Advertisement
E-Paper

আফগানিস্তানে গ্রন্থাগার নির্মাণ নিয়ে ট্রাম্পের কটাক্ষের সমুচিত জবাব দিল ভারত

চাঁচাছোলা এবং কাটখোট্টা বক্তব্যের জন্য ‘সুনাম’ রয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। পরের মন্তব্যে বেরিয়ে এসেছে তাঁর সেই রূপ।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ ১৭:৩৯
আফগানিস্তানে লাইব্রেরি করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উপহাস ডোনাল্ড ট্রাম্পের। —পিটিআই-য়ের তোলা ফাইল ছবি

আফগানিস্তানে লাইব্রেরি করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উপহাস ডোনাল্ড ট্রাম্পের। —পিটিআই-য়ের তোলা ফাইল ছবি

তাঁর বিদেশ সফর নিয়ে বিরোধীরা কম কটাক্ষ করেননি। প্রশ্ন উঠেছে বিদেশ সফরের খরচের বহর নিয়েও। সরকার পক্ষের সাফাই, কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতিতেই প্রধানমন্ত্রী ঘন ঘন বিদেশ সফর করেন। কিন্তু এবার নরেন্দ্র মোদীর সেই ‘কূটনৈতিক সম্পর্ক’ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল। প্রশ্ন তুললেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট। শুধু প্রশ্ন তোলাই নয়, আফগানিস্তানে মোদীর লাইব্রেরি তৈরি নিয়ে রীতিমতো উপহাস-বিদ্রুপ করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন, ‘ওই লাইব্রেরি কারা ব্যবহার করে, কে জানে।’ অস্বস্তি ঢাকতে তড়িঘড়ি আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে ভারতের অবদানের বিশদ খতিয়ান তুলে ধরেছে নয়াদিল্লি।

বিদেশে বিনিয়োগ বা সাহায্যে রাশ টেনেছে ওয়াশিংটন। তা নিয়েই প্রশ্নের মুখে পড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সংবাদমাধ্যমেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। এই পরিস্থিতিতে বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বসেন ট্রাম্প। সেই বৈঠকের পর অপ্রত্যাশিত ভাবেই সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন। বিদেশে সাহায্য কেন কমিয়ে দিচ্ছে ওয়াশিংটন, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে যা বলেন, তার সারমর্ম ছিল, আমেরিকা কোটি কোটি বিলিয়ন ডলার খরচ করে। কিন্তু বিশ্বের অন্য দেশগুলির অবদান প্রায় কিছুই নেই। সেখানে একমাত্র আমেরিকাই কেন সব দেশের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বসে থাকবে।

এই প্রসঙ্গেই আফগানিস্তানের পুনর্গঠনের এবং তাতে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে উদাহরণ হিসেবে টেনে আনেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তারপর যা বলেন, তাতে মোদী সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলার জন্য যথেষ্ট। আফগানিস্তানে একটি লাইব্রেরি তৈরিতে অর্থসাহায্য করেছে ভারত। সেই বিষয়টি টেনে কার্যত তাচ্ছিল্যের সুরে ট্রাম্প বলেন, ‘‘মোদীর সঙ্গে যখনই দেখা হয়, উনি বারবার আমাকে বলতে থাকেন, আমি আফগানিস্তানে একটি লাইব্রেরি তৈরি করেছি।’’

আরও পড়ুন: ‘জরুরি অবস্থার একনায়কের নাতি’! খোঁচা জেটলির, রাহুলের নিশানায় মোদীই

চাঁচাছোলা এবং কাটখোট্টা বক্তব্যের জন্য ‘সুনাম’ রয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। পরের মন্তব্যে বেরিয়ে এসেছে তাঁর সেই রূপ। এবার তাঁর সংযোজন, ‘‘আপনি জানেন ওটা (লাইব্রেরি) কি?ওতে যা খরচ হয়েছে, আমরা পাঁচ ঘণ্টায় সেই টাকা খরচ করি। আর তারপর যাঁদের জন্য করি, তাঁরা শুধু বলে, আচ্ছা! লাইব্রেরি বানানোর জন্য ধন্যবাদ। ওই লাইব্রেরি কারা ব্যবহার করে কে জানে?’’ ভারত নাম কা ওয়াস্তে মাত্র ২০০ সেনা পাঠিয়ে দায় সেরেছে বলেও কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

স্বাভাবিক ভাবেই মার্কিন মুলুক থেকে ধেয়ে আসা অস্বস্তি চাপা দিতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি নয়াদিল্লি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ভারত চাইলেই কোনও অন্য দেশে সেনা পাঠাতে পারে না। তার জন্য নির্দিষ্ট নীতি রয়েছে। শুধুমাত্র শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া হিসেবে রাষ্ট্রপুঞ্জ বললে, তবেই সেনা পাঠানো যায়। নয়াদিল্লির ওই সূত্রের বক্তব্য, ‘‘আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক নির্দিষ্ট চাহিদাভিত্তিক। পাঁচটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে নির্ধারিত। তার মধ্যে যেমন পরিকাঠামো উন্নয়ন, তেমনই রয়েছে মানবসম্পদ, আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং জীবনযাত্রার মানের উন্নয়নও।’’ আফগানিস্তানের লাইব্রেরি তৈরিতে অর্থসাহায্য যে এই লক্ষ্যেই, সেটাই বোঝাতে চেয়েছে নয়াদিল্লি।

আরও পড়ুন: ৯/১১ হামলা সংক্রান্ত গোপন নথি চুরি! মোটা টাকা দাবি হ্যাকারদের

তবে একইসঙ্গে নয়াদিল্লির বক্তব্য, ট্রাম্প কোন প্রকল্পের কথা বলতে চেয়েছেন, সেটা স্পষ্ট নয়। আফগানিস্তানে ভারতের সাহায্যের ফিরিস্তি দিয়ে ওই সূত্রের দাবি, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে ২০০১ সালের পর থেকে ভারত ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার সাহায্য করেছে। তার মধ্যে রয়েছে জারানাজ থেকে দিলেরাম পর্যন্ত ২১৮ কিলোমিটার রাস্তা, সালমা বাঁধ এবং কাবুলে নয়া সংসদ ভবন। এছাড়াও রয়েছে কাবুলে একটি অভিজাত স্কুল তৈরি এবং ১০০০ আফগান পড়ুয়াকে বৃত্তি প্রদান।

ভারতের পাশাপাশি রাশিয়া এবং পাকিস্তানের মতো দেশের উদাহরণও টেনে এনেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁর দাবি, এই দেশগুলির অবদানও নামমাত্র। দুই দেশকে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা এবং উন্নয়নে আরও দরাজ হাতে সাহায্যের আর্জিও জানিয়েছেন ট্রাম্প। তবে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে মোদীর মতো এমন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেননি।

মোদীকে ‘এনআরআই প্রধানমন্ত্রী’ বলে হামেশাই কটাক্ষ করেন বিরোধীরা। খরচের বহর নিয়েও ধেয়ে আসে বিদ্রুপ কটাক্ষ। লোকসভা ভোটে রাফাল, ঋণ কেলেঙ্কারি, কৃষকদের দুরবস্থা, বেকারত্বের পাশাপাশি এই বিদেশ সফরও বিরোধীদের অন্যতম ইস্যু। ইতিমধ্যেই গতি পাচ্ছে ভোটের প্রচার। এমন সময়ে মোদীর বিদেশনীতি নিয়ে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমন ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করায় বিরোধীরা নয়া অস্ত্র হাতে পেয়ে গেলে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)

Donald Trump Narendra Modi Afganistan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy