Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সুযোগ নিতে পারে জঙ্গিরা

ভিআইপি সুরক্ষায় ফাঁক, বাড়ছে চিন্তা

সুদূর প্যারিসে ১৩/১১-য় হানা উদ্বেগ বাড়িয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেরও। কারণ বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও এ দেশে ভিআইপি তথা নেতা-মন্ত্রীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ত্রুটি কমানো যাচ্ছে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৫৪
Share: Save:

সুদূর প্যারিসে ১৩/১১-য় হানা উদ্বেগ বাড়িয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেরও। কারণ বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও এ দেশে ভিআইপি তথা নেতা-মন্ত্রীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ত্রুটি কমানো যাচ্ছে না। মন্ত্রকের বক্তব্য, নিরাপত্তায় যে ধরনের ফাঁকফোকর সম্প্রতি দেখা গিয়েছে, তার সুযোগ জঙ্গিরা নিতেই পারত এবং পরিণাম হতো ভয়ঙ্কর।

যেমন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর পকেটে একটা পয়েন্ট থ্রি টু বোরের রিভলভার নিয়ে অবাধে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টারের দফতরের দোরগোড়ায় পৌঁছে যান এক সাক্ষাৎপ্রার্থী। সচিবালয়ে ঢোকার মুখে কেউ তাঁর তল্লাশি করেনি। মেটাল ডোর ফ্রেম-ও পেরিয়ে গিয়েছেন। তার পর রক্ষীরা তল্লাশি চালালেও ওই আগ্নেয়াস্ত্র খেয়াল করেননি। শেষমেশ সচিবালয়ের পাঁচ তলায়, মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে ঢোকার মুখে শেষ দফা তল্লাশিতে ধরা পড়ে বন্দুক। তদন্তে যদিও জানা যায়, মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষতি করার কোনও উদ্দেশ্য গুড়গাঁওয়ের ওই ব্যক্তির ছিল না। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একে বড়সড় গাফিলতি বলে জানিয়েছে। সম্প্রতি এক সতর্কবার্তায় মন্ত্রক বলেছে, ‘অত্যন্ত ঢিলেঢালা ভাবে
ওই প্রতিনিধিদলের সব সদস্যকে সে দিন সচিবালয়ে ঢোকার মুখে তল্লাশি করা হয়।’

আইবি-র এক কর্তার বক্তব্য, সাত বছর আগে লস্কর জঙ্গিরা মুম্বইয়ে যে ভাবে হামলা চালিয়েছিল, সেই ধাঁচেই শুক্রবার আইএস জঙ্গিরা প্যারিসে আত্মঘাতী হানা চালিয়েছে। বস্তুত কালকের ওই হামলার পর থেকে দেশীয় বা আন্তর্জাতিক স্তরে এই সাদৃশ্যের কথা ঘুরেফিরে এসেছে। কিন্তু ওই অফিসারের কথায়, ‘‘জঙ্গিরা জনবহুল এলাকায় সেই ২৬/১১-র মতোই ফের হানা দেবে, এটা ভাবার কোনও কারণ নেই। বরং, আমাদের তথ্য অনুযায়ী, এ বার হয়তো ভারতের কোনও গুরুত্বপূর্ণ নেতা বা মন্ত্রীকেও বেছে নিতে পারে জঙ্গিরা। সে ক্ষেত্রে ভিআইপি নিরাপত্তায় ত্রুটি দূর না হলে ভয়ঙ্কর মাসুল দিতে হবে।’’ প্যারিসে হানার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিদেশ সফরের সময়ে তাঁর সুরক্ষাব্যবস্থা আরও আঁটোসাটো করার কথা ভাবছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। শনিবার এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ গোয়েন্দা-কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন।

ভিআইপি নিরাপত্তায় গাফিলতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে সব উদাহরণ তুলে ধরেছে, তার মধ্যে দু’টি কিন্তু এ রাজ্যেরই ঘটনা।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরু‌ণ জেটলি যখন কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়ার বাড়িতে যাচ্ছিলেন, সেই সময়ে তাঁর গাড়ি কনভয়ের পাইলট কার, এসকর্ট কার-সহ অন্য সব যান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এজেসি বোস রোড উড়ালপুল থেকে নেমে জেটলির গাড়ি যায় রাজভবনের দিকে। কথা ছিল, বিমানবন্দর থেকে জেটলি সোজা আলিপুর রোডে ডালমিয়ার বাড়ি যাবেন। সেইমতো পাইলট কার-সহ অন্য গাড়িগুলি উড়ালপুল থেকে নেমে আগেই আলিপুর রোডের উদ্দেশে বেঁকে যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, এটা কখনওই বাঞ্ছনীয় নয়। জেটলি শেষ মুহূর্তে তাঁর কর্মসূচি বদল করেন, কিন্তু সে খবর সময়মতো কনভয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তা অফিসারের কাছে পৌঁছয়নি। মন্ত্রক জানাচ্ছে, অফিসার যেন ভিআইপি-র গতিবিধি সম্পর্কে প্রতি মুহূর্তে খবর পান।

এ রাজ্যে নিরাপত্তার ত্রুটির নজির আরও রয়েছে। গত ২৪ জুন কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী যখন পবনহংস হেলিকপ্টারে হলদিয়ার হেলিপ্যাডে নামছেন, তখন মন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর জন্য লাল কার্পেটের তলায় রাখা প্লাস্টিক উড়ে আসে কপ্টারের পাখার একদম কাছে। তবে সেই প্লাস্টিক হেলিকপ্টারের পাখা ছুঁতে পারেনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, ‘এটা শুধু উড়়ান-নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ত্রুটিরই প্রমাণ নয়, একই সঙ্গে তা দেশের হেলিপ্যাড ও অবতরণস্থলগুলির উপযুক্ত সুরক্ষার ক্ষেত্রে গাফিলতিও দেখিয়ে দিয়েছে।’ কিন্তু মন্ত্রকের আক্ষেপ, জুন মাসে ওই ঘটনার কথা জানিয়ে সতর্কবার্তা দেওয়ার পরেও অক্টোবরে এক জায়গায় ভিআইপি-র ব্যবহৃত হেলিপ্যাডে প্লাস্টিক ব্যাগ উড়তে দেখা গিয়েছে, কোথাও আবার হেলিপ্যাডে নামার জায়গার খুব কাছে গাড়ি দাঁড় করানো ছিল।

আইবি-র এক অফিসার জানান, কোথাও ভিআইপি-কে দেওয়া ফুলের তোড়া আগেভাগে পরীক্ষা করা হচ্ছে না, কোথাও মঞ্চে ডোর ফ্রেম মেটাল ডিটেক্টর বা হাতে ধরা মেটাল ডিটেক্টরের মতো সন্ধানী যন্ত্রই
বেমালুম অনুপস্থিত, কোথাও আবার জ্যামার ভিআইপি-র কনভয় থেকে কিছু ক্ষণের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে
থাকছে। ওই গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, ‘‘ভুল হতেই পারে। কিন্তু কখনও কখনও মনে হচ্ছে, আমরা সম্ভাব্য হামলাকারীদের জন্য যেন প্লেটে সুযোগ সাজিয়ে দিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE