Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Ayodhya Ram Temple

সেই সিডিগুলো কোথায়? মন্দিরের অযোধ্যায় প্রশ্ন করতেই একগাল হেসে ফেললেন দীপক শর্মা

সুপ্রিম কোর্ট রামমন্দিরের পক্ষে রায় দেওয়ার পরে অস্থায়ী মন্দির তৈরি হয়েছে। গত পৌনে চার বছর সেখানেই রামলালা বিরাজমান। অযোধ্যাতেও ভিড় বেড়েছে।

ram mandir.

অযোধ্যার নির্মিয়মান রাম মন্দির। —ফাইল চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
অযোধ্যা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:৩৪
Share: Save:

‘সেই সিডিগুলো কোথায়?’ প্রশ্ন করতেই একগাল হাসলেন দীপক শর্মা।

অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমির বিতর্কিত জমিতেই গত তিন দশক ধরে তাঁবুর নীচে রামলালার পূজা-অর্চনা চলত। সিআরপিএফ, উত্তরপ্রদেশের সশস্ত্র পুলিশের কড়া পাহারায় লোহার জালে ঘেরা সেই রামলালার সামনে পৌঁছতে হলে আগেই মোবাইল জমা রাখতে হত। সেই মোবাইল জমা রাখার গুমটির ঠিক আগেই দীপক শর্মার দোকান। দীপক ও তাঁর ভাই সিডি বেচতেন। তাঁদের মা তৈরি করতেন চা। সঙ্গে গরম সামোসা, খাস্তা কচুরি। আর ‘হট কচুরি’-র মতো বিক্রি হত সেই সিডিগুলো।

সেই সিডিতে বন্দি ছিল বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার দৃশ্য। ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর গাঁইতি হাতে করসেবকদের বাবরি মসজিদের গম্বুজের উপরে উঠে পড়ার ছবি। ভেঙে ফেলার ছবি। তার আগে ১৯৯০-এ করসেবকদের উপরে গুলি চালানোর দৃশ্য। শুধু দীপক শর্মার দোকান নয়। হনুমানগড়ি মন্দিরকে বাঁ হাতে রেখে অযোধ্যায় সবথেকে উঁচু রাজদ্বার মন্দিরের পাশ দিয়ে ‘রাম জন্মভূমি’-র দিকে এগোলে দু’দিকের রকমারি জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসা প্রতিটি দোকানে সেই সিডি মিলত।

আর এখন? সব অদৃশ্য। বাবরি মসজিদ ভাঙার দৃশ্য সম্বলিত কোনও সিডি-র আর অযোধ্যায় দেখা মিলবে না। অযোধ্যার ইতিহাস থেকে কেউ যেন নিপুণ ভাবে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার অধ্যায় মুছে ফেলছে।

আগে রামলালার দর্শন করে বার হলে ভক্তদের ঘিরে ধরতেন স্থানীয় হকারেরা। তাঁদের হাতেও থাকত সেই সিডি। এখন তাঁরা কেউ বেচছেন কাচে ঘেরা নতুন রামমন্দিরের ছোট্ট সংস্করণ বা রাম-সীতার ছবি। কেউ রামমন্দিরের নকশা করা চাবির রিং।

দীপক শর্মা সিডির পসরা তুলে দিয়ে ভাল করে চায়ের দোকানটা সাজিয়েছেন। সেই সিডিগুলো কোথায় গেল? দীপক হাসেন। ‘‘ও সব তো কেউ কেনে না। সব তো এখন ইন্টারনেটেই দেখা যায়।’’

সুপ্রিম কোর্ট রামমন্দিরের পক্ষে রায় দেওয়ার পরে অস্থায়ী মন্দির তৈরি হয়েছে। গত পৌনে চার বছর সেখানেই রামলালা বিরাজমান। অযোধ্যাতেও ভিড় বেড়েছে। দীপকদের দোকানে বিক্রি বেড়েছে। তবে এখন চিন্তা, মন্দিরের জন্য রাস্তা চওড়া হবে। তাতে দোকানের কিছুটা অংশ ভাঙা পড়বে। তবে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস মিলেছে। দীপক তাতেই খুশি।

হনুমানগড়ির সামনের রাস্তায় গত দশ বছর ধরে ঘুরে ঘুরে সিডি বেচতেন অপূর্ব সোনকর। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাড়িতে হাজার দুয়েক সিডি জমে রয়েছে। এ বার ফেলে দিতে হবে। ও সব কেউ কেনে না। আর বাবরি মসজিদ ভাঙা নিয়ে কেউ কথা বলতেও চায় না।’’

অযোধ্যার রাস্তায় কান পাতলে শোনা যায়, চার বছর আগে বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সময়েই বাবরি মসজিদ ভাঙার দৃশ্যের সিডি বেচার উপরে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। কারণ, তাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে। আইনশৃঙ্খলার সমস্যা তৈরি হতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের সামনে অবশ্য প্রামাণ্য নথি হিসেবে বাবরি মসজিদ ভাঙার দৃশ্যের সিডি-ও পেশ হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট রামমন্দিরের পক্ষে রায় দিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু একই সঙ্গে বলেছিল, বাবরি মসজিদ ভাঙাও বেআইনি কাজ ছিল। নতুন রামমন্দিরের জন্য কর্মযজ্ঞে সেই বেআইনি কাজ ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। অযোধ্যার রাস্তা থেকে ‘বেআইনি কাজ’-এর দৃশ্য সংবলিত সিডি-ও উধাও হয়ে গিয়েছে।

মুছে যাচ্ছে বাবরি মসজিদের ছবি। উঠে আসছে তার আগের ইতিহাস। নতুন অযোধ্যায় রামমন্দিরের সঙ্গেই তৈরি হচ্ছে পুরাতাত্ত্বিক জাদুঘর। রামমন্দিরের সঙ্গে সেই মিউজ়িয়াম, আর্কাইভের ভারপ্রাপ্ত প্রোজেক্ট ম্যানেজার জগদীশ শঙ্কর আফলে বলেন, ‘‘অযোধ্যায় রাম জন্মভূমির নীচে যে বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক সামগ্রী, মন্দিরের ভগ্নাবশেষ মিলেছিল, তা জাদুঘরে রাখা হবে। সেখানে বিষ্ণুর মূর্তি খোদাই রয়েছে। দ্বাদশ শতাব্দীতে তৈরি মন্দিরের নিদর্শনও মিলেছে। বাবরের সেনা মীর বাকির নেতৃত্বে মন্দির ভেঙে বাবরি মসজিদ তৈরি করেছিলেন। রামমন্দির তৈরির সময় চারটি স্তরে আমরা বিভিন্ন যুগের সামগ্রী পেয়েছি। তার মধ্যে স্কন্দগুপ্ত, বিক্রমাদিত্য, চন্দ্রগুপ্তের সময়ের বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক সামগ্রী মিলছে। সেই সময়ের মন্দিরের স্তম্ভ, কলস, স্থাপত্যকলার নিদর্শন মিলেছে। তা নতুন জাদুঘরে তুলে ধরা হবে।’’

অযোধ্যায় যেমন হাজার খানেক রামমন্দির রয়েছে, তেমনই রয়েছে জৈনদের মন্দির ও শিখদের গুরুদ্বার। জগদীশ বলেন, ‘‘ব্রহ্মকুণ্ড গুরুদ্বারে আমরা নথি পেয়েছি, ষষ্ঠদশ শতাব্দীর গোড়ায় গুরু নানক অযোধ্যায় এসে রাম জন্মভূমিতে রামের পুজো করেছিলেন। রাম জন্মভূমির রক্ষায় বাবরের সেনার বিরুদ্ধে শিখরাও লড়াই করে প্রাণ দিয়েছিলেন। এখানকার মুসলিমদেরও রামমন্দির থেকে কোনও সমস্যা নেই। এটাই আসল অযোধ্যা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ram Temple BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE