এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিপর্যয়ের ঘটনায় বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলির একাংশে ‘পাইলটের ত্রুটি’র দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। ওই তত্ত্ব ফের উড়িয়ে দিল নয়াদিল্লি। সঙ্গে এ-ও স্পষ্ট করে দিল, এই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের নেপথ্যে ওই সংবাদমাধ্যমগুলির নিজস্ব স্বার্থ থাকতে পারে।
কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী রামমোহন নায়ডু রবিবার জানান, ভারতীয় তদন্তকারী সংস্থা ‘এয়ার অ্যাক্সিডেন্ট্স ইনভেস্টিগেশন ব্রাঞ্চ’ (এএআইবি)-এর উপর তাঁর পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, “আমি এএআইবিকে বিশ্বাস করি। এএআইবি যে কাজ করছে, তার উপর আমার ভরসা রয়েছে। ডেটা উদ্ধারে তারা দারুণ কাজ করেছে। এটি একটি বড় সাফল্য।” এর পরেই ‘পাইলটের ত্রুটি’র দিকে ইঙ্গিত করার জন্য নাম না করে সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ এবং সংবাদ সংস্থা ‘রয়টার্স’-কে নিশানা করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। নায়ডু বলেন, “এএআইবি সকলের কাছে আবেদন করেছে। বিশেষ করে পশ্চিমি দেশগুলির সংবাদমাধ্যমের কাছে, যারা হয়ত নিজস্ব স্বার্থের কারণে এই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের চেষ্টা করছে।”
এএআইবি-র তরফে এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনা নিয়ে প্রাথমিক একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়া এখনও বাকি। চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশের আগে কোনও রকম ভিত্তিহীন তত্ত্ব না ছড়ানোর জন্যও সতর্ক করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, “চূড়ান্ত রিপোর্ট পাওয়ার আগে কোনও মন্তব্য করা কারও পক্ষেই ভাল নয়। আমরা সতর্ক আছি। ঘটনা এবং তদন্তের বিষয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।” চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশের আগে কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কাম্য নয় বলেই মনে করছেন তিনি। নায়ডু বলেন, “রিপোর্টে যা বলা হচ্ছে সেটিই মেনে চলুন। রিপোর্টে যা বলা হচ্ছে, সেটিই সঠিক। প্রাথমিক রিপোর্ট ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে। তাঁদের (এএআইবি) আরও সময় প্রয়োজন। অনেক তথ্য নিশ্চিত করতে হবে। তাঁদের আরও সময় দিতে হবে।”
এএআইবির প্রাথমিক রিপোর্টে ‘পাইলটদের ত্রুটি’ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে রিপোর্টে ককপিটের কথোপকথনের একটি অংশ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে এক জন পাইলট অন্য জনকে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘‘কেন তুমি জ্বালানির সুইচটা বন্ধ করে দিলে?’’ অন্য জন তার উত্তরে বলছেন, ‘‘আমি কিছু বন্ধ করিনি।’’ তবে কোন পাইলট কাকে এই প্রশ্ন করছেন, তা স্পষ্ট নয় ওই রিপোর্টে।
অহমদাবাদের দুর্ঘটনায় পৃথক ভাবে তদন্ত চালাচ্ছে আমেরিকার সরকারি সংস্থাও ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি)। দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত যে তথ্যপ্রমাণ মার্কিন আধিকারিকেরা খতিয়ে দেখেছেন, সে বিষয়ে ওয়াকিবহালদের উল্লেখ করে নতুন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’। তাতে বলা হয়েছে, ‘ফার্স্ট অফিসার বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানটি চালাচ্ছিলেন। রানওয়ে ছাড়ার পরেই তিনি অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেনকে প্রশ্ন করেন, ‘‘কেন তুমি জ্বালানির সুইচ বন্ধ করে দিলে?’’ ফার্স্ট অফিসার অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তার পর প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান। কিন্তু ক্যাপ্টেন তখনও খুব শান্ত হয়ে ছিলেন। এই তত্ত্বকে আগেই ‘একতরফা’ বলে দাগিয়ে দিয়েছে ভারতের অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক। এ বার সে বিষয়ে ফের মন্তব্য করলেন অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী।
আরও পড়ুন:
আমেরিকার তদন্তকারী সংস্থাও ইতিমধ্যে ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর প্রতিবেদনের দায় নিতে অস্বীকার করেছে। এই সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলিকে ‘অনুমানমূলক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এনটিএসবি চেয়ারপার্সন জেনিফার হোমেন্ডি। তাঁর দাবি, বিমান দুর্ঘটনা সম্পর্কিত সংবাদমাধ্যমের সাম্প্রতিক রিপোর্টগুলি বেশির ভাগই অনুমানের উপর দাঁড়িয়ে লেখা হয়েছে। তা ছাড়া, এগুলি অসম্পূর্ণ। জেনিফারের কথায়, ‘‘এত বড় মাপের কোনও দুর্ঘটনার তদন্তে সময় লাগে।’’ ফলে অনুমানের উপর ভিত্তি করে এত তাড়াতাড়ি কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছোনো ঠিক নয়।