জ্ঞানবাপী মসজিদের সেই বিতর্কিত এলাকা। — ফাইল চিত্র।
জ্ঞানবাপী মসজিদে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া বা এএসআই)-কে সমীক্ষার ছাড়পত্র বহাল রাখল বারাণসী জেলা আদালত। মসজিদ চত্বরে চলা সমীক্ষা বন্ধ করার জন্য ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া (জ্ঞানবাপী) মসজিদ কমিটি’র তরফে যে আবেদন জানানো হয়েছিল, শুক্রবার জেলা বিচারক অজয়কুমার বিশ্বেস তা খারিজ করে দিয়েছেন। তবে বিতর্কিত ওজুখানায় পাওয়া তথাকথিত ‘শিবলিঙ্গ’ এবং সন্নিহিত এলাকায় এখনই কোনও সমীক্ষা হবে না বলে বারাণসী জেলা আদালত গত ২১ জুলাই যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা বহাল রেখেছেন তিনি। বিচারক জানিয়েছেন, এ বিষয়ে হিন্দুপক্ষের আবেদনের শুনানি হবে আগামী ৫ অক্টোবর।
বিচাকর অজয় জানিয়েছেন, ইলাহাবাদ হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই এএসআই-কে খননে প্রাপ্ত নমুনাগুলির কার্বন ডেটিং-সহ অন্য পরীক্ষার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাই বারাণসী জেলা আদালতের বিচারক অজয়কুমার বিশ্বেস জ্ঞানবাপী চত্বরে ‘বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার’ নির্দেশ দিয়েছিলেন এএসআই-কে। তবে বিতর্কিত ওজুখানায় পাওয়া তথাকথিত ‘শিবলিঙ্গ’ এবং সন্নিহিত ‘সিল’ করা এলাকায় এখনই কোনও সমীক্ষা হবে না বলে বারাণসী জেলা আদালত জানিয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে ইলাহাবাদ হাই কোর্ট মসজিদ কমিটির আবেদন মেনে এএসআই সমীক্ষার উপর স্থগিতাদেশ দিলেও গত ৩ অগস্ট প্রধান বিচারপতি প্রীতিনকর দিবাকরের বেঞ্চ তা প্রত্যাহার করে নেয়। ৪ অগস্ট থেকে শুরু হয় সমীক্ষা। এর পর স্থগিতাদেশ চেয়ে মুসলিম পক্ষের আবেদন খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্টও। শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বারাণসী জেলা আদালতের তত্ত্বাবধানে সমীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়।
মসজিদ চত্বরে ‘হিন্দুত্বের প্রমাণ’ খোঁজার জন্য হিন্দুপক্ষের আবেদন মেনেই ওই সমীক্ষা চলছে। ইতিমধ্যে তার মেয়াদও বেড়েছে আদালতের নির্দেশে। প্রসঙ্গত, জ্ঞানবাপী মসজিদ কমিটির তরফে পাঁচ হিন্দু মহিলার ২০২১ সালের পূজার্চনার আর্জি খারিজ করার জন্য বারাণসী জেলা আদালতে আবেদন জানানো হয়েছিল। মসজিদ কমিটির আইনজীবী অভয় নাথ বারাণসী জেলা আদালতে জানিয়েছিলেন, ১৯৯১ সালের ধর্মীয় উপাসনাস্থল রক্ষা (বিশেষ ব্যবস্থা) আইন এবং ১৯৯৫ সালের সেন্ট্রাল ওয়াকফ আইন অনুযায়ী, এ সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি হতে পারে না। অন্য দিকে, হিন্দু পক্ষের আইনজীবী বিষ্ণু জৈন এবং হরিশঙ্কর জৈনের দাবি ছিল, ১৯৯১ সালের ওই আইন জ্ঞানবাপীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তিনি জানান, ১৯৪৭ সালের পরেও শৃঙ্গার গৌরীস্থলে পূজার্চনার প্রমাণ রয়েছে। বিচারক বিশ্বেস মুসলিম পক্ষের যুক্তি খারিজ করে দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘১৯৯১ সালের ধর্মীয় উপাসনাস্থল রক্ষা (বিশেষ ব্যবস্থা) আইন অনুযায়ী ধর্মস্থানের চরিত্র বদল করা যায় না। কিন্তু ওই আইনে কোথাও বলা নেই, ধর্মস্থানের প্রকৃত চরিত্র নির্ধারণ করা যাবে না।’’
২০২১ সালের অগস্টে পাঁচ হিন্দু মহিলা জ্ঞানবাপীর ‘মা শৃঙ্গার গৌরী’ (ওজুখানা ও তহখানা) এবং মসজিদের অন্দরের পশ্চিমের দেওয়ালে দেবদেবীর মূর্তির অস্তিত্বের দাবি করে তা পূজার্চনার অনুমতি চেয়ে যে মামলা দায়ের করেছিলেন, তারই প্রেক্ষিতে মসজিদের অন্দরের ভিডিয়ো সমীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বারাণসীর নিম্ন আদালতের বিচারক রবিকুমার দিবাকর। এর পরেই হিন্দু পক্ষের তরফে প্রাপ্ত নমুনাগুলির কার্বন ডেটিং পরীক্ষার আবেদন জানানো হয়েছিল ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর।
সেই সমীক্ষা এবং ভিডিয়োগ্রাফির কাজ শেষ হওয়ার পরে ২০২২ সালের ২০ মে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মামলার শুনানির দায়িত্ব পায় বারাণসী জেলা আদালত। পর্যবেক্ষক দলের ভিডিয়োগ্রাফির রিপোর্টে মসজিদের ওজুখানার জলাধারে শিবলিঙ্গের মতো আকৃতির যে কাঠামোর খোঁজ মিলেছে, সেটি আসলে ফোয়ারা বলে মুসলিম পক্ষ দাবি করে। অন্য দিকে, হিন্দুপক্ষের তরফে প্রাপ্ত নমুনাগুলির কার্বন ডেটিং পরীক্ষার আবেদন জানানো হয়েছিল। ‘শিবলিঙ্গ’-এর বয়স নির্ধারণে কার্বন ডেটিং পদ্ধতির প্রয়োগ নিয়ে অবশ্য ধন্দ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মধ্যে। তাঁরা জানাচ্ছেন, মৃত প্রাণী বা উদ্ভিদের দেহাংশ এবং জীবাশ্মের বয়স নির্ধারণে কার্যকরী হলেও এই পদ্ধতিতে কোনও প্রাচীন শিলা বা প্রস্তরখণ্ডের বয়স নির্ধারণ করা কঠিন (যদি না সেই কাঠামোর গায়ে প্রাচীন জৈব দেহাবশেষ থাকে)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy