ফাইল চিত্র।
রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুর প্রস্তাবিত শৃঙ্খলারক্ষাকারী কমিটিতে নিজেদের প্রতিনিধি পাঠাতে গত কাল অস্বীকার করেছে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল। সাম্প্রতিক বাদল অধিবেশনে বিরোধী সাংসদদের আচরণ নিয়ে ময়নাতদন্ত করতে এই কমিটির প্রস্তাবনা। গত কাল বিষয়টি নিয়ে বেঙ্কাইয়াকে রাজ্যসভার দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে একটি চিঠি দেওয়ার পর আজ আসরে নামল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। গত কালই তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন কংগ্রেসকে জানিয়েছিলেন, ওই বৈঠকে যোগ না দেওয়ার প্রশ্নে তাঁরাও সহমত। আজ ডেরেক পৃথক ভাবে দাবি তুলেছেন, সরকার যে ভাবে সংসদীয় গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, তা স্পষ্ট করার জন্য রাজ্যসভার পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক। বিষয়টি নিয়ে পরে একটি টুইটও করেন তিনি।
ডেরেকের কথায়, ‘যে ভাবে সরকার একের পর বিল সংসদীয় কমিটিকে এড়িয়ে গায়ের জোরে পাশ করিয়ে নেওয়ার পন্থা নিয়েছে, তা বিস্তারিত তদন্ত দাবি করে। গত বাদল অধিবেশনে যে সব প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলি সংসদীয় কমিটির সামনে রাখা হোক। তদন্ত করে দেখুন চেয়ারম্যান।’
তৃণমূল সূত্রে যে প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য (১) সংসদে সংবিধান সংশোধন(১২৭ তম) বিল পাশ করানোর সময় প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন না কেন? (২)বিল প্রতি গড়ে ১০ মিনিট আলোচনার সময় দিয়ে দু’টি কক্ষ মিলিয়ে মোট ৩৮টি বিল পাশ করানো হল কেন? (৩)প্রতি দশটি বিলের মাত্র একটিকে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। তা হলে সংসদীয় কমিটি থাকার অর্থ কী? (৪) দু’বছর অতিক্রান্ত, এখনও কেন ডেপুটি স্পিকার পদে কাউকে নির্বাচিত করা হল না? (৫) সরকার দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা নিয়ে (পেগাসাস) আলোচনা করতে দিল না কেন?
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, তৃণমূলের দাবি মেনে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান সরকারের অপারগতা নিয়ে তদন্ত কমিটি তৈরি করবেন, এমনটা কেউই আশা করছেন না। তৃণমূলও নয়। আসলে বিষয়টি কমিটি গঠনেরও নয়, বরং রাজনৈতিক দাবি তুলে বিরোধিতার হাওয়া গরম করে রাখার। যখন রাজধানীতে সংসদীয় অধিবেশন থাকবে না, তখনও নানা ভাবে দিল্লিতে রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে, এমনটাই সাংসদদের প্রতি নির্দেশে তৃণমূল নেত্রীর। সে কারণেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে কলকাতায় তাঁর দল বিস্তারিত ভাবে বলার পরেও সম্প্রতি সুখেন্দুশেখর রায় দিল্লিতে মহাদেব রোডে তাঁর বাসভবনে তোপ দেগে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন।
তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, বিধানসভা ভোটে বিজেপি-কে বিপুল ভাবে হারানোর পরে জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলই যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুখ— সংসদের ভিতরে ও বাইরে সেটাই বারবার তুলে ধরার চেষ্টা করেছে দল। বিরোধীদের তথা কংগ্রেসকে জায়গা না ছাড়ার মনোভাবই নেওয়া হয়েছে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ইডি-র জেরা থেকে বেরিয়ে কংগ্রেসকে নিশানা করে বলেছিলেন, ‘বিজেপি-র চাপের বিরুদ্ধে তৃণমূলই একা লড়ে যাচ্ছে, কংগ্রেস ঘরে বসে গিয়েছে।’ বাদল অধিবেশনে সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে গত কাল কংগ্রেসের নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে চিঠি লেখার পর আজই তাই এই সক্রিয়তা দেখা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিবিরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy