ফাইল চিত্র
করোনার তৃতীয় ঢেউ ফিকে হওয়ার পরে আর্থিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা গতি আসায় দেশে বেকারত্বের জ্বালা ধীরে ধীরে কমবে বলে আশা ছিল। অস্বস্তি বাড়িয়ে উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র পরিসংখ্যান জানাল, গত রবিবার (১৭ এপ্রিল) শেষ হওয়া সপ্তাহে শহারাঞ্চলে সেই হার তার আগের সপ্তাহের থেকে বেড়ে ফের ১০ শতাংশের মুখে পৌঁছেছে। বেকারত্ব বেড়েছে গ্রামাঞ্চলেও। ফলে দেশে সার্বিক ভাবে তা ৮.৪৩%। ১০ এপ্রিল শেষ হওয়া সপ্তাহে যা ৭.৩৬% ছিল।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, অর্থনীতির এগোনোর পথ আটকেছে মূল্যবৃদ্ধির হার। জিনিসপত্রের দাম দেখে আমজনতার পাশাপাশি প্রমাদ গুনছে শিল্পও। একে তো এতে সার্বিক চাহিদা কমছে। তার উপরে খরচে রাশ টানতে বহু সংস্থা উৎপাদন এবং পরিষেবায় কাটছাঁট করছে। ফলে কোথাও থমকে গিয়েছে কর্মী নিয়োগ, কোথাও চলছে ছাঁটাই। অথচ কাজের বাজারে ভিড় বেড়েছে। শ্রম-অর্থনীতিবিদ তথা এক্সএলআরআইয়ের শিক্ষক কে আর শ্যাম সুন্দর, পটনা আইআইটি-র অর্থনীতির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামানিক এবং আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্ত— তিন জনই সাপ্তাহিক বেকারত্ব বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করছেন বেলাগাম মূল্যবৃদ্ধিকে।
শ্যাম সুন্দরের বক্তব্য, এক দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চিনে ফের কোভিড সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তে পণ্যের বিপর্যস্ত জোগান। অন্য দিকে জ্বালানি ও কাঁচামালের চড়া দাম। এর ফলে মূলত শহরাঞ্চলে বহু সংস্থা উৎপাদন বা পরিষেবার পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না। প্রকল্পের গতি ধীর হচ্ছে। কিন্তু জ্বালানি বা কাঁচামালের খরচে নিয়ন্ত্রণের উপায় কম থাকায়, কর্মীদের খরচে রাশ টানছে। হয় ছাঁটাই হচ্ছে কিংবা নিয়োগ বন্ধ। ফলে বেকারত্ব মাথাচাড়া দিচ্ছে। তাঁর মতে, গ্রামাঞ্চলের কর্মসংস্থানেও কোপ ফেলছে জ্বালানির দর। উৎপাদন শুল্ক ছেঁটে কেন্দ্র তেলের দাম কমানোর ব্যবস্থা করলে কিছুটা সুরাহা হত। তবে তাঁর দাবি, ‘‘সম্প্রতি সরকার গ্রামীণ এলাকায় ১০০ দিনের কাজের বরাদ্দ অর্থ মঞ্জুর করায় সেখানে বেকারত্ব কিছুটা কমতে পারে।’’
অনির্বাণ বলছেন, ‘‘পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জেরে চাহিদা কমলে উৎপাদন কমায় সংস্থাগুলি। খরচ কমাতে প্রথম কোপ পড়ে কর্মী সংখ্যায়। সম্ভবত সেটাই শুরু হয়েছে।’’ তবে তাঁর দাবি, কারণ আরও কিছু আছে। যেমন, যুদ্ধের জেরে ভারতে আমদানি-রফতানি কমেছে। প্রচুর বন্দর কর্মী কাজ হারাচ্ছেন। ইস্পাতের দাম বাড়ায় নির্মাণ কাজে ভাটা পড়েছে। সেখানে ছাঁটাই চলছে বা লোক নেওয়া হচ্ছে না। রাজেন্দ্র পরামানিকের দাবি, ‘‘চড়া মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশেষত অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ হারানোর হার বেড়েছে বেশি।’’ তাঁর আশঙ্কা, দামে অবিলম্বে লাগাম পরাতে না পারলে অবস্থা আরও জটিল হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy