একটি হ্যান্ডসেট গত জুলাই মাসে ধৃত জঙ্গি বাহাদুর আলির কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। যার সঙ্গে লস্কর-ই-তইবার কন্ট্রোল রুম আলফা-থ্রির সরাসরি যোগাযোগ ছিল। এই তথ্যপ্রমাণের বিষয়ে কথা বলতে আজ ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার আবদুল বাসিতকে ডেকে পাঠান বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর। পাকিস্তান কী ভাবে জঙ্গিদের মদত দিচ্ছে সেই তথ্য তুলে ধরা হয় বাসিতের কাছে। জয়শঙ্কর বসিতকে জানান, উরির হামলায় সন্ত্রাসবাদীদের শরীর থেকে উদ্ধার হওয়া জিপিএস থেকে কোথায়, কোন সময় তারা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ঢুকেছে, তা জানা গিয়েছে। তাদের ব্যবহৃত গ্রেনেড, কমিউনিকেশন ম্যাট্রিক্স, খাবার, ওষুধ ও জামাকাপড়ে পাকিস্তানের ছাপ উদ্ধার হয়েছে। পাকিস্তান সন্ত্রাসের তদন্ত করতে চাইলে ভারত উরি ও পুঞ্চে নিহত জঙ্গিদের আঙুলের ছাপ, ডিএনএ নমুনা তাদের হাতে তুলে দিতে পারে।

পাকিস্তানকে কী ভাবে জবাব দেওয়া হবে— তা নিয়ে আজও মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি আলোচনায় বসে। পরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মন্তব্য করেন, ‘‘আমরা সব সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন অপরাধীরা শাস্তি পাবেই। এটা কথার কথা নয়। একে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ ভারত হামলা চালালে পাকিস্তান পরমাণু শক্তি ব্যবহার করতে পারে বলে ইসলামাবাদ যে হুমকি দিয়েছে তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি পর্রীকর। বলেন, ‘‘শূন্য পাত্রই আওয়াজ করে বেশি।’’

সন্ধ্যেয় শীর্ষ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন মোদী। পরশু থেকে কোজিকোড়ে শুরু হচ্ছে বিজেপির জাতীয় পরিষদের বৈঠক। তাই এই বৈঠকে হাজির ছিলে দলের সভাপতি অমিত শাহও। উরির ঘটনার পরে বিজেপির মধ্যেও দাবি উঠেছে পাকিস্তানকে পাল্টা জবাব দেওয়ার। এই পরিস্থিতিতে জবাব কী হবে— তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Manohar parrikar Uri Terrorism Security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE