Advertisement
০৫ মে ২০২৪
77th Independence Day

জঙ্গি-গুলির বলি স্বামী, তেরঙা তুলবেন স্ত্রী

২১ বছর আগের একটা রাত। তারিখ ছিল ১৩ মার্চ। ‘অবাধ্যতার সাজা’ দিতে বাড়িতে চড়াও হল জঙ্গিরা। দেশপ্রেমের পতাকাধারী হওয়ার মাসুল হিসেবে আলফার তাজা সীসা ফুঁড়ে দিয়েছিল ভাস্কর বসুকে।

representational image

—প্রতীকী ছবি।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৩ ০৬:১০
Share: Save:

তেরঙা উত্তোলন নিয়মরক্ষামাত্র নয়, ওই আয়তাকার কাপড়ের টুকরোয় যে জড়িয়ে আছে নেতাজির লড়াই, মাস্টারদার আদর্শ। এত রক্ত, এত সংগ্রামের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা মিলেছিল, তাকে ‘ঝুটো’ বলে দাগিয়ে দিলেই হল! হতে পারে স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বীকৃতিতে স্বাধীন ভারত তাঁকে একটা তাম্রপত্র বই কিছুই দেয়নি, হতে পারে বাড়ির জমির পাট্টা বা খাবার জলের লাইনটুকুও মেলেনি প্রত্যন্ত গ্রামের অভাবজর্জর কুঁড়েতে। তাই বলে ১৫ অগস্ট পতাকা তুলবেন না! এমনটা ভাবতেই পারতেন না অসমের ধুবুড়ি জেলার গোলকগঞ্জের কানাইলাল বসু।

কট্টর জঙ্গিরা ফি বছর হুমকি দিত, এই আজ়াদি ‘ঝুটো’। ভারতের স্বাধীনতা দিবস অসমের মাটিতে পালন করা চলবে না। কিন্তু যে জেদের বশে স্বাধীনতা সংগ্রামে নাম লিখিয়েছিলেন কানাইলাল, সেই জেদ আমৃত্যু বজায় রেখে স্বাধীনতা ও প্রজাতন্ত্র দিবসে নিয়ম করে পতাকা তুলেছেন তিনি। ১৯৯৬ সালে বাবা মারা যাওয়ার পরে সন্তান ভাস্কর সেই দায়িত্ব কাঁধে নেন। বাড়তে থাকে আলফার হুমকি। কিন্তু ভাস্কর থামেননি। শুধু পতাকা তোলাই নয়, স্বাধীনতা দিবসে মাইকে দেশপ্রেমের গান বাজিয়ে গ্রামবাসীদেরও উদ্বুদ্ধ করতেন তিনি।

২১ বছর আগের একটা রাত। তারিখ ছিল ১৩ মার্চ। ‘অবাধ্যতার সাজা’ দিতে বাড়িতে চড়াও হল জঙ্গিরা। দেশপ্রেমের পতাকাধারী হওয়ার মাসুল হিসেবে আলফার তাজা সীসা ফুঁড়ে দিয়েছিল ভাস্কর বসুকে। বাধা দিয়ে গিয়ে গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামীর বর্ষীয়ান স্ত্রী প্রভাবতীদেবীও। ভাস্করের স্ত্রী চন্দনার কোলে তখন আড়াই মাসের ছেলে শঙ্খনাথ। জঙ্গিদের গুলি তাঁরও গায়ে লাগে। ওই অবস্থায় জঙ্গিদের পায়ে ধরে সন্তানের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন চন্দনা। সেই ছেলে এখন ২১ বছরের ছাত্র। বাবার স্মৃতি বলতে ২০০২ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসে জাতীয় পতাকা হাতে দাঁড়ানো ছবিটা।

দেশের জন্য লড়াই করেছেন ঠাকুরদা, দেশের পতাকার জন্য প্রাণ দিয়েছেন বাবা। যুবক শঙ্খনাথ এখন আগমনী কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনা চালাচ্ছেন অতি কষ্টে। সংসার চালাতে ছোট দোকান করেছেন তিনি। ইন্দিরা আবাসের ভেঙে যাওয়া ঘর আর সারানো সম্ভব হয়নি। এমনকি এত বছরের বসতবাটির একবছুরে পাট্টা জমিরও মেয়াদি পাট্টা পাননি সরকারের তরফে। এমনকি আজ পর্যন্ত বাড়িতে আসেনি পানীয় জলের লাইন!

সারা অসম বেঙ্গলি ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক অমৃতলাল দাস জানান, চন্দনা-শঙ্খনাথের দুর্দশার কথা জানতে পেরে গত বছর ঐক্য মঞ্চ তাঁদের পাশে দাঁড়ায়। প্রতি মাসে বসু পরিবারকে ৫০০ টাকা করে সাহায্য দেওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনের কাছেও পরিবারটির ন্যায্য পাওনা আদায়ের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। দাসের মতে, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের মধ্যেই এক স্বাধীনতা সংগ্রামী ও জাতীয় পতাকা তোলার জন্য প্রাণ দেওয়া মা ও ছেলের পরিবারের প্রতি সরকারের এই অবহেলা মেনে নেওয়া যায় না।

এ বছর চন্দনা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ফের শ্বশুর ও স্বামীর মতোই ঘটা করে পতাকা তোলা হবে তাঁর বাড়ির উঠোনে। বাজবে দেশাত্মবোধক গান। ব্রহ্মপুত্রে অনেক জল গড়িয়েছে। আলফা স্বাধীন এ বারেও স্বাধীনতা দিবস বয়কটের ডাক দিলেও তাদের ডাকে আগের মতো জোর নেই। পতাকা তোলার অনুষ্ঠানে সকলকে যথাসাধ্য নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন চন্দনা। ঐক্য মঞ্চের মতে, এত বছর পরে ওই বাড়িতে ফের ঘটা করে স্বাধীনতা দিবস পালন হওয়া ও জাতীয় পতাকা তোলা লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা তোলার তুলনায় কোনও অংশে কম নয়।

এ দিকে এই প্রথম শিলংয়ের রবীন্দ্র অনুরাগীদের অনুরোধ মেনে স্বাধীনতা দিবসে ব্রুকসাইড বাংলোও তেরঙা আলোয় সাজাল মেঘালয় সরকার। স্বানীয় বাসিন্দা তথা শিলংয়ে রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি ও বিবেকানন্দের স্মৃতিরক্ষা নিয়ে নিরলস সংগ্রাম করা মালবিকা বিশারদ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ বছর তাঁরা ব্রুকসাইডেই ভারতমাতার বন্দনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। সেখানে হিন্দি, বাংলা ও খাসি ভাষার বিভিন্ন দেশাত্মবোধ গান, পাঠ ও বক্তৃতায় দিনটি পালিত হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

77th Independence Day national flag Assam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE