সেনাবাহিনীর পরীক্ষা দিতে রাঁচিতে দাউদ। নিজস্ব চিত্র
মাত্র কয়েক দিন আগেই বাড়িতে এসেছিল দাদার কফিন-বন্দি দেহ। এখনও মা মাঝে মধ্যেই দাদার কথা ভেবে কান্নায় ডুকরে উঠছেন। বৌদি বড়ই চুপচাপ। বাড়ির এই শোকাবহ পরিবেশের মধ্যেই জাবরা মুণ্ডার ভাই দাউদ মুণ্ডা চলে এসেছেন রাঁচিতে। সেনাবাহিনীর নিয়োগের পরীক্ষা দিতে। আজ সকালে রাঁচিতে বছর উনিশের সদ্য তরুণ দাউদ বলে, ‘‘দাদার শহিদ হওয়াতে ভয় পাইনি। বরং গর্বিত। দাদা আমাকেও সব সময় সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে উৎসাহিত করত।’’ খানিকটা সেই স্বপ্ন পূরণ করতে, আর খানিকটা পেটের দায়েই সে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে এসেছে। জানে না পরীক্ষায় পাশ করে সেই সুযোগ পাবে কিনা!
মা সালমি দেবী দাউদের রাঁচি আসায় আপত্তিই করেছিলেন। তাঁর দুই ছেলে। বড় ছেলে উরিতে জঙ্গি হানায় মারা গেলেন। ছোটটারও এ রকম কোনও পরিনতি হবে না তো?এই আশঙ্কাই গ্রাস করেছে সালমি দেবীকে। রাঁচি যেতে বারণ করেছিলেন বৌদি জাঙি দেবীও। কিন্তু মা-বৌদিকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে দাউদ চলে এসেছে রাঁচির মোরাবাদি ময়দানে। তার কথায়, ‘‘মা, বৌদি, আত্মীয়-পরিজনরা বলেছিল, দাদার মৃত্যুর পরে সরকার থেকে যে টাকা পাওয়া গিয়েছে তার কিছু দিয়ে খুঁটিতে একটা দোকান খুলতে। আমি রাজি হইনি।’’
সদ্য দাদার শেষকৃত্য করেছে। মাথা ন্যাড়া। চুল গজানোরও সময় পায়নি। এই অবস্থাতেই কাঁধে একটা ব্যাগ নিয়ে খুঁটি থেকে সটান রাঁচি চলে এসেছে সে। দাউদ জানায়, মোরাবাদি ময়দানের গাছের তলায় শুয়েই গত রাত কেটেছে। সঙ্গে আরও বন্ধু রয়েছে। তারাও পরীক্ষা দিতে এসেছে। আজ তাঁর দৌড় পরীক্ষা। পাঁচ মিনিটে ১৬০০ মিটার দৌড়তে হবে। এই পরীক্ষায় পাশ করলে তার পর পরের রাউন্ডে যেতে পারবে সে। তবে এই দৌড়টা এতটাই কঠিন যে বেশির ভাগ পরীক্ষার্থীই প্রথম রাউন্ডের বাধা টপকাতে পারে না। দাউদ বলেন, ‘‘এক একবার এক সঙ্গে ২০০ জনের মতো দৌড়য়। ১৬০০ মিটার মানে একটা ফুটবল মাঠের চার পাক। পাঁচ মিনিটে চারপাক দৌড়নো খুব কঠিন। কিন্তু এই কঠিন পরীক্ষায় পাশ করেই তো দাদা সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। তাহলে আমি কেন পারব না?’’
গত কয়েক দিন ধরেই রাঁচির মোরাবাদি ময়দানে চলছে সেনাবাহিনীর নিয়োগের পরীক্ষা। ঝাড়খণ্ডের সবকটি জেলা থেকে কয়েক হাজার তরুণ এই পরীক্ষা দিতে আসছে। দাউদ বলেন, ‘‘শুধু দাদার স্বপ্ন পূরণ করাই নয়, আমার ওপরই তো এখন পুরো পরিবারের দায়িত্ব। খুবই গরিব আমরা।’’ শহিদের ভাই সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারলে কিছুটা হলেও স্বচ্ছলতার মুখ দেখবে পরিবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy