আজও ওঁরা উদ্বাস্তু! সংসদে যথেষ্ট আসন পেয়েও গত ছ’বছরে দিল্লির বুকে একটা ঘর পায়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস!
সদ্যসমাপ্ত কলকাতা পুরভোটে একক ভাবে কোনও বিরোধী দল ১৫টি আসন না-পাওয়ার কারণ দেখিয়ে বিরোধীদের জন্য নির্দিষ্ট ঘরগুলিতে তালা লাগিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা তথা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। যদিও পরে বিতর্কের মুখে সেই সিদ্ধান্ত বদলে বিরোধীদের ঘর দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি।
নয়াদিল্লির ছবিটা অবশ্য ভিন্ন! শোভনবাবুর দলের সাংসদরা স্পিকার নির্দেশিত ঘরে ঢুকতে গিয়ে কার্যত ধাক্কা খেয়ে ফিরে এসেছেন সংসদে! যদিও সংসদে তারা এই মুহূর্তে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম (কংগ্রেস ও এডিএমকে-র পরে) বিরোধী দল। তাঁরা কেন ঘর পাবেন না?
রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, এর একটি কারণ যদি হয়, স্পিকারের শৈথিল্য, তবে অন্য বড় কারণটি হল তৃণমূলের সংসদীয় নেতাদের আগ্রাসী মনোভাবের অভাব। গোবলয় বা দক্ষিণের দলগুলির মধ্যে সংসদীয় কক্ষ দখলের প্রশ্নে যে ভাবে ‘লড়কে লেঙ্গে’ মনোভাব দেখা গিয়েছে, তার চিহ্ন দেখা যায়নি তৃণমূলের মধ্যে।
ফলাফল?
কখনও চা খাইয়ে তৃণমূল সাংসদদের ফেরৎ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঘর থেকে। আবার কখনও তাঁদের নেমপ্লেট খুলে নেওয়া হচ্ছে। ফলে ২০০৯ সালে বড় সংখ্যা নিয়ে লোকসভায় জিতে আসার পর থেকে আজ পর্যন্ত রাস্তাই তাঁদের একমাত্র রাস্তা! তাই অধিবেশন মুলতুবি হয়ে গেলে করিডরে বছরের পর বছর উদাস নেত্রে পায়চারি করতে দেখা যায় রত্না দে নাগ, মমতাজ সংঘমিতাদের। বান্ধবী এলে ঠিকঠাক বসাবার জায়গা না পাওয়ায় লাইব্রেরিতেই তাঁকে নিয়ে বসান সৌমিত্র খান। রুপোলী পর্দার জনপ্রিয় জুটি তথা সাংসদ তাপস পাল এবং শতাব্দী রায়কেও অধিবেশনের ফাঁকে বাড়ি ফিরতে হয় বিশ্রামের জন্য। অধিবেশনে কোনও বিল নিয়ে সরকারের সঙ্গে মল্লযুদ্ধের বিবরণ সাংবাদিকদের জানাতে বারবার লাইব্রেরিতে ছুটে আসতে হয় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও ব্রায়েনদের। অথচ, আরজেডি, বিজেডি, সপা, জেডি(ইউ)-র মত দল, যাদের সাংসদ সংখ্যা তৃণমূলের চেয়ে কম, তারা প্রত্যেকেই একটি করে ঘরের মালিক!
বেশ কয়েক বার স্পিকারের কাছে দরবার করেছেন তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি অধিবেশনেও যার অন্যথা হয়নি। অধিবেশন শুরুর পরের দিনই স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে তিনি ফের একই অভিযোগ জানিয়েছেন। স্পিকার তাঁকে তিন তলার একটি ঘর নেওয়ার পরামর্শ দিলে মানতে চাননি সুদীপ। তাঁর কথায়, ‘‘একতলার ঘর না পেলে অন্যান্য দলগুলির সঙ্গে কক্ষ সমন্বয়, দ্রুত অধিবেশন কক্ষে যাওয়া, লাইব্রেরি, সেন্ট্রাল হল লাইব্রেরিতে যাওয়ার অসুবিধা হয়। আমি স্পিকারকে জানিয়েছি, আমাদের একতলার ঘর চাই।’’ স্পিকারের অফিস থেকে আশ্বাস পাওয়া গিয়েছে, এই অধিবেশনে সম্ভব না হলেও বর্ষাকালীন অধিবেশনে তৃণমূল যাতে ঘর পায়, সেটা দেখা হচ্ছে। তবে এখনও কোনও পাকা আশ্বাস মেলেনি।
২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে ১৯ জন সাংসদ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন দিল্লি আসেন, তখন তাঁর ঘরটিই (তিনি তখন রেলমন্ত্রী) ছিল তৃণমূলের অস্থায়ী পার্টি অফিস। সেখানেই বৈঠক, দুপুরের খাওয়াদাওয়া, অফিসের বিভিন্ন কাজ। তখন নিজেদের ঘর পাওয়ার জন্য কোনও আগ্রহ দেখাননি তৃণমূল নেতৃত্বও। মমতা মুখ্যমন্ত্রী হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে যাওয়ার পরই নড়েচড়ে বসেন তাঁরা। কিন্তু ততক্ষণে যে যার ঘর নিয়ে বসে পড়েছে। ছাড়ার নামও করছেন না! তৎকালীন স্পিকার মীরা কুমারের নির্দেশে একতলার বৃহদাকার ১২৯ নম্বর ঘরটির দখল নিতে যান তৃণমূল নেতারা। সেটি তখন ছিল লালুপ্রসাদের আরজেডি-র দখলে। তৃণমূলের সাংসদদের চা খাইয়ে ফেরৎ পাঠিয়ে দেন আরজেডি-র রঘুবংশ প্রসাদরা! পরে লালু সদলে স্পিকারের কাছে গিয়ে বলে আসেন, ‘‘আজ না হয় আমাদের ৮ জন সাংসদ, কিন্তু কাল তো আরও বাড়তে পারে! এই ঘর আমরা ছাড়তে পারব না।’’ পরে সাংবাদিকদের সামনে লালু বলেছিলেন, এই ঘর আমরা খালি করব না। লড়াই করব!’’
ব্যস। তারপর আবার সেই করিডর, সেন্ট্রাল হল, লাইব্রেরিই আস্তানা। মাঝে মধ্যে বিষয়টি নিয়ে স্পিকারের কাছে দরবার। গত বছর অগস্টে আবার ঘর-নাট্যের নবতম সংযোজন একতলার ৫ নম্বর ঘরটি নিয়ে। ওই ঘরটি গত ৩০ বছর ধরে তেলুগু দেশমের দখলে। অগস্ট মাসে সেটি তৃণমূলের জন্য ধার্য করা হয়। তেলুগু দেশমকে বলা হয় তিনতলার একটি ঘরে চলে যেতে। কিন্তু সেখানেও লড়াই বাধে। চলে ঘরের বাইরে একে অন্যের নেমপ্লেট খোলার নাটক! স্পিকারের কাছে প্রতিনিধি দল নিয়ে গিয়ে তেলুগু দেশম সাফ জানিয়ে দিয়েছে, দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙে অন্য ঘরে যাওয়া তাদের পক্ষে অসুবিধাজনক।
ফলে পরিস্থিতি যে কে সেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy