E-Paper

মোদী বনাম ‘ইন্ডিয়া’, ভারত ছাড়ো বনাম জিতবে ভারত, লড়াইয়ের মহড়া সংসদের ভিতরে ও বাইরে

সংসদীয় দলের বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নাম নিয়ে কটাক্ষ করার পরে এ বার নরেন্দ্র মোদী রাজস্থানের জনসভায় গিয়েও ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে নিশানা করলেন, মহাত্মা গান্ধীকে উদ্ধৃত করে ‘ভারত ছাড়ো’-র হুঙ্কার দিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৩ ০৭:৫৪
Narendra Modi and Mallikarjun Kharge

(বাঁ দিকে) রাজকোটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। (ডান দিকে) সংসদ চত্বরে কালো পোশাকে মল্লিকার্জুন খড়্গে। ছবি: পিটিআই।

‘মোদী’ বনাম ‘ইন্ডিয়া’। আগামী লোকসভা নির্বাচনে ‘নরেন্দ্র মোদী’ বনাম বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটের লড়াইয়ের মহড়া সংসদের ভিতরে ও বাইরে পুরোদমে শুরু হয়ে গেল।

বৃহস্পতিবার লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিরোধীরা ‘ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া’ বলে স্লোগান তুললেন। পাল্টা জবাবে বিজেপি শিবির ‘মোদী, মোদী’ স্লোগান তুলল। শুধু তা-ই নয়। বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নাম নিয়ে কটাক্ষ করার পরে এ বার নরেন্দ্র মোদী রাজস্থানের জনসভায় গিয়েও ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে নিশানা করলেন, মহাত্মা গান্ধীকে উদ্ধৃত করে ‘ভারত ছাড়ো’-র হুঙ্কার দিলেন। ‘জিতেগা ভারত’ স্লোগানের উত্তরে পাল্টা স্লোগান তুললেন, ‘জিতেগা কমল, খিলেগা কমল।’ এর জবাবে রাহুল গান্ধী থেকে ডেরেক ও’ব্রায়েনের মতো বিরোধী নেতাদের মন্তব্য, মোদী যে ‘ইন্ডিয়া’ জোট নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন, সেটা নিজেই বারবার ‘ইন্ডিয়া’কে আক্রমণ করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন।

বিরোধী শিবির এই নাম নিয়ে বিজেপির জাতীয়তাবাদে ভাগ বসাতে পারে বুঝে মোদী মঙ্গলবারই বলেছিলেন, জঙ্গি সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন’ এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ‘পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া’-র নামেও ‘ইন্ডিয়া’ রয়েছে। ভারত দখলকারী ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নামেও ‘ইন্ডিয়া’ রয়েছে। আজ আবার মোদী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সঙ্গে নিষিদ্ধ সংগঠন ‘সিমি’-র (স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া) তুলনা টেনেছেন। বৃহস্পতিবার থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন, শিলান্যাস করতে দু’দিনের সফরে রাজস্থান-গুজরাতে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই তাঁর বক্তব্য, ১০ মাস আগে তাঁর সরকার ইউএপিএ আইনে যে পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া-কে নিষিদ্ধ করেছে, সিমি তারই পূর্বসূরি। দু’জায়গাতেই ‘ইন্ডিয়া’ নাম রয়েছে বলে জানিয়ে মোদীর মন্তব্য, ‘‘বিরোধী জোটের নামের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে পাপ।’’ ইন্দিরা গান্ধীর আমলে কংগ্রেসের স্লোগান ‘ইন্দিরা ইজ় ইন্ডিয়া’-কেও কটাক্ষ করেন তিনি।

আজ রাজস্থানের শেখাওয়াতি অঞ্চলের সীকরে জনসভায় মোদী বলেন, ‘‘জালিয়াতির দায়ে বদনাম হয়ে যাওয়া কোম্পানি যেমন নাম বদলে ফেলে, তেমনই নানা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ইউপিএ জোট নাম বদলেছে। দুর্নীতি আর প্রতারণার ইতিহাস আড়াল করতেই বদলানো হয়েছে নাম।’’ স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় মহাত্মা গান্ধীর ‘কুইট ইন্ডিয়া’ তথা ‘ভারত ছাড়ো’ স্লোগানকে কাজে লাগিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দুর্নীতি ‘কুইট ইন্ডিয়া’, পরিবারতন্ত্র ‘কুইট ইন্ডিয়া’, তোষণের রাজনীতি ‘কুইট ইন্ডিয়া’। মহাত্মা গান্ধীর ‘কুইট ইন্ডিয়া’ স্লোগানই ভারতকে বাঁচাতে পারে।’’ এর পরেই রাহুল গান্ধীর নাম না করে তাঁকে নিশানা করে মোদী বলেন, ইন্ডিয়া নিয়ে চিন্তা থাকলে বিরোধীরা বিদেশে গিয়ে ভারতের বদনাম করত না। বিদেশি শক্তির সাহায্য চাইত না।

মোদীর বক্তৃতার পরেই দুপুরে বেঙ্গালুরুতে যুব কংগ্রেসের জাতীয় অধিবেশনে রাহুল গান্ধী এর পাল্টা জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধী জোট নিজের সুন্দর নাম বেছেছে। ‘ইন্ডিয়া’ নামটা সকলের হৃদয় থেকে বেরিয়েছে। নাম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’কে নরেন্দ্র মোদী গালি দিতে শুরু করেছেন। উনি এটাও ভাবছেন না যে, তিনি ভারতের মতো পবিত্র শব্দকে গালি দিচ্ছেন। এতই অহঙ্কার, এতই গুমোর।’’ নাম বদল নিয়ে কটাক্ষের জবাবে কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নানেরও প্রশ্ন, বিজেপির নাম কেন কখনও হিন্দু মহাসভা, কখনও জনসঙ্ঘ হয়েছে? গত সপ্তাহে বেঙ্গালুরুতে ২৬টি বিরোধী দলের বৈঠকে ঠিক হয়েছিল বিরোধী জোটের নাম হবে ইন্ডিয়া বা ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়ান্স’।

২৫ ও ২৬ অগস্ট ‘ইন্ডিয়া’ জোট ফের মুম্বইয়ে বৈঠকে বসছে। ‘ইন্ডিয়া’ নামকরণের পিছনে রাহুল গান্ধী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন প্রধান উদ্যোক্তা। সেই নামকরণকে মোদী লাগাতার আক্রমণ করছেন দেখে তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন আজ কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী, আপনি আবার আমাদের নতুন নাম ‘ইন্ডিয়া’, ‘জিতেগা ভারত’ স্লোগানকে আক্রমণ করছেন। কী হল? আপনি এত নেতিবাচক হয়ে পড়লেন কেন? আমরা যা চেয়েছিলাম, আপনি ঠিক সেটাই করছেন। প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে পড়ছেন। আমরা ইন্ডিয়া, জিতেগা ভারতের মন্ত্র ছড়াতে থাকব।’’ মোদীর বক্তৃতার পরে সংসদ চত্বরে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে তোপ দেগে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মণিপুর নিয়ে সংসদে বিবৃতি দিতে রাজি নন। অথচ রাজস্থানে মেডিক্যাল কলেজ উদ্বোধন করতে গিয়েও রাজনীতি করছেন। আমজনতা এখন সচেতন হয়ে গিয়েছে। এ সব করে লাভ হবে না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Anti BJP Alliance BJP NDA Narendra Modi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy