Advertisement
E-Paper

একা লড়ে জওয়ানদের বাঁচিয়েছিলেন রকি

নিজের এ কে ৪৭-এর সব ক’টা বুলেট শেষ করে থেমেছিলেন রকি। গত কাল উধমপুরে জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কে বিএসএফের এই জওয়ান পাক জঙ্গিদের মুখোমুখি হয়ে যে ভাবে লড়েছিলেন, তাতে মুগ্ধ তাঁর সতীর্থরা। প্রত্যেকে এক বাক্যে মেনে নিয়েছেন, রকি না থাকলে গোটা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হত।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৫ ০২:৪৬

নিজের এ কে ৪৭-এর সব ক’টা বুলেট শেষ করে থেমেছিলেন রকি। গত কাল উধমপুরে জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কে বিএসএফের এই জওয়ান পাক জঙ্গিদের মুখোমুখি হয়ে যে ভাবে লড়েছিলেন, তাতে মুগ্ধ তাঁর সতীর্থরা। প্রত্যেকে এক বাক্যে মেনে নিয়েছেন, রকি না থাকলে গোটা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হত।

আজ এক সাংবাদিক বৈঠকে বিএসএফের ডিজি ডি কে পাঠক গত কালের হামলায় নিহত দুই জওয়ান শুভেন্দু রায় এবং রকির সাহসিকতার অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন। পাঠকের বক্তব্য থেকে জানা গিয়েছে, কী ভাবে গত কাল বিএসএফের ৪৪ জন নিরস্ত্র অফিসারকে রক্ষা করেছিলেন রকি এবং শুভেন্দু।

বিএসএফের দাবি, কাল জঙ্গি হামলা হতে পারে এমন আগাম খবর তাদের কাছে ছিল না। তা ছাড়া, গত কাল উধমপুরের যে অংশে হামলা হয়, তাকে নিরাপদ বলেই মনে করতেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। বিএসএফ ডিজি বলেন, ‘‘ওই এলাকায় গত কুড়ি বছরে কোনও হামলা হয়নি। ফলে সেই অর্থে আগাম সতর্কতাও ছিল না।’’ গত কালের ঘটনায় স্পষ্ট, পাক জঙ্গিরা এখন হামলা চালানোর জন্য নতুন এলাকা বেছে নিচ্ছে। গত মাসে পঞ্জাবের গুরদাসপুরেও সেই কারণেই হামলা চালায় তারা। আপাতত জঙ্গিদের এই নতুন মডিউলটি সম্পর্কে তথ্য জোগাড়েই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

ডিজি জানিয়েছেন, কনভয়ে থাকা ৪৪ জন বাড়ি ফিরছিলেন। রকি ছাড়া অস্ত্র ছিল না কারও কাছে। রকি-শুভেন্দুদের বাসটি কোনও ভাবে কনভয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাতে সুবিধে হয়েছিল দুই পাক জঙ্গি নাভেদ এবং নোমানের। বিএসএফের ওই বাসটিকে মাঝপথে আটকে দেয় এক জঙ্গি। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাস লক্ষ্য করে গুলি চালানো শুরু করে সে। চালকের আসনে ছিলেন শুভেন্দু। প্রথম গুলি লাগে তাঁরই। সে দৃশ্য দেখেই সক্রিয় হয়ে ওঠেন রকি। শুভেন্দু জখম হওয়ায় বাসও তত ক্ষণে নীচের দিকে গড়াতে শুরু করে। এই সময় বাসের টায়ারে গুলি করে জঙ্গিরা। তার পরেই তারা বাসের দরজা খোলার চেষ্টা করে। রকি একা লড়ে যান এই সময়েই। তাঁর জন্যই বাসে ঢুকতে পারেনি জঙ্গিরা। ঢুকলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ত বলে দাবি বিসিএফ ডিজি-র।

নাভেদ এবং নোমেন এতটাই প্রশিক্ষিত যে এক হাতে এ কে ৪৭ থেকে গুলি বর্ষণ করতে করতেই অন্য হাতে গ্রেনেড ছুড়ছিল তারা। তবে রকির পাল্টা জবাবে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে নোমেন। আর রকির চেষ্টাতেই বাসের আশপাশে গ্রেনেড ছুড়লেও বাসের ভিতরে গ্রেনেড ছুড়তে পারেনি জঙ্গিরা।

ডিজি-র কথায়, এই ভাবে মিনিট কুড়ি জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে নোমেনকে মারতে সমর্থ হন রকি। অন্য জঙ্গি নাভেদ তখন জঙ্গলঘেরা এলাকা দিয়ে পালানোর পথে। কিন্তু গুলির লড়াইয়ে রেহাই পাননি ২৫ বছরের ওই জওয়ান। সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বিবৃতি দিয়ে তাই বলেছেন, ‘‘রকি এবং শুভেন্দু শুধু জঙ্গিদের বাধাই দেননি। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে গিয়েছেন।’’

পাকিস্তান যদিও ধৃত জঙ্গি নাভেদকে সেখানকার নাগরিক বলতেই নারাজ। সে দেশের বিদেশ দফতরের মুখপাত্র সৈয়দ কাজী খলিলুল্লা পাক সংবাদপত্রে দাবি করেছেন, ভারতের দাবি ভিত্তিহীন এবং হাস্যকর। নাভেদ পাক নাগরিক নয়। তাদের কাছে ছেলেটির সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই। ভারতের মাটিতে পাকিস্তানের কেউই সন্ত্রাস চালিয়েছে এমন প্রমাণ জোগাড় করে দেখাক ভারত। তা ছাড়া সন্ত্রাস-প্রশ্নে ভারতের তরফে সহযোগিতামূলক আবহ আশা করে পাকিস্তান। আজ আবার নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় প্রাণ হারিয়েছে এক সন্দেহভাজন লস্কর জঙ্গি।

ইসলামাবাদ স্বীকার না করলেও সেই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জঙ্গি নাভেদের বাবা মহম্মদ ইয়াকুবের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে বলে আজ দাবি করেছে ভারতেরই একটি দৈনিক। তাদের বক্তব্য, ইয়াকুব বলেছেন তিনিই নাভেদের হতভাগ্য বাবা। তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা ভারত থেকে ফোন করছেন। আমরা মরে যাব। লস্কর আর সেনা— দু’ই-ই আমাদের পিছনে।’’ বাবা জানাচ্ছেন, ‘‘লস্কর চেয়েছিল ও মরে .যাক। কখনও চায়নি এ ভাবে জীবন্ত ধরা পড়ুক। ওকে ছেড়ে দিন।’’

ইতিমধ্যেই কাশ্মীর পুলিশের হাত থেকে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে। কাশ্মীর পুলিশের দাবি, গত কাল ধৃত জঙ্গিরা পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের সমর্থনপুষ্ট। এনআইএ আবার ধৃত জঙ্গি মহম্মদ নাভেদ ইয়াকুবকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জেনেছে, লস্কর ই তইবা-র দু’টি মডিউলে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল এই ছেলেটিকে। মুখে আপাত সারল্য আর উত্তর দিতে দিতে উদ্দাম হাসি-ঠাট্টা। এ ভাবেই আজ অন্তত বার তিনেক গোয়েন্দাদের বিপথে চালানোর চেষ্টা করেছে নাভেদ। যার মানসিক কাঠিন্য ও স্নায়ুর নিয়ন্ত্রণ চমকে দিয়েছে গোয়েন্দাদের। তাঁদের বক্তব্য, অস্ত্র চালানো ছাড়াও ওই জঙ্গিকে সম্পূর্ণ ভাবে মগজধোলাই করেই ভারতে পাঠিয়েছে লস্কর ই তইবা।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, নাভেদ ও তাঁর তিন সঙ্গী পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফফ্‌রাবাদ দিয়ে কাশ্মীরে ঢুকেছিল। অন্য একটি সূত্রে দাবি, গত এক মাস ধরে কাশ্মীরে রয়েছে সে। গত মঙ্গলবার একটি লরি ধরে কাশ্মীর থেকে উধমপুর আসে নাভেদ ও তাঁর সঙ্গী নোমান। নাভেদ যে যে জায়গার নাম করেছে, সে সব জায়গাতেই তাকে নিয়ে যাওয়ার কথা ভেবেছে এনআইএ। নাভেদ পরিকল্পিত ভাবেই নিজের বয়স ১৬ বছর বলে দাবি করছে— জানাচ্ছেন এনআইএ অফিসাররা। গোয়েন্দাদের অনুমান, সম্ভবত লস্কর ই তইবা প্রশিক্ষণে এ কথা বলতে শিখিয়ে দিয়েছে। যাতে ভারতের মাটিতে ধরা পড়লে কিশোর অপরাধী হিসাবে তার শাস্তি কম হয়।

আজ সর্বত্র নিহত দুই জওয়ানের প্রশংসা হলেও হরিয়ানায় বিএসএফ জওয়ান রকির বাড়িতে শোকের ছায়া। এখানকার যমুনানগর জেলার রামগড় মাজরা গ্রামের ছেলে বাড়ি ফিরবে না— খবর মেলার পর থেকেই স্তব্ধ গোটা গ্রাম। রকির বাবা প্রীতপল বলছেন, ‘‘গর্ব হচ্ছে। কিন্তু ওর এই পরিণতি হবে ভাবিনি।’’ মাত্র আড়াই বছর হয়েছে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। রকির ভাই রোহিতও জওয়ান হওয়ার কথাই ভাবেন। দাদার মতো পরিণতি হয় যদি? তাতেও পিছপা হতে নারাজ এই তরুণ।

Udhampur attack BSF Kashmir Pakistan Jammu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy