বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত বালুচিস্তানের মাস্তং। ছবি: এএফপি।
আবার বিস্ফোরণের ঘটনা পাকিস্তানের বালুচিস্তান। শুক্রবার ওই প্রদেশের মাস্তং জেলার সদর শহরে একটি ধর্মীয় জমায়েতে ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। পাক সংবাদপত্র ‘দ্য ডন’ জানাচ্ছে গুরুতর আহতের সংখ্যা ১৩০-এরও বেশি। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন এক ডিএসপি-সহ বালুচিস্তান পুলিশের কয়েক জন কর্মী। প্রাথমিক ভাবে একে মানববোমার হামলা বলে মনে করা হচ্ছে।
মাস্তংয়ের সহকারী কমিশনার (এসি) আত্তাহুল মুনিম জানিয়েছেন, আলফালাহ রোডে মদিনা মসজিদের সামনে ঈদ-ই-মিলাদুন উৎসব উপলক্ষ্যে আয়োজিত মিছিলের জমায়েতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। হতহতদের দ্রুত অদূরের শহিদ নবাব ঘৌস বখ্শ রাইসানি মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় বেশ কিছু যানবাহন এবং আশাপাশের কয়েকটি দোকানেরও ক্ষতি হয়েছে।
‘বালুচ ন্যাশনালিস্ট আর্মি’ (বিএনএ), ‘বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি’ (বিএলএ)-র মতো স্বাধীনতাপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির পাশাপাশি ওই এলাকায় তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) বিদ্রোহীরাও সক্রিয়। সম্প্রতি পাক সেনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য স্বাধীনতাপন্থী বালুচদের সঙ্গে সমঝোতা করেছে টিটিপি। চলতি মাসের গোড়ায় মাস্তংয়েই বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিলেন ‘ইসলামাবাদপন্থী’ জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম-এর ফজল নেতা হাফিজ হামিদুল্লা। তবে বিস্ফোরণের কিছু ক্ষণ পরেই টিটিপি ঘটনার দায় অস্বীকার করে একটি বিবৃতি দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালের ১১ অগস্ট ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়েছিল দেশীয় রাজ্য কালাত। ১২ অগস্ট কালাতের শাসক মির সুলেমান দাউদ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সেই স্বাধীনতার মেয়াদ ছিল মাত্র ৭ মাস। ১৯৪৮-এর ২৭ মার্চ পর্যন্ত। বালুচিস্তানের মানুষের কাছে সেই দিনটা আজও যন্ত্রণার ‘পরাধীনতা দিবস’! ৭ দশক আগে ওই দিনেই পাকিস্তানি সেনা দখল করেছিল বালুচিস্তান। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তৎকালীন শাসককে বাধ্য করেছিল পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হতে। বালুচিস্তানের পরবর্তী ইতিহাস ফের নতুন স্বাধীনতার যুদ্ধের। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আর কয়েক হাজার মানুষের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার।
পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ বালুচিস্তান প্রাকৃতিক ভাবে সবচেয়ে সম্পদশালী। ধীরে ধীরে তা বেহাত হয়ে যাচ্ছে বালোচ নাগরিকদের। ‘চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর’ (সিপিইসি) তৈরির পরে গত কয়েক বছরে সেই লুট আরও বেড়েছে। পশ্চিম চিনের শিনজিয়াং প্রদেশের কাশগড় থেকে শুরু হওয়া ওই রাস্তা কারাকোরাম পেরিয়ে ঢুকেছে পাকিস্তানে। প্রায় ১,৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শেষ হয়েছে বালুচিস্তান প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে চিন নিয়ন্ত্রিত গ্বদর বন্দরে।
ওই রাস্তা ব্যবহার করেই ইসলামাবাদ এবং বেজিংয়ের শাসকেরা বালুচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করছে বলে ‘বালুচ ন্যাশনালিস্ট আর্মি’ (বিএনএ), ‘বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি’ (বিএলএ)-র মতো স্বাধীনতাপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির অভিযোগ।এমনকি, সম্প্রতি গ্বদর উপকূলের মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরাও চিনাদের আপত্তিতে বন্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ‘বালুচিস্তানের গাঁধী’ বলে পরিচিত স্বাধীনতাপন্থী নেতা আবদুল কাদির বালোচ বছর কয়েক আগে দিল্লি এসে বলেছিলেন, তাঁরা চান ১৯৭১-এ ভারত যে ভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল, সে ভাবেই পাশে দাঁড়াক বালুচিস্তানের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে বালুচিস্তানের উপর পাক নিপীড়ন বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে সরব হওয়ার আবেদনও জানিয়েছিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy