Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নেত্রী লন্ডন গেলেই ধর্নায় তৃণমূল

সংসদের বাদল অধিবেশনে বিজেপির বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখাতে চলেছে তৃণমূল! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তা-ও একেবারে অঙ্ক কষে। সূত্রের খবর, বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়াতে সোমবার সকালে সংসদ ভবনের প্রধান প্রবেশদ্বারে ধর্নায় বসবে তৃণমূল। ওই সময়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদিও থাকবেন বিদেশে।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪৮
Share: Save:

সংসদের বাদল অধিবেশনে বিজেপির বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখাতে চলেছে তৃণমূল! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তা-ও একেবারে অঙ্ক কষে। সূত্রের খবর, বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়াতে সোমবার সকালে সংসদ ভবনের প্রধান প্রবেশদ্বারে ধর্নায় বসবে তৃণমূল। ওই সময়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদিও থাকবেন বিদেশে।

সুষমা স্বরাজ-বসুন্ধরা রাজে-শিবরাজ সিংহের ইস্তফার দাবিতে সংসদ যখন উত্তাল, তখন কৌশলী অবস্থান নিয়েছিল মমতার দল। আগের অধিবেশনগুলিতে তৃণমূল সাংসদরা কখনও কালো কাপড়, কখনও লাল ডায়েরি, কখনও মাটির হাঁড়ি বা ঝুড়ি নিয়ে অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু চলতি অধিবেশনে সেই ছবি একেবারে অনুপস্থিত। হাতের সামনে ললিত মোদী বিতর্ক, ব্যপমের মতো গরম বিষয় থাকলেও ওয়েলে আসা দূরস্থান, নিজেদের আসনে দাঁড়িয়ে বাকি বিরোধীদের সঙ্গে গলা মেলাতেও দেখা যায়নি তৃণমূলীদের। সংবাদমাধ্যমের সামনে তৃণমূল সংসদীয় নেতৃত্বের গড়পড়তা জবাব, ‘কারও নাম করে নয়, আমরা সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ব্যপম কেলেঙ্কারির তদন্ত হওয়া দরকার।’ অনেকেই মনে করেন, সারদা নিয়ে তৃণমূল এতটাই চাপে যে, মোদী সরকারকে আক্রমণ করা তাদের পক্ষে খুবই সমস্যার।

সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে নবান্নে সাংসদদের নিয়ে যে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, সেখানে তিনি স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন, প্রথম সপ্তাহে কোনও হইচই না করে দুই কক্ষের পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে। তাই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েনের কৌশলী ব্যাখ্যা ছিল, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে কারও পদত্যাগ চাওয়া অর্থহীন।

কিন্তু এই সময়ের মধ্যেই পরপর এমন দু’টি ঘটনায় প্রবল ক্ষুব্ধ হন মমতা। এক, সৌগত রায় ব্যপম কেলেঙ্কারির দ্রুত তদন্ত চেয়ে গত পরশু লোকসভায় মুলতুবি প্রস্তাব জমা দেন। সূত্রের বক্তব্য, মমতার পরামর্শ না নিয়েই এই পদক্ষেপ করেন তিনি। দুই, ওই দিনই ডেরেক সংবাদমাধ্যমে জানান, তাঁরা কংগ্রেস-সহ সমস্ত বিরোধী দলের (যার মধ্যে সিপিএম-ও পড়ে!) সঙ্গে হাত মিলিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কৌশল স্থির করছেন।

এক দিকে রণনীতি ঠিক করার ক্ষেত্রে এই সমন্বয়হীনতা, অন্য দিকে তৃণমূলের অবস্থান নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ— পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নিজেই আসরে নামেন মমতা। কেন্দ্রীয় সরকারের সার্বিক দুর্নীতির বিরোধিতা করে আগামী সোমবার সকালে দলের সমস্ত সাংসদকে সংসদ ভবনের মূল গেটে ধর্না দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। সূত্রের খবর, কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও দোলা সেনকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিয়েছেন নেত্রী।

তবে মমতার কৌশল হল, বিরোধিতার সুর চড়াতে হবে। কিন্তু সেটা দেখানোর জন্য। দিল্লির রাজনৈতিক পরিভাষায় যাকে বলা হয়, ‘মেগাফোন রাজনীতি’! অর্থাৎ, প্রকাশ্যে বিরোধিতা করো কিন্তু লক্ষ্মণরেখা বজায় রেখে! এই ‘পরিকল্পিত’ বিরোধিতার অঙ্গ হিসেবেই মমতা যখন লন্ডনে থাকবেন, সেই সময়েই অন্য দিনের চেয়ে বিজেপি-বিরোধিতার স্বর চড়িয়ে দেওয়া হবে। যে কারণে রবিবার নেত্রী লন্ডন চলে যাওয়ার পর সোমবার ধর্নায় বসবেন দলীয় সাংসদরা। অনেকের মতে, তৃণমূলকে বিরোধিতার লাইন নিতে দেখে বিজেপি যদি মমতার উপর চাপ বাড়াতে চায়, সে ক্ষেত্রে তাঁর তরফেও পাল্টা যুক্তি থাকবে। তৃণমূল নেত্রী বলতে পারবেন, তিনি যে হেতু দেশের বাইরে ব্যস্ত ছিলেন, তাই তাঁর পক্ষে সংসদের ঘটনার নজরদারি করা সম্ভব ছিল না।

তৃণমূলের পক্ষ থেকে সরকারি ভাবে ধর্নার কথা এখনও জানানো হয়নি। তবে ডেরেক আজ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বলেন, ‘‘আমাদের আজকের কৌশল কাল বদলেও যেতে পারে।’’ এ সবের মধ্যে অবশ্য কংগ্রেসের জন্য খিড়কির দরজাটুকুও খোলা রেখে চলতে চান মমতা। মোদীর বিরুদ্ধে কিছুটা নরম অবস্থান নেওয়ায় সংখ্যালঘু ভোটে ভাঙনের আশঙ্কা মাথায় রেখে চলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মমতার আরও একটি লক্ষ্য, পর্দার আড়ালে সিপিএম ও কংগ্রেস যাতে কোনও রকম সমঝোতায় না আসতে পারে, সে চেষ্টাও চালিয়ে যাওয়া। পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের একাংশ কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে লড়তে চান। বিশেষ করে গৌতম দেবের মতো নেতা যখন এ নিয়ে প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেছেন, তখন তৃণমূলের উপরেও চাপ আসছে। এই পরিস্থিতিতে মমতাও ভারসাম্য রক্ষার কৌশলী অবস্থান নিচ্ছেন।

তবে সব সময় চিত্রনাট্য অনুসরণ করেও এগোনো যায় না। ললিত মোদীকে নিয়ে বিতর্ক সামনে আসার দিনেই যেমন সুষমা সম্পর্কে ‘বেফাঁস’ মন্তব্য করে মমতাকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন সৌগত রায়। সেই বক্তব্য খণ্ডন করতে হয়েছিল দলকে। অথচ গত কালও কার্যত একই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হয়েছে। তবে সুষমা স্বরাজের মতো বিজেপির অনেক নেতা-নেত্রীর সঙ্গেই মমতার ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। তাই সোমবারের ধর্নায় কী ভাবে ললিত-বিতর্ককে হাজির করা হয়, সেটাও দেখার। এর আগে বিভিন্ন সময়ে সংসদের বাইরে ধর্না দেওয়ার পরেই সংসদের ভিতরে সেই বিষয় ঘিরে সরব হয়েছে তৃণমূল। সোমবার সেই ছবিটা কী হয়, তা নিয়েও কৌতূহল থাকছে যথেষ্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE