গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ
দিল্লির অপরাধ জগতে ‘গোগী’ পরিচিত নাম। পুলিশের খাতাতেও ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’। তবে দিল্লির আলিপুরের ৩০ বছরের তরুণ গোগীকে গোটা দেশ চিনল সে নিহত হওয়ার পর। দিল্লির রোহিণী কোর্টের মধ্যেই বিরোধী গ্যাংয়ের গুলি খেয়ে শুক্রবার মৃত্যু হল গোগীর। সাধারণ পরিবারের ছেলে জিতেন্দ্র মান হঠাৎ গ্যাংস্টার গোগী হয়ে উঠল কী ভাবে? নেপথ্যে দীর্ঘ কাহিনী রয়েছে।
খুন করেই অপরাধ জগতে প্রবেশ গোগীর। তখন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধানন্দ কলেজের ছাত্র সে। অপরাধ জগতের সঙ্গে তার আগে পর্যন্ত গোগীর কোনও সম্পর্ক ছিল না। সাধারণ পরিবারের ছাত্র রাজনীতি করা তরুণ। কলেজে ভোটের আগে বড়জোর দলবল পাকিয়ে সামান্য ধমক-চমক দিত। ছাত্র ইউনিয়ানের ‘দাদা’। ওটুকুই। প্রিয় বন্ধু সুনীলের সঙ্গে হঠাৎ শত্রুতাই গোগীকে গ্যাংস্টার বানিয়ে দেয়। কলেজ ভোটের সময় প্রতিহিংসাবশত সুনীলের এক বন্ধুকে গোগী খুন করেছিল বলে অভিযোগ। তার পর থেকেই গোগী বনাম সুনীলের দ্বৈরথ দিল্লির কুখ্যাত ‘গ্যাংওয়ার’ বা দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ে পরিণত হয়।
শ্রদ্ধানন্দ কলেজের ঘটনাটি ২০১০ সালের। এক বছর পরেই গ্রেফতার হয় গোগী। ততদিনে তার এক সময়ের প্রিয়বন্ধু সুনীল ওরফে টিল্লুকে খুন করার ভূত চেপেছে গোগীর মাথায়। শুক্রবার সেই টিল্লুর দলই গোগীকে খুন করেছে বলে সন্দেহ পুলিশের।
২০১১ সালের পর থেকে পুরোপুরি অপরাধ জগতে ঢুকে পরে গোগী। তখন তার বয়স মাত্র ২০। তোলাবাজি, খুন, জখম, রাহাজানিতে তরুণ দুষ্কৃতী গোগীর দলের দৌরাত্ম্যে দিল্লির মানুষ ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকত এক সময়ে। রাতবিরেতে মাঝে মধ্যেই গোগীর দল রাস্তায় গাড়ি অপহরণ করতে বেরতো। কাছাকাছি কেউ থাকলে তাঁকে মেরে ফেলাই ছিল গোগীর নীতি।
এ সবের মধ্যে টিল্লুর দলের সঙ্গে তাদের দলের সংঘর্ষও সমান তালে চলছিল। ২০১৬ সালে গোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে তত দিন গোগীর শক্তি বেড়েছে। জেলের মধ্যে থেকেই নেটওয়ার্ক সামলাচ্ছে সে। চরম শত্রু টিল্লুকে শেষ করার ঘুঁটিও সাজাচ্ছে। গোগীর দলে তখন নাম লিখিয়েছে অনেকেই। জাতীয় স্তরের বক্সিং খেলোয়াড় থেকে মহিলা কবাডি খেলোয়াড়ও। তাদের সাহায্যেই তিহার জেল থেকে আদালতে যাওয়ার পথে পালিয়ে যায় গোগী। ফের শুরু হয় গোগীকে ধরতে চোর-পুলিশ খেলা।
পাঁচ বছরের চেষ্টায় গত বছর মার্চ মাসে ফেসবুকে আড়ি পেতে গোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তত দিনে অবশ্য সে হরিয়ানার এক নামী লোকগায়িকা হর্ষিতা দাহিয়াকে খুন করেছে। তারই মতো আরএক গ্যাংস্টার বীরেন্দ্র মানকে খুন করেছে। এমনকি ভিডিয়ো রেকর্ড করে জানিয়েছে, পবন আঁচল ঠাকুর নামে বিরোধী গ্যাংস্টারদের দলের এক ঘনিষ্ঠকেও খুন করেছে সে। একের পর এক খুন করেই চলছিল গোগীর দল। তারপরও পুলিশ নাগাল পায়নি। পুলিশের চোখে ধুলো দিতে সিদ্ধহস্ত গোগী অবশ্য শেষ দানে একটু ভুল করে ফেলে। দিল্লির এক বিখ্যাত ক্যাফেতে বসে নিজের ছবি পোস্ট করে তরুণ গ্যাংস্টার। সেই ছবি দেখেই গোগীকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ।
তখন গোগীর মাথার দাম দশ লক্ষ টাকা। তার পর থেকে প্রায় দেড় বছর জেলে থাকাকালীন জেলের ভিতরে থেকে গোগী আরও অনেক অপরাধ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। এর মধ্যেই শুক্রবার দিল্লির রোহিণী আদালতে তোলা হয় গোগীকে। সেখানে গোগীর দলের বাকি সদস্যরাও ছিল। পুলিশ জানিয়েছে আইনজীবীর ছদ্মবেশে আদালতে প্রবেশ করে শত্রু দলের লোকজন। তারাই গোগীকে লক্ষ্য করে গুলি করে। পুলিশের অনুমান, এরা গোগীর সবচেয়ে বড় শত্রু টিল্লুর দলের লোক হতে পারে। যদিও এক সময়ের বন্ধুই গোগীকে অপরাধ দুনিয়া থেকে চিরমুক্তি দিল কি না, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy