বিচারপতি সঞ্জয়কিষণ কউল। ছবি: সংগৃহীত।
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা হয়নি এখনও। ৫ সেপ্টেম্বর এই বিষয়ে রায়দান স্থগিত রাখে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। কিন্তু প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে ওই বেঞ্চের প্রবীণতম সদস্য বিচারপতি সঞ্জয়কিষণ কউল অবসর নিচ্ছেন ২৫ ডিসেম্বর। নিয়ম অনুযায়ী, তার আগেই ওই মামলার রায় ঘোষণা করতে হবে।
২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকার সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ করে। সাবেক জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখে ভাগ করা হয়। তার পরেই সুপ্রিম কোর্টে এই পদক্ষেপের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয়। শুনানিতে সরকারের আইনজীবীরা জানান, জম্মু-কাশ্মীরকে পুরোপুরি ভারতের অন্তর্ভুক্ত করতে এই পদক্ষেপের প্রয়োজন ছিল। গত সাড়ে চার বছরে উপত্যকার উন্নতি হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই সেখানে ভোট হবে। ফেরানো হবে রাজ্যের মর্যাদা। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, ‘ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি’র ফলে জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছিল। তিনি দাবি করেন, বিশেষ মর্যাদা লোপের পরে সেখানে জঙ্গি হামলার হার ৪৫.২ শতাংশ, জঙ্গি অনুপ্রবেশের হার ৯০.২ শতাংশ, পাথর ছোড়ার হার ৯৭.২ শতাংশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের মৃত্যুর হার ৬৫.৯ শতাংশ কমে গিয়েছে।
আবেদনকারীদের পক্ষে কপিল সিব্বল, গোপাল সুব্রহ্মণ্যমের মতো প্রবীণ আইনজীবীরা জানান, কেন্দ্র সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে জারি করা বেশ কয়েকটি প্রশাসনিক নির্দেশের মাধ্যমে একটি পূর্ণ মর্যাদার অঙ্গরাজ্যকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করেছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে আঘাত। সংবিধানের সঙ্গেও ধোঁকাবাজি করা হয়েছে।
আবেদনকারীদের আইনজীবীরা সওয়ালে জানান, জম্মু-কাশ্মীরের সংবিধান তৈরির পরে ১৯৫৭ সালে সেখানকার সংবিধান সভা ভেঙে দেওয়া হয়। প্রথমে সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ অস্থায়ী হলেও এর পরেই তা স্থায়ী রূপ নেয়। সিব্বল দাবি করেন, ৩৬৮ নম্বর অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ জানিয়েছে, যে সব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশেষ মর্যাদা লোপ করা হয়েছিল তা খতিয়ে দেখবে আদালত। আইনজীবীদের মতে, সে ক্ষেত্রে শুরু করতে হবে ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর থেকে। সে দিন জম্মু-কাশ্মীরের তৎকালীন রাজ্যপাল তৎকালীন জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা ভেঙে দেন। এক মাস পরে, ১৯ ডিসেম্বর ৩৫৬ নম্বর অনুচ্ছেদ মেনে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হয়। ৩ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির শাসন অনুমোদন করে সংসদ। ২০১৯ সালের ৩ জুলাই ছ’মাসের জন্য রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
২০১৯ সালের ৫ অগস্ট সংবিধান (জম্মু-কাশ্মীর সংক্রান্ত) নির্দেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি। তার মাধ্যমে সংবিধানের ৩৬৭(৪) নম্বর অনুচ্ছেদ যোগ করা হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে সংবিধানের ৩৭০(৩) নম্বর ধারায় ‘রাজ্যের সংবিধান সভা’-র বদলে ‘রাজ্যের বিধানসভা’ শব্দটি যোগ হয়। সে দিনই সংসদে বিশেষ মর্যাদা লোপ ও জম্মু-কাশ্মীর ভাগের বিল পাশ হয়। পরের দিন রাষ্ট্রপতি জানান, ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ আর কার্যকর হচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy