E-Paper

বিরোধী জোটের দুই প্রক্রিয়ায় কংগ্রেস, তৃণমূল

রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ বাতিল হওয়ার পরে অধিবেশন চলাকালীন সমস্ত বিরোধী দলকে আবেগের প্রশ্নে পাশে পেয়েছে কংগ্রেস।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:৫০
Representational image of Congress and TMC.

সদ্য সমাপ্ত বাজেট অধিবেশনের সময়েই মাঠে নেমেছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রতীকী ছবি।

চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী জোট তৈরিতে দুটি ভিন্ন প্রক্রিয়া দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। সূত্রের মতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হবে এই দুই পৃথক প্রয়াসের মধ্যে সমন্বয় তৈরি হবে, নাকি এই দুই প্রক্রিয়া বিপরীত মুখে চলে জাতীয় স্তরে বিজেপি-কে আসলে সুবিধেই করে দেবে।

এক দিকে সদ্য সমাপ্ত বাজেট অধিবেশনের সময়েই মাঠে নেমেছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ বাতিল হওয়ার পরে অধিবেশন চলাকালীন সমস্ত বিরোধী দলকে আবেগের প্রশ্নে পাশে পেয়েছে কংগ্রেস। তাকেই এগিয়ে নিয়ে গিয়ে দিল্লিতে সমস্ত বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠকে বসতে উদ্যোগী মল্লিকার্জুন খড়্গে, কে সি বেণুগোপালরা। সেই বৈঠকের প্রস্তুতি নিতে কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন নীতীশ কুমার, তেজস্বী যাদব, শরদ পওয়ার, উদ্ধব ঠাকরে এবং এম কে স্ট্যালিন।

অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্রীয় বিষয়গুলিকে সামনে রেখে (সামাজিক ন্যায়, রাজ্যের বরাদ্দ টাকার দাবি, রাজ্যপালের অধিকার) বিভিন্ন আঞ্চলিক দল (মূলত যাদের সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও রাজ্যে জোট নেই) নিজেদের মধ্যে ধারাবাহিক ভাবে কথা বলে চলেছে এবং সুযোগ হলে বৈঠকও করছে। তৃণমূল কংগ্রেস এই দ্বিতীয় প্রক্রিয়াতে সক্রিয় ভাবে যুক্ত বলেই দাবি করেছেন দলের নেতৃত্ব। কংগ্রেসের হাতে নেতৃত্বের রাশ গোড়া থেকেই ছাড়তে চায়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। তবে এখন তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, আঞ্চলিক দলগুলির এই প্রক্রিয়ায় কংগ্রেস যদি যুক্ত হতে চায় তবে তারা অবশ্যই স্বাগত। কিন্তু কংগ্রেস নেতা খড়্গের ডাকা দিল্লির কোনও বিরোধী বৈঠকে যোগ দিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৌড়নোর কোনও প্রশ্ন নেই। সনিয়া গান্ধী নিজে বললে, অন্য কথা। নচেৎ আগের মতোই খড়্গের ডাকা বৈঠকে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বা জহর সরকারকে পাঠানো হতে পারে।

অন্য দিকে স্ট্যালিন সম্প্রতি অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি লিখে আবেদন জানিয়েছিলেন, বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলে রাজ্যপাল যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুমোদন দেন, তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করানো হোক। বুধবার মমতা স্ট্যালিনকে ফোন করে এ বিষয়ে নিজের সমর্থন জানিয়েছেন।

শুধু তা-ই নয়। স্ট্যালিন জানিয়েছেন, মমতা তাঁকে পরামর্শ দিয়েছেন এ বিষয়ে সমস্ত বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডাকার। অ-বিজেপি রাজ্যগুলিতে রাজ্যপালেরা যে অগণতান্ত্রিক কাজ করছেন, তার বিরুদ্ধে উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন মমতা। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, এই উদ্যোগে কংগ্রেস নেতৃত্ব দিচ্ছে না। থাকবে সমস্ত আঞ্চলিক দল। আপ বা বিআরএস-র মতো দল তৃণমূলের সঙ্গে সমন্বয় করতে বেশি স্বচ্ছন্দ কারণ তারা বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেসের প্রবল প্রতিপক্ষও বটে। স্ট্যালিন তার শরিক দল কংগ্রেসকে ডাকলেও কোনও আপত্তি নেই।

অন্য দিকে কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও জোটের প্রশ্নে কিছুটা নমনীয় অবস্থান দেখা গিয়েছে। এআইসিসি-র জনসংযোগ বিভাগের চেয়ারম্যান পবন খেরা আজ জানিয়েছেন, “নরেন্দ্র মোদী সরকার রাজ্যপালের গরিমাময় পদটিকে এমন জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে যে তাঁরা বিজেপি-র এজেন্ট হয়ে কাজ করছেন। রাজ্যপালকে হাতের পুতুলের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। পছন্দ না হলে যখন তখন সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সব বিরোধী দলেরই এটা সমস্যা।” জোট প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি জানান, “জোট কোনও সুইচ নয় যে অন করলাম ফের অফ করলাম। এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তার কোনও সমসয়সীমা থাকে না। অনেকে অনেক রকম প্রশ্ন তুলবেন, তার সমাধান হবে। সব মিলিয়ে একটি সাধারণ মঞ্চ তৈরি হয়। আমাদের দেশে আগে জোট সরকার দেখেছি। অতীতে সবচেয়ে ভাল কাজ করেছে ইউপিএ-র জোট সরকার।”

কংগ্রেস নেতার কথায়, ‘‘জোটের সামনে কখনও লাল কখনও সবুজ বাতি জ্বলে। কিন্তু লাল বাতি স্থায়ী হয় না। ফলে যদি আজ জোট নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেন বা মতামত দেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। ভিন্ন মতও জরুরি, তার মাধ্যমেই গণতন্ত্র মজবুত থাকে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Congress TMC BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy