Advertisement
E-Paper

চার ধাম প্রকল্প নিয়েও উঠল প্রশ্ন

বিশেষত পরিবেশকে অগ্রাহ্য করে উত্তরাখণ্ডে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও পাহাড় ফাটিয়ে সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে তা আরও বড় বিপদ ডেকে আনতে চলেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৭:৩১
জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ। ছবি: টুইটার থেকে

জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ। ছবি: টুইটার থেকে

এখনই সতর্ক না হলে আরও অনেক বিপর্যয় উত্তরাখণ্ডের জন্য অপেক্ষা করে আছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। বিশেষত পরিবেশকে অগ্রাহ্য করে উত্তরাখণ্ডে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও পাহাড় ফাটিয়ে সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে তা আরও বড় বিপদ ডেকে আনতে চলেছে।

রেনি গ্রামে গাছ তথা পরিবেশ বাঁচাতে তিন দশক আগে চিপকো আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। গত কাল সেই এলাকাতেই বিপর্যয় নেমে আসে। দ্য এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউট (টেরি)-এর আর্থ সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেটিক চেঞ্জ শাখার গবেষক সুরুচি ভাদল জানান, গত কালের ঘটনার জন্য পরোক্ষ কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। গত কয়েক দশক ধরে উষ্ণায়নের হার বেড়ে যাওয়ায় হিমবাহ দ্রুত গলে যাচ্ছে। উষ্ণায়নের কারণে শীতে যতটা তুষারপাত হওয়ার কথা ততটা হচ্ছে না। ফলে হিমবাহের চওড়া চাদর গলে যাচ্ছে বা তাতে ফাটল ধরছে। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, গত কাল নন্দাদেবী হিমবাহের বড় অংশ ধৌলিগঙ্গায় পড়লে প্লাবন হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীর দুই মেরু বাদে সবচেয়ে বেশি বরফ ও হিমবাহের উপস্থিতি রয়েছে হিমালয়ে। সেই কারণে একে ‘থার্ড পোল’-ও বলা হয়ে থাকে। যা এক দিকে এশিয়ার অন্যতম বড় নদীগুলির উৎসস্থল আবার এই উপমহাদেশ-সহ কার্যত এশিয়ার বড় অংশের জলবায়ু নিয়ন্ত্রকও বটে। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, উষ্ণায়নের এই হার বজায় থাকলে ২১০০ সালের মধ্যে উত্তরাখণ্ড ৭০-৯৯ শতাংশ হিমবাহ হারিয়ে ফেলতে চলেছে। সুরুচির কথায়, “হিমবাহের গতিবিধি নজর রাখার জন্য নির্দিষ্ট কর্মসূচি প্রয়োজন। হিমবাহগুলি কতটা গলছে, বা গলে গিয়ে কোনও জলাশয় সৃষ্টি করছে কি না তার নির্দিষ্ট সময়ান্তরে দেখার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কারণ, পৃথিবীর তাপমাত্রা যত বাড়বে তত এই সমস্যা দেখা যাবে।’’

তবে এই বিপর্যয়ের পিছনে পরোক্ষ কারণ হিসেবে নদীর স্বাভাবিক জলস্রোতকে আটকে বাঁধ নির্মাণ, অনিয়ন্ত্রিত বৃক্ষচ্ছেদন, পর্যটনকে উৎসাহ দিতে গিয়ে অবৈজ্ঞানিক ভাবে নগরায়ণ, পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণকেও দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সুরুচি বলেন, “উত্তরাখণ্ডের ওই অংশে হিমালয় নিজের গঠনকার্য চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে হিমালয়ে পরিবর্তন ঘটছে। তাই ওই এলাকায় বড় নির্মাণকার্য যথেষ্ট বিপজ্জনক।’’ গত কালের ঘটনার পরে ফের প্রশ্ন উঠেছে মোদী সরকারের চার ধাম সড়ক প্রকল্প ঘিরে।

হিন্দুদের চার তীর্থকে যুক্ত করা, পর্যটনকে উৎসাহ দিতে ৯০০ কিলোমিটার সড়কের ওই প্রকল্পে প্রায় পঞ্চাশ হাজার গাছ কাটা পড়তে চলেছে। যা হিমালয়ের বাস্তুতন্ত্রকে কার্যত শেষ করে দেবে বলেই অভিযোগ। সুপ্রিম কোর্টের গঠিত তদন্ত কমিটির ভূতত্ত্ববিদেরা রিপোর্টে জানিয়েছেন, নির্মাণকারী সংস্থা নিয়ম না মেনে পাহাড় ভেঙে রাস্তা তৈরির কাজ করছে। জিয়োলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়াও রিপোর্টে স্বীকার করেছে, ধসপ্রবণ এলাকাগুলিতে সুরক্ষাবিধি অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। রাস্তা তৈরির জন্য বিস্ফোরণের পর ধ্বংসাবশেষ না সরানোয় তা পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নদীতে পড়ে নদীর গতিপথ পাল্টে দিতে শুরু করেছে। এর ফলে যে এলাকাগুলিতে কোনও দিন ধস নামেনি, সেখানে ধস নামছে। প্রসঙ্গত, বিশেষজ্ঞদের আপত্তি সত্ত্বেও, ওই প্রকল্পে সম্মতি দিয়েছিল কেন্দ্র।

flood Uttarakhand
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy