মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।
নেত্রীর নির্দেশের পরেই সংসদের উভয় কক্ষে ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’র বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন তৃণমূল সাংসদেরা।
এক দিকে আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করা-সহ কেন্দ্রের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়ে তিন বার রাজ্যসভা মুলতুবি করে দিলেন তৃণমূল সাংসদেরা। রাজ্যসভায় আজ কার্যত প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া তৃণমূল পাশে পেল বিজেডি, সমাজবাদী পার্টি এমনকী কংগ্রেসকেও। অন্য দিকে লোকসভায় আজ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত আলোচনায় সরকারকে একযোগে আক্রমণ শানাল বিরোধীরা। সেখানেও মুখ্য ভূমিকা নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলই।
গত কাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের ঋণ পুনর্গঠন ও উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতির প্রতিকারের দাবি জানিয়েছিলেন মমতা। মোদী তাঁকে আশ্বাস দিলেও দলের সাংসদদের মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়ে যান, রাজ্যের দাবি আদায়ের প্রশ্নে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে সরব হতে হবে। নামতে হবে ওয়েলেও।
সংসদে সেই নির্দেশই অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন মমতার সৈনিকেরা। আজ তৃণমূলের বিক্ষোভের জেরে মোট তিন বার বন্ধ হয়ে যায় রাজ্যসভার অধিবেশন। তালিকায় একাধিক বিষয় থাকলেও তাঁরা সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ছিলেন আধার কার্ডের প্রশ্নে। কেন্দ্রীয় সরকার ভর্তুকির টাকা পাওয়ার জন্য আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে সরব রয়েছেন মমতা। তাঁর যুক্তি, রাজ্যের মাত্র চল্লিশ শতাংশ লোকের আধার কার্ড হয়েছে। অথচ কেন্দ্র বলছে, গ্যাসের ভর্তুকি থেকে পেনশন, বৃত্তির টাকা থেকে একশো দিনের কাজের মজুরি— সবই দেওয়া হবে ওই কার্ডের ভিত্তিতে। দিন দশেক আগে হওয়া মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক কিংবা গত কালের একান্ত বৈঠক, দু’টি ক্ষেত্রেই মোদীর কাছে মমতা প্রশ্ন তুলেছিলেন ‘‘যাঁদের কার্ড নেই, তাঁদের কী হবে?’’
আজ সেই প্রশ্নের প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে উভয় কক্ষেই। রাজ্যসভায় তৃণমূলের হইচইয়ের জেরে ভেস্তে যায় শুরুর অধিবেশন। বেলা বারোটায় প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হতেই ফের সরব হয় তৃণমূল। সাংসদেরা ওয়েলে নেমে আসেন। তাঁদের সমর্থনে সুর চড়ায় বিজেডি ও সমাজবাদী পার্টি। পরে বিক্ষোভে যোগ দেয় কংগ্রেসও। রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা মজবুত করার বদলে তাকে দুর্বল করতে চাইছে কেন্দ্র। আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করায় সাধারণ মানুষ পেনশন, গ্যাস বা কেরোসিনের ভর্তুকি পাচ্ছেন না।’’
রাজ্যসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘সরকার অন্যায় করছে। কারণ আদালত ইতিমধ্যেই বলেছে, আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করা যাবে না।’’ এ দিকে, লোকসভায় জিরো আওয়ারে আধার নিয়ে সরব হন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আগে দেশের সমস্ত মানুষ আধার কার্ড পাক। তার পর তা বাধ্যতামূলক করা হোক।’’ রাজ্যবাসী বঞ্চিত হলে তৃণমূল লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে হুমকি দেন তিনি।
আধারের পাশাপাশি লোকসভায় মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও মোদী সরকারকে চাঁছাছোলা আক্রমণ করে তৃণমূল। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আজ সংসদে বলেছিলেন, ‘‘এ বছর ভাল বর্ষা হবে। তাই আশা করা যায়, খাদ্যপণ্যের দাম কমবে।’’ নিজের বক্তৃতায় জেটলিকে কটাক্ষ করে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘স্রেফ ‘আশা’য় পেট ভরে না।’’ গত এক বছরে কী ভাবে ডাল, চিনি, আলুর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বেড়েছে, সেই উদাহরণ দিয়ে বর্ষীয়ান সাংসদ বলেন, ‘‘বিজেপি ক্ষমতায় এলে যে ব্যবসায়ীদের রমরমা বাড়ে, তা আগেও দেখা গিয়েছে।’’ দেশে ডালের চাহিদা মেটাতে সরকারের পরিবর্তে ব্যবসায়ীরা কেন বিদেশ থেকে ডাল কিনছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বঞ্চনার অভিযোগের তালিকায় এ দিন সংঘ্যালঘু প্রসঙ্গও তুলে এনেছে তৃণমূল। আজ ইদ্রিশ আলি-সহ তৃণমূলের সংখ্যালঘু সাংসদদের একটি দল কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভির সঙ্গে দেখা করে। তাঁরা অভিযোগ করেন, রাজ্যের প্রায় চার লক্ষ সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রী ২০১৫-’১৬ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিকের আগের ও পরের বৃত্তি এখনও হাতে পায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন নকভি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy