জগদীপ ধনখড়ের উত্তরসূরি হিসাবে উপরাষ্ট্রপতি পদের জন্য প্রার্থী বাছাই করে ফেলেছে শাসক জোট এনডিএ। রবিবার সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। বেছে নেওয়া হয়েছে বর্ষীয়ান নেতা সিপি রাধাকৃষ্ণনকে।
কে এই রাধাকৃষ্ণন? অভিজ্ঞতা ও আনুগত্যের কারণেই কি ধনখড়ের জায়গায় উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে বেছে নেওয়া হল তাঁকে? না কি এর নেপথ্যে রয়েছে তামিলনাড়ু তথা দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে পদ্মশিবিরের সমর্থন বাড়ানোর নির্বাচনী রণকৌশল? রবিবার রাত থেকে এমনই নানা প্রশ্ন ঘুরছে বিভিন্ন মহলে।
চন্দ্রপুরম পোন্নুসামি রাধাকৃষ্ণনের জন্ম তামিলনাড়ুর তিরুপুরে, ১৯৫৭ সালে। ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল পদে শপথ নেন তিনি। এর আগে ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪-এর জুলাই পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপালের দায়িত্ব সামলেছেন। সে সময় তেলঙ্গানার রাজ্যপাল এবং পুদুচেরির লেফটেন্যান্ট গভর্নর হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব পাওয়ার প্রথম চার মাসের মধ্যেই রাজ্যের ২৪টি জেলায় ঘুরে ঘুরে সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন রাধাকৃষ্ণন। দেখা করেছিলেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গেও।
তামিলনাড়ুর রাজ্য রাজনীতিতে চার দশকেরও বেশি কাটিয়েছেন রাধাকৃষ্ণন। সংসদীয় রাজনীতিতে হাতেখড়ির আগে থেকে কাজ করেছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর হয়ে। ১৯৭৪ সালে তিনি ভারতীয় জনসঙ্ঘের তামিলনাড়ু রাজ্য কার্যনির্বাহী সমিতির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে নিযুক্ত হন তামিলনাড়ু বিজেপির রাজ্য সম্পাদক পদে। ১৯৯৮ সালে কোয়েম্বত্তূর লোকসভা কেন্দ্র থেকে ১,৫০,০০০ ভোটের ব্যবধানে ডিএমকে-র এম রামানাথনকে হারিয়ে জয়ী হন। এআইডিএমকে-র সঙ্গে জোটের পর সে বার তামিলনাড়ুতে যে তিন জন বিজেপি প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন, তাঁদের এক জন ছিলেন রাধাকৃষ্ণন। এর পর ১৯৯৯ সালেও কোয়েম্বত্তূর থেকে লোকসভার সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। সে বার জেতেন ৫৫,০০০ ভোটের ব্যবধানে। ২০০৩ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা (ইউএনজিএ)-র বৈঠকে ভারতের সংসদীয় প্রতিনিধি দলেরও অংশ ছিলেন রাধাকৃষ্ণন। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন তামিলনাড়ু বিজেপির রাজ্য সভাপতি। ২০০৪ সালে ডিএমকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর এআইডিএমকে-র সঙ্গে জোট গঠনেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। অবশ্য ওই বছরই নির্বাচনে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির কে সুব্বরায়নের কাছে পরাজয়ের পর সংসদে মেয়াদ শেষ হয় রাধাকৃষ্ণনের।
আরও পড়ুন:
বিজ়নেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ)-এ স্নাতক রাধাকৃষ্ণনের পড়াশোনা ও রাজনীতির পাশাপাশি খেলাধুলোর প্রতিও আগ্রহ ছিল। কলেজজীবনে টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। আগ্রহ ছিল ক্রিকেট ও ভলিবলেও। এ বার সেই রাধাকৃষ্ণনকেই ধনখড়ের উত্তরসূরি হিসাবে দেখতে চাইছে বিজেপি। বিজেপির প্রস্তাবিত নামে সায় রয়েছে এনডিএ শিবিরের শরিক দলগুলির। বিরোধীদের থেকেও সমর্থন চাওয়া হয়েছে। তবে এই পদক্ষেপকে নেহাত আনুগত্যের পুরস্কার নয়, বরং দক্ষিণকে দেওয়া বিজেপির বার্তা হিসাবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞেরা। বস্তুত, এই মুহূর্তে পদ্মশিবিরের অন্যতম উদ্দেশ্য বাংলা, পঞ্জাব ও তামিলনাড়ুবাসীর মন জয় করা। এর মধ্যে বাংলায় বিজেপি প্রধান বিরোধী দল হিসাবে উঠে এলেও বাকি দুই রাজ্যে এখনও তা হয়নি। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তামিলনাড়ুতেও বিধানসভা ভোট রয়েছে। ফলে এই পরিস্থিতিতে উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে রাধাকৃষ্ণনের নাম ঘোষণা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।