অসুখ সারানোর উদ্যোগ নেই। অজুহাতের পর অজুহাত খাড়া করে ট্রেন লেটের সাফাই গাইছে রেল।
রেল পরিষেবার প্রথম ও প্রধান শর্ত, ঠিক সময়ে ট্রেন চালানো। কিন্তু নড়বড়ে রেল পরিকাঠামোয় সেই শর্ত হোঁচট খাচ্ছে নিত্যদিন। নিরাময় খোঁজার বদলে সেই দেরি-ব্যাধির একটা-না-একটা কারণ খাড়া করে দায় ঝেড়ে ফেলছে রেল। এত দিন লাগাতার ট্রেন লেটের কারণ হিসেবে পরিকাঠামো মেরামতির কাজকর্মের কথা বলছিলেন রেলকর্তারা। এখন তাঁরা বলছেন, এই দেরির পিছনে রয়েছে ঘোরতর কুয়াশার সমস্যা।
কিন্তু কুয়াশার সমস্যা তো নতুন নয়। কয়েক বছর ধরেই উত্তর ভারতের বিরাট অংশ জুড়ে প্রাকৃতিক কুয়াশা আর দূষণজনিত ধোঁয়াশার দাপট চলছে। তাতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের দফারফা হয়ে যাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার যাত্রাপথ পার হতে অনেক সময়ে ৪৮ ঘণ্টাও লাগছে। ফলে প্রতি বছরই এই সময়ে দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। রেলের অন্দরমহলেই প্রশ্ন উঠেছে, কুয়াশার সময়ে কুয়াশা হবে ধরে নিয়ে বিমান পরিবহণ বিভাগ তার মোকাবিলার রাস্তা বার করে ফেলা সত্ত্বেও রেল এখনও সেই প্রযুক্তি আনতে পারল না কেন?
সদুত্তর নেই রেলের কাছে। দেরির দুর্ভোগ ঘাড়ে চেপে বসেছে যাত্রীদের। বেশ কিছু দিন ধরেই রাজধানী থেকে শুরু করে দুরন্ত-সহ সব মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেনই চলছে ন্যূনতম গড়ে এক থেকে দু’ঘণ্টা দেরিতে। বিশেষ করে হাওড়া, শিয়ালদহ থেকে ছাড়া উত্তরের দিকের ট্রেন রোজই দেরির তালিকায় নাম তুলছে। সঙ্গে রয়েছে অসমের দিকের ট্রেনগুলিও। এখন তো দেরি করে চলছে দক্ষিণ ভারত, মুম্বই এবং পুরীর ট্রেনও।
কুয়াশার দাপট এ বার কিছুটা আগেই শুরু হয়েছে। আর রেলও যেন দেরির হাতে-গরম অজুহাত পেয়ে গিয়েছে! তাতে সমস্যার সুরাহার বদলে বাড়তি ও দীর্ঘায়িত ভোগান্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রেলকর্তারা জানাচ্ছেন, কুয়াশায় দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় চালক মাঝপথে ট্রেন থামিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। গত দু’বছর শীত পড়ার আগেই উত্তরের অনেক ট্রেন বাতিল করে লাইনগুলিকে কিছুটা হাল্কা রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছিল। এ বারেও সেই বন্দোবস্ত করছে রেল বোর্ড। বুধবার নির্দেশ এসেছে, ট্রেনের জটে আটকে থেকে বাকি ট্রেনগুলির দেরির দৈর্ঘ্য যাতে না-বাড়ে, সেই জন্য বেশ কিছু ট্রেন সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখতে হবে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী ১ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কিছু সাপ্তাহিক ও দ্বিসাপ্তাহিক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দিনে ২৪টি উত্তরমুখী মেল, এক্সপ্রেস ট্রেন বাতিল করা হচ্ছে। অনেক ট্রেনের যাত্রাপথ পরিবর্তন করে ছোট করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, কুয়াশা না-হয় দিন পনেরো ধরে শুরু হয়েছে। লেটের ব্যামো তো দীর্ঘদিনের। তা হলে হাতে গোনা কয়েকটি ট্রেন সাময়িক ভাবে বাতিল করে অন্য ট্রেনগুলি সময়ে চালানো যাবে তো? যদি যায়, কত দিন সেটা সম্ভব হবে? এটা কি রোগের মূলোচ্ছেদ না-করে জোড়াতালি দেওয়ারই নামান্তর নয়?
রেলকর্তারা শুনছেন কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy