Advertisement
E-Paper

এক মাসে বদলে গেল চাঁদমারিই! কালো টাকা নিয়ে এখন মুখে কুলুপ

৮ নভেম্বর নোট বাতিলের ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দাবি ছিল, এতে মাথায় হাত পড়বে কালো টাকা আর জাল নোটের কারবারিদের। বন্ধ হবে সন্ত্রাসে টাকার জোগানও। কিন্তু মাস পেরিয়ে সরকার বুঝছে, কালো টাকা বা জাল নোট জব্দ করার আশার হালে পানি তেমন নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:৩৬

৮ নভেম্বর নোট বাতিলের ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দাবি ছিল, এতে মাথায় হাত পড়বে কালো টাকা আর জাল নোটের কারবারিদের। বন্ধ হবে সন্ত্রাসে টাকার জোগানও। কিন্তু মাস পেরিয়ে সরকার বুঝছে, কালো টাকা বা জাল নোট জব্দ করার আশার হালে পানি তেমন নেই। এমনকী শুরুতে দেখা ‘ক্যাশলেস ইকনমি’র (নগদহীন অর্থনীতি) স্বপ্নও এখন ফিকে হয়ে ঠেকেছে ‘লেস ক্যাশ ইকনমি’তে (কম নগদের অর্থনীতি)। হয়তো সেই কারণেই বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে নগদের জোগান, ব্যাঙ্ক-এটিএমে ভোগান্তির প্রশ্ন কার্যত এড়িয়েই গেলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। শু‌ধু একগুচ্ছ ছাড় ও সুযোগ-সুবিধার কথা ঘোষণা করলেন ডিজিটাল লেনদেনে।

পেট্রোল পাম্পে তেল কেনা থেকে নতুন বিমার প্রিমিয়াম, রেলের মান্থলি টিকিট থেকে জাতীয় সড়কে টোল মেটানো— সব জায়গায় নোট ছেড়ে কার্ড-অ্যাপ-ই ওয়ালেটের হাত ধরলে কী কী সুবিধা মিলবে, এ দিন তার এগারো দফা ফিরিস্তি দিয়েছেন জেটলি। বলেছেন নগদ লেনদেন কমানোর কথা। যেন শুরু থেকে এটিই প্রধান লক্ষ্য ছিল সরকারের।

ফলে উঁকি দিচ্ছে প্রশ্ন, তবে কি কালো টাকার বিরুদ্ধে জেহাদ পাল্টে গেল কার্ড ঘষানোর যুদ্ধে? যদি তা-ই হয়, তবে তো ধীরেসুস্থে, নিখুঁত পরিকল্পনার ঘুঁটি সাজিয়েই তা করা যেত। তার জন্য সাধারণ মানুষের এই ভোগান্তির প্রয়োজন আদৌ ছিল কি?

অনেকের আবার প্রশ্ন, ডিজিটাল লেনদেনের হাত ধরে দুর্নীতিতে রাশ টানা কিছুটা সুবিধাজনক। কিন্তু সাধারণ মানুষকে তাতে টেনে আনতে তিনি যে গাজর ঝুলিয়েছেন, তা কি সত্যিই সুস্বাদু? অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, পেট্রোল পাম্পে হাজার টাকার তেল কিনলে ছাড় মিলবে সাড়ে সাত টাকা। শহরতলির রেলে ৩০০ টাকার মান্থলি টিকিটে দেড়
টাকা! এইটুকুর জন্য লোকে এত দিনের নগদে কেনাকাটার অভ্যেস ছেড়ে দেবেন?

কিছুটা বেশি ছাড় অবশ্য দেওয়া হয়েছে সরাসরি পোর্টাল থেকে কেনা নতুন বিমার প্রিমিয়ামে। তা মন্দ নয় টোল প্লাজাতে। বলা হয়েছে, ২,০০০ টাকা পর্যন্ত ডিজিটাল লেনদেনে পরিষেবা কর লাগবে না। যা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তা ছাড়া, রাজনৈতিক দলগুলি যে চাঁদা বা ‘ডোনেশন’ নেয়, আগামী দিনে তা-ও অনলাইনে দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হবে বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী। যদিও এ দিন ঘোষিত সমস্ত ছাড় দিতে গিয়ে রাজস্ব কত কমবে, নগদহীন অর্থনীতির দিকে কতটা এগোনো যাবে— এ সব প্রশ্নের উত্তর তিনি দেননি। ঘোষণা করেননি সুবিধাগুলি চালুর নির্দিষ্ট দিনক্ষণ। শুধু বলেছেন যে, সেগুলি চালু হতে বেশি সময় লাগবে না।

বিরোধীদের অভিযোগ, বেগতিক বুঝে মানুষের ভোগান্তি থেকে নজর ঘোরাতে চাইছে মোদী সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ সব নজর সরানোর চেষ্টা। কেন্দ্র সেলসম্যানের কাজ করছে। প্লাস্টিক কার্ড বেচতে শুরু করেছে।’’ রাহুল গাঁধীর অভিযোগ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বারবার গোলপোস্ট (লক্ষ্য) সরিয়ে ফেলছেন। প্রথমে বলেছিলেন, নোট বাতিলে কালো টাকা, জাল নোট, দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসে অর্থসাহায্য মুছে যাবে। কোনওটাই হয়নি। এ বার তিনি ডিজিটাল অর্থনীতির গাওনা গাইছেন।’’ রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের কথায়, ‘‘মূল প্রশ্ন ছিল কবে টাকার জোগান স্বাভাবিক হবে। তার উত্তর মিলল না। এ যেন ‘ক’-এর প্রশ্নে ‘খ’-এর উত্তর।’’

জেটলির অবশ্য দাবি, নোট বাতিলের ঘোষণার পর থেকে ডিজিটাল লেনদেন বাড়ছে হুড়মুড়িয়ে। ফলে আগামী দিনে নগদ লাগবেই কম। তাঁর হিসেব অনুযায়ী, রোজ ১,৮০০ কোটি টাকার পেট্রোল-ডিজেল বিক্রি হয়। এতদিন তার ২০% কার্ডে মেটানো হত। এখন তা বেড়ে ৪০% হয়েছে। এ বার ছাড় ঘোষণার পরে সেই প্রবণতা আরও বাড়বে। শুধু এই খাতেই বছরে নগদের প্রয়োজন কমবে প্রায় ২ লক্ষ কোটির। একই ভাবে, মান্থলি টিকিটে ছাড়ের দৌলতেও নোট কম লাগবে ১০০০ কোটি টাকার।

ডিজিটাল অর্থনীতির দিকে পা বাড়াতে জেটলির এগারো দফা ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে শিল্পমহল। কিন্তু অনেক শিল্পপতিই বলছেন, নাভিশ্বাস উঠেছে ছোট-মাঝারি শিল্পের। কাঁচামালে টান, কর্মীদের মজুরি জোগাতে সমস্যা— সব মিলিয়ে ব্যবসা চালানোই দায়। কাজ হারাচ্ছেন বহু কর্মী।

জেটলি বলেছেন, ৪.৩২ কোটি কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মালিককে ‘রুপে কিষাণ কার্ড’ দেওয়া হবে। যা ব্যবহার করা যাবে এটিএম, মাইক্রো এটিএম, পিওএস মেশিনে। বলেছেন, দশ হাজার পর্যন্ত জনসংখ্যার এক লক্ষ গ্রামে দু’টি করে পিওএস মেশিন বিনামূল্যে দেওয়ার কথা।

অনেকের প্রশ্ন, রবিচাষের এই মরসুমে সার-বীজ কিনতে ও খেতমজুরদের টাকা মেটাতেই কৃষকরা জেরবার। সেখানে হাতে ধরানো এই ডিজিটালের গাজরে তাঁদের পেট ভরবে কী ভাবে?

উত্তর নেই। কালো টাকা ছেড়ে কার্ডকেই এখন পাখির চোখ ঠাওরেছেন জেটলি।

• পেট্রোল পাম্পে ছাড় ০.৭৫%

• রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থায় নতুন বিমা প্রকল্পের প্রিমিয়ামে ছাড় ১০% ও ৮% পর্যন্ত

• ট্রেনের মান্থলি বা মরসুমি টিকিটে কম লাগবে ০.৫%

• অনলাইনে রেলের টিকিট কাটলে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দুর্ঘটনা বিমা বিনামূল্যে

• রেলে খাবার, রিটায়ারিং রুম পরিষেবায় ছাড় ৫%

• কিষাণ ক্রেডিট কার্ড থাকলে মিলবে ‘রুপে কিষাণ কার্ড’

• ২,০০০ টাকা পর্যন্ত লেনদেনে পরিষেবা কর নেই

• জাতীয় সড়কে ফাস্ট ট্যাগ বা আরএফআইডি কার্ডে টোল দিলে ছাড় ১০%

• রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মাইক্রো এটিএম বা পিওএস মেশিনের ভাড়া মাসে ১০০ টাকা

• দশ হাজার পর্যন্ত জনসংখ্যার এক লক্ষ গ্রামে দু’টি করে পিওএস মেশিন বিনামূল্যে

Arun Jaitley
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy