Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Tripura Municipal Election 2021

Tripura Municipal Election: বিজেপিই নিরঙ্কুশ, তবে আশা দেখছে তৃণমূল

ত্রিপুরার পুর নিগম, পুর পরিষদ ও নগর পঞ্চায়েত মিলে মোট ৩৩৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩২৯টিই রাজ্যের শাসক দলের দখলে।

পুরভোটেে জয়ের পর ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব ও বিজেপি রাজ্য সভাপতি মানিক সাহা।

পুরভোটেে জয়ের পর ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব ও বিজেপি রাজ্য সভাপতি মানিক সাহা। নিজস্ব চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী, বাপী রায়চৌধুরী
আগরতলা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৫০
Share: Save:

যা হওয়ার ছিল, তা-ই হল!

ভোটের দিনের ছবি দেখে কোনও মহলেই বিশেষ কোনও সংশয় ছিল না, ফল কী হতে চলেছে। গণনার দিনে সেই ছবিই আরও স্পষ্ট করে ত্রিপুরার পুরভোটে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দখল করল বিজেপি। তবে তার মধ্যেও আগরতলা শহরে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসে তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করল, বিজেপির ‘শেষের শুরু’ হল এই ফল থেকেই। আর ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের দাবি, রাজ্যকে ‘বদনাম’ করার চেষ্টার জবাব দিয়েছেন মানুষ।

ত্রিপুরার পুর নিগম, পুর পরিষদ ও নগর পঞ্চায়েত মিলে মোট ৩৩৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩২৯টিই রাজ্যের শাসক দলের দখলে। তার মধ্যে ১১২টি তারা আগেই জিতে নিয়েছিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ওয়ার্ডের নিরিখে বিরোধীদের ঝুলিতে গিয়েছে নামমাত্র আসন। কিন্তু এই ‘গেরুয়া ঝড়ের’ আবহেও ভোটপ্রাপ্তির বিচারে আগরতলায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। গোটা রাজ্যের পুর এলাকার ভোটের ফলের নিরিখে অবশ্য দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বামেরা।

পুরভোটে এ বার শাসক দলের বাহিনীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, গা-জোয়ারি ও ছাপ্পার অভিযোগ উঠেছিল ভূরি ভূরি। এমন নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ আখ্যা দিয়ে পুরভোট বাতিলের দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থে হয়েছে দুই বিরোধী দল সিপিএম ও তৃণমূল। রাজ্য নির্বাচন কমিশন কোথাও কোনও পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ না দেওয়ার প্রতিবাদে রবিবার গণনা প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণও করেনি বামেরা। ভোটবাক্স খোলার পরে এ দিন দেখা গিয়েছে, আগরতলা পুর নিগমের ৫১টি ওয়ার্ডের ৫১টিতেই জয়ী বিজেপি। শহরের ২৬টি ওয়ার্ডে তৃণমূল রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে, বামেরা দ্বিতীয় ২৫টিতে। পুরভোটে ত্রিপুরায় খাতাও খুলেছে তৃণমূল। আমবাসা পুর পরিষদের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সুমন পাল তাঁর জয়কে ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়’ বলেই বর্ণনা করেছেন। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের পুরভোটে আগরতলা পুরসভা জিতেছিল বামফ্রন্ট।

ত্রিপুরার যে ১৩টি পুর এলাকায় ভোট ছিল, তার সবক’টিই এ বার জিতেছে বিজেপি। যে ২২২টি আসনে ভোট হয়েছে, তার মধ্যে বিজেপির দখলে ২১৭টি। সিপিএম পেয়েছে ৩টি আসন। তৃণমূল এবং তিপ্রা মথা ১টি করে ওয়ার্ড জিতেছে। তিপ্রা মথার প্রদ্যোত কিশোর মানিক্যের দাবি, কোনও জনজাতি সংগঠনের শহুরে এলাকায় জয় এই প্রথম। গোটা রাজ্যে পুর এলাকা ধরে হিসেব করলে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বামেরাই। তাদের প্রাপ্ত ভোট ১৯.৬৫%। তৃণমূল পেয়েছে ১৬.৩৯%। আর বিজেপির ভোট ৫৯.০১%। শুধু আগরতলা পুর এলাকা ধরলে আবার তৃণমূল থাকছে দ্বিতীয় স্থানে। প্রথম বার লড়তে নেমে আগরতলায় তৃণমূল পেয়েছে ২০.১৩%। বামেদের ভোট সেখানে ১৭.৯%। কংগ্রেস পেয়েছে ১.৮%। আর জয়ী বিজেপির প্রাপ্তি ৫৭.৪% ভোট। এই চিত্র সামনে রেখে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, ‘‘এই ফলে হতাশার তো কিছু নেই-ই, বরং উৎসাহিত হওয়ার কারণ আছে। বিজেপির শেষের শুরু হল। গণতন্ত্রের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ত্রিপুরার মানুষ আমাদের ভরসা দিয়েছেন।’’

তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য, আগরতলা-সহ বেশ কিছু এলাকার ওয়ার্ডে বাম ও তৃণমূল মিলে যা ভোট পেয়েছে, তা বিজেপির চেয়ে বেশি।

তৃণমূল নেতৃত্বের যুক্তি, মাত্র তিন মাসের রাজনৈতিক প্রস্তুতি নিয়ে তাঁরা ত্রিপুরায় পুরভোটের ময়দানে নেমেছিলেন। গোটা প্রচার-পর্ব এবং নির্বাচনে হামলা ও মামলার সঙ্গে লড়তে হয়েছে। ভোটে বিস্তর ‘জালিয়াতি’ সত্ত্বেও এই সামান্য সময়ে যে সমর্থন তাঁরা পেয়েছেন, সেই ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করা যাবে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘সবে তো শুরু। এ বার আসল খেলা হবে!’’ টুইট করে এ দিন তিনি বলেছেন, ‘নামমাত্র উপস্থিতি নিয়ে শুরু করে পুরভোটে ২০%-এর বেশি ভোট পেয়ে প্রধান বিরোধী হিসেবে উঠে আসা যে কোনও দলের পক্ষেই ব্যতিক্রমী। আমরা তিন মাস আগে কাজকর্ম শুরু করেছিলাম এবং অন্য দিকে, ত্রিপুরায় গণতন্ত্রকে জবাই করতে বিজেপি কোনও চেষ্টাই বাদ রাখেনি। এই পরিস্থিতি মাথায় রেখে ত্রিপুরায় তৃণমূলের সব কর্মীকে তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক সাহসের জন্য অভিনন্দন’!

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব অবশ্য পুরভোটে তাঁর দলের জয়ের পরে বলেছেন, ‘‘ত্রিপুরেশ্বরী মায়ের পুণ্যভূমির যাঁরা ক্ষতি করতে চেয়েছিলেন, তাঁদের যোগ্য জবাব দিয়েছেন ত্রিপুরাবাসী। ফলাফলে প্রতিফলিত হয়েছে, মানুষ উন্নয়নের পক্ষে। তাই বিজেপিকে ৯৮.৫০% আসনে জয়যুক্ত করে ত্রিপুরাবাসী উপহার দিয়েছেন।’’ তৃণমূলের প্রতি ইঙ্গিত করে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘ত্রিপুরাকে বদনাম করার চেষ্টায় যাঁরা ছিলেন, তাঁরা দেখুন কৈলাসহর অথবা সোনামুড়ায় সংখ্যালঘু এলাকাতেও মানুষ উন্নয়নের পক্ষে আস্থা প্রদর্শন করেছেন। কিছু দিন ধরে ত্রিপুরাকে বদনাম করার চেষ্টা হয়েছে।’’ পুর নির্বাচনে সাফল্যের জন্য অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য বিজেপিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

আগরতলা পৌঁছে এ দিন তৃণমূল নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বিপ্লবের সরকারকে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘গত পুর নির্বাচনে বিজেপি ১৪.১% ভোট পেয়ে ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় ক্ষমতা দখল করেছিল। তৃণমূল ২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটে একই ভাবে পরিবর্তন আনবে। অনেক জায়গায় রিগিং-ছাপ্পা করে, কোথাও কোথাও গণনায় কারচুপি করেও তারা তৃণমূলের উত্থান আটকাতে পারেনি।’’ গণনা-পর্ব সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করায় রাজ্য তৃণমূলের আহ্বায়ক সুবল ভৌমিক প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

সিপিএম অবশ্য এই পুরভোটের হিসেব-নিকেশ থেকে বড় কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে নারাজ। দলের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরীর কথায়, ‘‘যে নির্বাচনকে বাতিল করার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে যেতে হয়েছে, সেখান থেকে কে দ্বিতীয় বা তৃতীয়, সেই বিচার অর্থহীন! বিজেপির শাসনে গণতন্ত্র, নির্বাচন ও জনগণের ভোটের অধিকারের উপরে যে আক্রমণ চলছে, তা থেকে ত্রিপুরাকে বার করে আনতে সংগ্রামের ময়দানে আরও সক্রিয় হতে হবে।’’ ত্রিপুরা রাজ্য বামফ্রন্টের বিবৃতিতেও বলা হয়েছে, ‘অভূতপূর্ব সন্ত্রাস, নির্বাচন কমিশন এবং পুলিশের সচেতন ব্যর্থতার পাশাপাশি প্রশাসনিক সুযোগের ব্যবহার করে শাসক বিজেপি নগর সংস্থার নির্বাচনকে পুরোপুরিই প্রহসনে পরিণত করেছে।’

তবে বাম নেতৃত্ব মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০টি পুর এলাকার মধ্যে ১৩টিতে (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফয়সালা হয়েছে ৭টির) লড়াই করেছে বামফ্রন্ট। তিনটিতে লড়াই করেছে তৃণমূল। তাই সার্বিক ভাবে তৃণমূলের ‘প্রধান বিরোধী শক্তি’ হয়ে ওঠার দাবি ঠিক নয় বলে বামেদের পাল্টা দাবি। তাঁরা আরও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আগরতলায় বিজেপির দু’জন ‘বিক্ষুব্ধ’ বিধায়ক পিছন থেকে তৃণমূলকে মদত করেছেন। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও বিজেপি নেত্রী প্রতিমা ভৌমিকও মন্তব্য করেছেন, পুরভোটে তাঁদের ‘সাফল্য’ এসেছে বামেদের হারিয়েই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE