তথাকথিত চাকচিক্যহীন পরিবহণের মাধ্যম অটো। মূলত পকেট বান্ধব আর দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছনোর মাধ্যম হিসেবেই এর জনপ্রিয়তা। এক ঘণ্টারও কম সময়ের এই যাত্রাপথকে সীমিত যাত্রীদের নিয়ে উন্নত করার কথা ভাবলেন কী ভাবে? আর সব অটো ছেড়ে তাঁর অটোতে ওঠার চাহিদা-ই বা বেশি কেন? বক্তৃতা বা আলোচনার মঞ্চে প্রায়শই এমন প্রশ্ন শুনতে হয় আন্নাকে।
আন্না জানিয়েছেন, প্রথমে অটোর পিছনের আসনে শুধু খবরের কাগজ রাখতেন। এখন তাঁর ক্রেতারা চাইলে বর্ষায় ছাতাও ‘ধার’ নিতে পারেন অটো থেকে। আন্নার কথায়, ‘‘চেন্নাইয়ে আবহাওয়ার কোনও বিশ্বাস নেই। যখন তখন বৃষ্টি। যাত্রীদের দেখতাম অটো থেকে নেমে ভিজে ভিজে অফিস যাচ্ছেন। তাঁদের কথা ভেবেই ছাতার স্ট্যান্ড রেখেছি অটোতে। চাইলে এখান থেকে ছাতা নিয়ে সাময়িক অসুবিধা মেটাতে পারেন যাত্রীরা।’’
যাত্রীদের কথা ভেবেই ল্যাপটপ, ওয়াই-ফাই, খাবারের ব্যবস্থাও। আন্না জানিয়েছেন, এক বার এক যাত্রীকে ল্যাপটপের জন্য আফশোস করতে দেখেছিলেন। তাঁর প্রয়োজন মেটাতে না পেরে খারাপ লেগেছিল আন্নার। সেই থেকে অটোতে ল্যাপটপ এবং ট্যাবলেট রাখেন তিনি। ইন্টারনেট না পেয়ে সমস্যায় পড়তে দেখেছিলেন এক দম্পতিকে। অটোতে ওয়াইফাই চালু করার ভাবনাও সেখান থেকেই। এমনকি বাড়িতে থেকে না খেয়ে আসা যাত্রীদের অনুযোগও শুনতেন মাঝে মধ্যেই। তারপর থেকেই অটোয় ফল, খাবার, কফি এমনকি ডাবের জল রাখার ব্যবস্থাও করেন আন্না। স্কুলফেরৎ শিশুদের জন্য থাকে চিপস-চকোলেটও।
এর পাশাপাশি চাইলে যাত্রীরা আন্নার সঙ্গে কথা বলেও মন হালকা করতেও পারেন। তিনি জানিয়েছেন, বিরক্ত-হতাশ-দুঃখ পাওয়া যাত্রীরাও তাঁর অটোতে স্বাগত। তিনি তাঁদের কথা শুনতে পারেন। যাত্রীদের ৯ রকম ভাষায় অভিবাদন জানাতে শিখেছেন আন্না। কথা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ফিল্ম, খেলাধূলা, ফ্যাশন এমনকি বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়েও পড়াশোনা করেছেন তিনি। নিয়মিত কাগজ পড়ে জেনে নেন সাম্প্রতিক ঘটনার হাল হদিশ।
ম্যানেজমেন্টের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পুরনো গ্রাহককে বার বার ফিরিয়ে আনা। আন্না তাঁর অটো পরিষেবার গ্রাহকদেরও ফেরানোর ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর অটোয় ২০ বার সফর করলে আড়াইশো টাকার কুপন পান যাত্রীরা। ওই টাকা তাঁরা পরবর্তী সফরে ভাড়ার বদলে ব্যবহার করতে পারেন। একই ভাবে ৩০টি সফরে ৫০০ টাকা এবং ৫০টি সফরে ১০০০ টাকার কুপন দিয়ে থাকেন আন্না। তবে অনেক ক্ষেত্রেই তিনি দেখেছেন, গ্রাহকেরা সেই কুপন পেয়েও ব্যবহার করতে চাননি। আন্নার কথায়, ‘‘সে দিন বুঝেছিলাম গ্রাহকেরা বন্ধুও হতে পারেন।’’
বাবা, দাদা দু’জনেই পেশায় অটোচালক। আন্না জানিয়েছেন, অটোচালক হওয়া বোধহয় তাঁর ভাগ্যেই লেখা ছিল। ব্যবসায়ী হতে চেয়েছিলেন। পারিবারকে সাহায্য সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অনটনের কারণেই দ্বাদশ পাস করার আগেই স্কুলছুট হন আন্না। তবে পড়াশোনা বন্ধ রাখেননি। মনে করেন শেখার কোনও শেষ নেই। আর শিখতে হলে প্রথাগত বা পুঁথিগত শিক্ষারও দরকার নেই।
আন্নার এই অটো পরিষেবা এখন চেন্নাইয়ে পরিচিত ‘অটো আন্না’ নামে। তবে তাঁর এই প্রচেষ্টা প্রথম সামনে আসে ২০১৩ সালে। রাতারাতি তারকার মর্যাদা পান আন্না। তাঁকে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলতে ডাকে একটি সংস্থা। তার পর থেকে আজ পর্যন্ত বহু কর্পোরেট সংস্থা ডেকেছে তাঁকে। তালিকায় রয়েছে হুন্ডাই, ভোডাফোন, রয়্যাল এনফিল্ড, টয়োটার মতো সংস্থা। আইআইটি, আইএসবির মতো সংগঠনও। এমনকি ‘টেড এক্স টক’-এও কথা বলার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে আন্নাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy