Advertisement
E-Paper

সুপ্রিম কোর্টের এই রায় মুসলিম মহিলাদের জয়

এই খুশিতে সামিল হয়েছেন তাঁদের লড়াইয়ে পাশে থাকা বহু সংবেদনশীল নারী ও পুরুষ। কথায় আছে,'ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়'। তাই সাহবানু মামলার স্মৃতি আনেককে আশ্বস্ত হতে দিচ্ছে না। সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে ৬ মাস সময় দিয়েছে নতুন আইন পাশের জন্য।

রোশেনারা খান

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৭ ১০:১৪
আজ দেশ জুড়ে মুসলিম মহিলারা খুশি উদ্‌যাপন করছেন একে অপরকে মিষ্টিমুখ করিয়ে। ছবি: পিটিআই।

আজ দেশ জুড়ে মুসলিম মহিলারা খুশি উদ্‌যাপন করছেন একে অপরকে মিষ্টিমুখ করিয়ে। ছবি: পিটিআই।

এ দেশের মুসলিম মহিলাদের অভিশপ্ত তিন তালাকের নাগপাশ থেকে মুক্তির ছাড়পত্রে স্বাক্ষর করল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের রায় তাৎক্ষনিক তিন তালাককে অবৈধ ঘোষণা করে তাঁদের জীবনে মুক্তির স্বাদ এনে দিয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে, ভারতের মত গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে যুগ যুগ ধরে মুসলিম মহিলারা ধর্মীয় আইনের পাহারায় ভুল পদ্ধতিতে বিবাহবিচ্ছেদের (তালাক) শিকার হয়ে এসেছে। এর ফলে সামান্য কারণে, কখনও বা কোনও কারণ ছাড়াই কত সাজানো সংসার ভেঙে গিয়েছে। কত মহিলা স্বামী-সংসার হারিয়ে সন্তানদের নিয়ে ভেসে বেড়িয়েছেন। কত অসহায় মা নিজের এবং সন্তানদের প্রাণ বাঁচাতে শরীর বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। কত শিশু তাদের শৈশব এবং একই সঙ্গে তাদের সুস্থ ভাবে বাঁচার অধিকার হারিয়েছে।

আরও পড়ুন

তিন তালাককে তালাক কোর্টের

আজ দেশজুড়ে মুসলিম মহিলারা খুশি উদ্‌যাপন করছেন একে অপরকে মিষ্টিমুখ করিয়ে। এই খুশিতে সামিল হয়েছেন তাঁদের লড়াইয়ে পাশে থাকা বহু সংবেদনশীল নারী ও পুরুষ। কথায় আছে,'ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়'। তাই সাহবানু মামলার স্মৃতি আনেককে আশ্বস্ত হতে দিচ্ছে না। সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে ৬ মাস সময় দিয়েছে নতুন আইন পাশের জন্য। এতে রাজ্য সরকারেরও অনুমোদন লাগবে। সমস্যা এখানেই। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের বিরোধী শুধু মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড বা জামাত-ই-উলেমা হিন্দ এর মতো ধর্মীয় সংগঠনগুলিই নয়,তথাকথিত কিছু শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীও এতে সামিল হয়েছেন। এঁরা কেউ সরকারের তোষণকারী হিসেবে, কেউ সরকার বিরোধী হিসেবে, কেউ বা শুধুমাত্র আন্দোলনকারীদের বিরোধিতা করার জন্য বিরোধিতা করছেন। এঁরা মানবিকতার ধার ধারেন না।

আরও পড়ুন

মত আলাদা ছিল প্রধান বিচারপতিরই

তবে এবার আন্দোলনকারীরাও দমবার পাত্রী নয়। রায় ঘোষণা হবে জেনে অসংখ্য মহিলা সোমবার রাত থেকে যন্তরমন্তর এ ধর্না দিয়েছিলেন। এই রায়ে দেশের সংবেদনশীল প্রতিটি মানুষ আশাবাদী, এ বার এ দেশের মুসলিম মহিলারা সমানাধিকার অর্জন করবেই। কিন্তু বৈষম্য শুধু এক তরফা তাৎক্ষণিক তালাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শরিয়তি বা মুসলিম ব্যক্তিগত আইনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই মহিলারা বৈষম্যের শিকার। তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা মা একা সন্তান প্রতিপালন করলেও তিনি কোনও অবস্থাতেই সন্তানের অভিভাবক হতে পারবেন না। সন্তানের বাবার তরফের কোনও পুরুষ, অর্থাত্ কাকা, জ্যাঠা, ঠাকুরদা বা অন্য কেউ সেই অধিকার পাবেন। অন্য দিকে ঠাকুরদার জীবদ্দশায় কোনও শিশুর বাবা মারা গেলে সেই শিশু ও তার মা ঠাকুরদার সম্পত্তির অংশ পাবেনা। বৈষম্যের এখানেই শেষ নয়। নিজের ভাই বা দাদা না থাকলেও কোনও মেয়ে তার বাবার সম্পূর্ণ সম্পত্তির অধিকার পাবে না। কিছুটা অংশ মেয়েটির খুড়তুতো বা জ্যাঠতুতো ভাই বা দাদারা অথবা বাবার ভাই পাবেন।

এই সমস্ত বৈষম্য দূর হওয়া হয়ত রাতারাতি সম্ভব নয়, তবে অসম্ভবও নয়। কোর্টের এই রায় কার্যকর হলে ধীরে ধীরে সব আগল ভেঙে ফেলা সহজ হবে। হয়ত সে দিন খুব বেশি দূরে নয়! এমনটা আশা করা যেতেই পারে। মানুষ তো আশাতেই বাঁচে। সময় এক দিন নিয়ে আসবে সেই খুশির বার্তা।

(লেখক সমাজকর্মী)

Triple Talaq Supreme Court Muslim Women
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy