নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা সত্ত্বেও নরেন্দ্র মোদী সরকারের আগামী চার বছরে সঙ্ঘের প্রধান কর্মসূচিগুলি রূপায়িত হবে না বলে আজ সাফ জানিয়ে দিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।
কী কী রয়েছে সেই প্রধান কর্মসূচি (কোর ইস্যু)-র তালিকায়?
রয়েছে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ, ৩৭০ ধারা বিলোপ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার মতো বিষয়। যদিও লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই হিন্দুত্ব বর্জন করে শুধুই উন্নয়নের কথা বলে এসেছেন মোদী। বস্তুত, উগ্র হিন্দুত্ব তাঁর কাজে বাধা দিচ্ছে সরকারের অন্দরে অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সঙ্ঘ নেতাদের উষ্মা হল, তাঁদের প্রধান ইস্যুগুলি রূপায়ণের ব্যাপারে কোনও প্রয়াসই মোদী সরকারের তরফে চোখে পড়ছে না। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি সভাপতি আজ বুঝিয়ে দিলেন, সঙ্ঘের এই কর্মসূচিগুলি কার্যকর করার জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সাংসদের সমর্থন প্রয়োজন, যা বিজেপির কাছে এখনও নেই। লোকসভায় তারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও এই সংখ্যা নেই, রাজ্যসভায় তো সংখ্যাগরিষ্ঠতাই নেই।
সরকারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে আজ অমিত শাহকে প্রশ্ন করা হয়, অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের সময় সঙ্ঘের এই কোর ইস্যুগুলিকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। সেই সময় বলা হয়েছিল, বিজেপি যখন একার ক্ষমতায় সরকারে আসবে, তখন এগুলি কার্যকর করা হবে। তা হলে এখন এগুলি রূপায়ণ করা হচ্ছে না কেন? জবাবে অমিত বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এখনও সেই সংখ্যা নেই। এর জন্য ৩৭০জন সাংসদ প্রয়োজন (সঠিক হিসেবমতো যদিও লোকসভায় সংখ্যাটা হয় ৩৬২)। আপনারা সংবিধান পড়ে নিন।’’
অনেকেই বলছেন, অমিত শাহের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, এই বিষয়টি নিয়ে তিনি ইতিমধ্যেই সঙ্ঘ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা সেরে ফেলেছেন। তবে যে অবলীলায় তিনি ঘোষণাটি করেছেন, তার অন্য তাৎপর্য দেখছেন বিজেপি নেতারা। দলের এক নেতার মতে, সঙ্ঘকে অমিত এই বার্তাই দিলেন যে, পরের লোকসভা নির্বাচনে মোদীকে আরও শক্তিশালী করে জিতিয়ে আনার জন্য সঙ্ঘকে মেহনত করতে হবে। বিজেপির সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে সঙ্ঘ যদি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যা সুনিশ্চিত করতে না পারে, তা হলে এই সব কোর ইস্যুগুলির রূপায়ণও সম্ভব নয়। সম্প্রতি দিল্লির বিধানসভা ভোটে হারের পর বিজেপির রাশ ধরার একটা চেষ্টা হচ্ছিল সঙ্ঘের তরফে। অমিত-ঘনিষ্ঠদের মতে, সঙ্ঘের সেই প্রচেষ্টাতেই আজ কার্যত জল ঢেলে দিলেন বিজেপি সভাপতি।
রামমন্দির নির্মাণ নিয়ে অবশ্য কিছু বলেননি অমিত। বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের মতে, বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন বলেই এই বিষয়ে সভাপতি মুখ খোলেননি। তিনি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কথা মূলত বলেছেন ৩৭০ ধারা ও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রসঙ্গে। স্বভাবতই তাতে অখুশি বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। গত কালই আরএসএস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ রামমন্দির নির্মাণ নিয়ে সরকারের উপর চাপ বাড়িয়েছিল। এক প্রস্তাব পাশ করে তারা দাবি জানিয়েছিল, সরকার যদি সংসদের যৌথ অধিবেশন ডেকে গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করাতে পারে, তা হলে কেন সঙ্ঘের কোর ইস্যুগুলি পাশ করাতে পারবে না?
স্পষ্টত, তার উত্তরই আজ দিয়ে দিলেন বিজেপি সভাপতি।