বেঙ্গালুরুতে নিজের ভাড়াবাড়িতে গণধর্ষিতা হলেন পশ্চিমবঙ্গের এক তরুণী। গত মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে ঘটনাটি ঘটে। বেঙ্গালুরুর একটি বিউটি পার্লারে কাজ করা ওই তরুণীর উপরে নির্যাতন চালানো ছাড়াও দু’টি মোবাইল ফোন ও ২৫ হাজার টাকা চুরি করে পালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। বেঙ্গালুরু গ্রামীণের পুলিশ সুপার সি কে বাবা জানিয়েছেন, নির্যাতিতা এখন বিপন্মুক্ত। ছ’জন অভিযুক্তের (কোনও কোনও সূত্রের মতে, পাঁচ জন) মধ্যে তিন জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সূত্রের দাবি, আরও তিন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে দুষ্কৃতীদের পাণ্ডা এখনও অধরা। ধর্ষণের ঘটনার ভিডিয়োও তোলা হয়েছিল। তবে সেই ভিডিয়ো উদ্ধার করেছে পুলিশ। অভিযুক্তেরা নির্যাতিতার পূর্বপরিচিত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ধৃত তিন সন্দেহভাজনের নাম কার্তিক, গ্লেন এবং সুযোগ। গঙ্গোনদনহল্লি এলাকায় একটি ভাড়াবাড়িতে থাকেন বছর সাতাশের নির্যাতিতা। বিয়ের কনে সাজানো তাঁর পেশা। পুলিশ সূত্র উদ্ধৃত করে একটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, তরুণীর বাড়িওয়ালা সম্প্রতি তাঁকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। তরুণীর বিরুদ্ধে বেআইনি কাজকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ আসছে বলে দাবি করেছিলেন বাড়িওয়ালা। তদন্তকারীদের সন্দেহ, দুষ্কৃতীরা স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় তরুণী ও বাড়িওয়ালার ঝামেলার খবর জানত। সেই অজুহাত কাজে লাগিয়েই তারা পুলিশের ‘সূত্র’ (ইনফর্মার) বলে নিজেদের পরিচয় দিয়ে বাড়িটিতে ঢুকে পড়েছিল।
অসমর্থিত সূত্রের দাবি, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ নির্যাতিতার বড় ছেলে মোবাইলে আসা একটি মেসেজ দেখতে পায়। তাতে লেখা ছিল, মাঝরাতে তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হবে। রাত ১০টা নাগাদ দু’টি মোটরবাইকে আসা ৬ জন লোক ওই বাড়িটিতে চড়াও হয়। ঘটনার সময়ে সেই বাড়িতে নির্যাতিতা ছাড়াও আরও এক মহিলা এবং নির্যাতিতার দু’জন পুরুষ আত্মীয় ছিলেন। দু’টি শিশুও ছিল। কন্নড় এবং হিন্দি মেশানো ভাষায় ওই দুষ্কৃতীরা বলে, তারা বেঙ্গালুরুর পিনিয়া থানার পুলিশের ‘ইনফর্মার’। এক জন নিজেকে জেলখাটা আসামি বলে পরিচয় দেয়। এর পরেই ওই দুষ্কৃতীরা অভিযোগ তোলে, ওই তরুণী ও তাঁর আত্মীয়েরা দেহব্যবসা এবং গাঁজার ব্যবসা চালান। তরুণীর কাছে এক লক্ষ টাকা এবং গাঁজা ‘ঘুষ’ চায় তারা। তরুণী টাকা দিতে না চাইলে দুই শিশু বাদে বাকি চার জনকেই ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে পেটায় তারা। ওই টাকা ও মোবাইল ছিনতাই করা হয়। অন্য মহিলাটি কোনও মতে পালান। নির্যাতিতার দুই পুরুষ আত্মীয়কে শৌচাগারের মধ্যে বেঁধে রাখা হয়। এর পরে দু’জন দুষ্কৃতী তরুণীটিকে অন্য একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে তাঁর উপরে নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ। অসমর্থিত সূত্রের দাবি, তরুণীর উপরে অত্যাচার চলাকালীন এক দুষ্কৃতী বাড়িটির সদর দরজা আগলে দাঁড়িয়ে ছিল। তিন জন মোটরবাইকে বসে নজর রাখছিল। এক পুলিশ অফিসার বলেন, ‘‘দুই দুষ্কৃতী তাদের কুকর্মের ভিডিয়োও তুলে রেখেছিল।’’
স্থানীয় সূত্রের বক্তব্য, ঘটনার পরে রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ পুলিশের সদর দফতরের হেল্পলাইন ১১২ নম্বরে ফোন করে তরুণীর বড় ছেলে। সেই ফোন পেয়ে মদনায়কনহল্লি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তত ক্ষণে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। নির্যাতিতা ও আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সূত্রের দাবি, ‘তল্লাশি হবে’ বলে ঘটনার সন্ধ্যায় নির্যাতিতাকে যে মেসেজ পাঠানো হয়েছিল, তার সূত্র ধরেই বুধবার রাতে তিন সন্দেহভাজনকে ধরে ফেলে পুলিশ। ছয় দুষ্কৃতীর মধ্যে দু’জন দাগি দুষ্কৃতী বলেই জানা যাচ্ছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৭০(১) ধারা (গণধর্ষণ)-র পাশাপাশি ১২৭(২) (বেআইনি ভাবে আটকে রাখা), ১১৮(১) (ইচ্ছাকৃত ভাবে অস্ত্রের আঘাত করা), ৩১১ (ডাকাতি)-সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা করেছে পুলিশ। বেঙ্গালুরু গ্রামীণের এসপি বলেন, ‘‘ডিএসপি পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তাকে এই ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। মহকুমার প্রতিটি থানার ইনস্পেক্টরদের অধীনে বিশেষ দল গড়ে তদন্ত চালানো হচ্ছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)