Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নদী বাঁচাতে নামকুমে ভরসা হোয়াট্‌সঅ্যাপ

হোয়াট্‌সঅ্যাপ বাঁচাচ্ছে সুবর্ণরেখা নদীকে! এমনই কাণ্ড ঘটছে রাঁচির নামকুমে। নদীকে দূষণমুক্ত করতে মোবাইল-অ্যাপে ‘জোট’ বেঁধেছেন স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দা। হোয়াট্‌সঅ্যাপে পরিকল্পনা কষতে ‘গ্রুপ’ তৈরি করেছেন তাঁরা। এখন তাতে ৪৮ জন সামিল হলেও, সংখ্যাটা দিনদিন বাড়ছে। ‘সুবর্ণরেখা উত্থান সমিতি’ নাম দেওয়া হয়েছে ওই গ্রুপের।

সুবর্ণরেখা সাফাইয়ের কাজ চলছে নামকুমে। —নিজস্ব চিত্র

সুবর্ণরেখা সাফাইয়ের কাজ চলছে নামকুমে। —নিজস্ব চিত্র

আর্যভট্ট খান
রাঁচি শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ০৪:৩৫
Share: Save:

হোয়াট্‌সঅ্যাপ বাঁচাচ্ছে সুবর্ণরেখা নদীকে!

এমনই কাণ্ড ঘটছে রাঁচির নামকুমে। নদীকে দূষণমুক্ত করতে মোবাইল-অ্যাপে ‘জোট’ বেঁধেছেন স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দা। হোয়াট্‌সঅ্যাপে পরিকল্পনা কষতে ‘গ্রুপ’ তৈরি করেছেন তাঁরা। এখন তাতে ৪৮ জন সামিল হলেও, সংখ্যাটা দিনদিন বাড়ছে।

‘সুবর্ণরেখা উত্থান সমিতি’ নাম দেওয়া হয়েছে ওই গ্রুপের। তার সদস্যরা প্রতি দিন ভোরে ঘণ্টাখানেক কোঁদাল, গাঁইতি, লাঠি, ঝুড়ি নিয়ে নামছেন নদী সাফাইয়ের কাজে। তাঁদের দাবি, এক মাসের মধ্যে নামকুম লাগোয়া সুবর্ণরেখা নদী অনেকটাই পরিষ্কার করা হয়েছে। সাফাইয়ের ছবি দেওয়া হচ্ছে অন্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও। তাতে সচেতনতা বাড়ছে। সমিতির সদস্যরা জানান, কচুরিপানায় ঢেকে গিয়েছিল সুবর্ণরেখা। উধাও হয়েছিল স্রোত। এখন ফের ফিরেছে জলের কলকলানি।

নামকুমে হরমু ও সুবর্ণরেখা নদীর সংযোগস্থলে এলাকাবাসীর অনেকেই স্নান করতেন। ছটপুজোর মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠানও হতো সেখানে। হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপের সদস্য সুবীর কুমার শর্মা বলেন, “একটা সময় সুবর্ণরেখার জল এতটাই পরিষ্কার ছিল যে তা পানও করা যেত। শোনা যায়, অনেক আগে নাকি নদীর তীরের বালুকণায় মিশে থাকত সোনার টুকরো। এখন নদীর তীরে একটুও বালি নেই। তার বদলে জমেছে আবর্জনার স্তুপ।” ওই দলের সদস্য অমিত কুমার বলেন, ‘‘গত বছর ছটপুজোতে দেখলাম নদীর তীরে কেউ আসেননি। তখনই আমরা সুবর্ণরেখা বাঁচানোর কথা ভাবতে শুরু করি।’’

নদী বাঁচানোর পরিকল্পনার অন্যতম মুখ গৌতম দেব বলেন, “অনেককে একসঙ্গে নদী সাফাইয়ের কাজে কী ভাবে নিয়ে আসা যায় ভাবতে ভাবতেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলার চিন্তা মাথায় আসে। দু’জন মিলে গ্রুপ খুলেছিলাম। পরিচিতদের তাতে যোগ দিতে বলি।”

ভোরে নামকুমের সুবর্ণরেখা নদীর তীরে দেখা যায়, সাফাইয়ের কাজ করছেন বিভিন্ন বয়সের জনা দশেক মানুষ। প্রিন্স কুমার নামে এক যুবক বলেন, “সবাই রোজ আসেন না। ১০-১২ জন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আসেন।” গ্রুপ-সদস্যরা জানান, কচুরিপানা, প্লাস্টিকের বোতল, পুরনো কাপড়, মদের বোতল, লোহার যন্ত্রাংশ, ভাঙা ইলেকট্রনিক সরঞ্জামও মেলে নদীতে। নদী পরিষ্কার করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তখন দায়সারা ভাবে কিছুটা কাজ করা হয়।

শুধু নামকুমে নদী পরিষ্কার করে কী লাভ হবে?

রোহিত সিংহ নামে এক যুবক বলেন, “আমাদের কয়েক জনের চেষ্টায় হয়তো তা হবে না। নদী বাঁচাতে সেচ দফতরকেও হাত লাগাতে হবে। তাঁতিসিলওয়াইয়ের কয়েক জন আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন। তাঁরা নিজেদের এলাকায় নদী সাফাইয়ের কাজ করছেন। এ ভাবেই নতুন নতুন জায়গায় আমাদের দল ছড়িয়ে যাবে। হয়তো এ ভাবেই বাঁচবে সুবর্ণরেখা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suvarnarekha Initiatives Whatsapp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE