মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথা কেটে এনে দিলে তিনি ১১ লাখ টাকা পুরস্কার দেবেন। প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য করেছেন বিজেপি-র যুব মোর্চার এক নেতা যোগেশ ভার্সনে। তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথা কেটে আনা ব্যক্তিকে আমি ১১ লাখ টাকা পুরস্কার দেব।’’ এর পরেই নিন্দার ঝড় বয়ে যায় লোকসভা থেকে রাজ্যসভা— সর্বত্র। প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলই এই মন্তব্যের নিন্দা করেছে। মমতার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করায় কে কী বললেন?
আরও পড়ুন
মমতার মাথা কেটে আনলে ১১ লাখ টাকার পুরস্কার, ঘোষণা বিজেপি নেতার
মাথা কাটার হুমকি ঘিরে উত্তাল রাজ্যসভা, তুমুল বিতণ্ডায় মায়া-জয়া-রূপা
পার্থ চট্টোপাধ্যায় (তৃণমূলের মহাসচিব): ৯০-এর দশক থেকে মমতাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমরা ৭০-এর রাজনীতি দেখেছি। ৩৪ বছরের বাম শাসন দেখেছি। এখন দিল্লি/আলিগড়ে বসে কেউ কেউ বড় বড় বুলি আওড়াচ্ছেন। রাজনীতিতে এই সব কথা বলার জায়গা নেই। ওঁকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা উচিত। আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে বলব, অবিলম্বে পদক্ষেপ করার জন্য। আমাদের লাখ লাখ কর্মী তৈরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাহায্য করার জন্য। এরা আবার ৭০ দশকের রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে চাইছে।
দিলীপ ঘোষ (রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি): বিজেপি এই ধরনের রাজনীতি করে না। রাজনীতিতে এই ধরনের পাগলামি চলে না। আমি এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করছি। ফতোয়ার এই সংস্কৃতি তো তৃণমূলই আমদানি করেছে। ইমাম বরকতি যখন প্রধানমন্ত্রীকে ফতোয়া দেন, তখন তো তৃণমূল কিছু বলে না। সেটাও দেখা উচিত।
তুষার ঘোষ (বিজেপি যুব মোর্চার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি): আমরা তো ওঁকে তো চিনি-ই না। কাজেই ওঁর এই হিংস্র মন্তব্যের দায় কেন নেব?
মহম্মদ সেলিম (সিপিএম সাংসদ): দুর্ভাগ্যজনক ভাবে মাথা কেটে নেওয়ার হুমকি, খুন করার হুমকি, হিংসাত্মক রাজনীতির প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। ক’দিন আগেই কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারায়ি বিজয়নের মাথার দাম ঘোষণা করেছিল আরএসএস। তিন লক্ষ কমিউনিস্টের মাথা কেটে আনার জন্যও পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। একই ভাবে এ বার বিজেপি-র এক নেতা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীরও মাথার দাম ঘোষণা করলেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নিজে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করুন, এটাই চাইব। কারণ এই খুনোখুনির রাজনীতি বন্ধ হওয়া দরকার। কিন্তু আশ্চর্য হচ্ছি, বিজেপি কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাথার দাম ঘোষণা করতে গেল! উনি নিজেই তো সারদা-নারদ থেকে বাঁচতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে মাথা নত করে এসেছেন। আরএসএস-ও চায় বাংলায় মমতাই থাকুন। এক ভুঁইফোঁড় নেতা তাঁর মাথা কাটার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করলেন কেন বুঝতে পারছি না।
সৌগত রায় (তৃণমূল সাংসদ): তৃণমূল-সহ প্রতিটি দল এই ঘটনার প্রতিবাদ করবে আশা করি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভার প্রাক্তন সদস্য ছিলেন। তৃণমূল স্তর থেকে উঠে এসে আজ তিনি একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। দলমত নির্বিশেষে এই ঘটনার নিন্দা করা উচিত।
রূপা গঙ্গোপাধ্যায় (সাংসদ): আমি নিজে পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের উপস্থিতিতে একাধিক বার আক্রান্ত হয়েছি। পুলিশ দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) নিজেই মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে জানেন না। আমাকে তৃণমূলের অসংখ্য গুন্ডা ঘিরে ধরে আক্রমণ করেছে। সেই ঘটনারও প্রতিবাদ হওয়া উচিত।
সুখেন্দুশেখর রায়: এই ঘটনার নিন্দা করা উচিত সকলের। শাসক দল ধর্মের নামে পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশে একটা ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করতে চাইছে। এই প্রবণতা বন্ধ না হলে গণতন্ত্রে সমূহ বিপদ আসতে চলেছে।
সুজন চক্রবর্তী (বাম পরিষদীয় নেতা): কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারায়ি বিজয়নকে একটা ফতোয়া দিয়েছিল এই শক্তি। তখন তৃণমূল মুখ খোলেনি। কিন্তু, আমরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন হুমকির কঠোরতম নিন্দা করছি। উনি নিজেই এই শক্তির প্রতিনিধিদের রাষ্ট্রপতি পদে দেখতে আপত্তি নেই বলেছিলেন। যারা বাবরি ভেঙেছিল, তারা কী ভয়ঙ্কর শক্তি, সেই বিপদ মুখ্যমন্ত্রী কবে বুঝবেন জানি না।
প্রদীপ ভট্টাচার্য (কংগ্রেস সাংসদ): এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করছি। কোনও রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী সম্পর্কে মন্তব্যে করার সময় ভেবেচিন্তে কথা বলা উচিত। এই জ্ঞান না থাকলে রাজনীতি করা উচিত নয়। আমার সঙ্গে বহু ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু, আমাকে মনে রাখতে হবে তিনি একটি রাজ্যের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। এই আক্রমণ ব্যক্তিকে আঘাত করে না, সরাসরি পদটিকেই আঘাত করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy