Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কেন ফিরলেন আরিফ, ভাবনায় গোয়েন্দারা

দেশে ফেরার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে গ্রেফতার করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। কিন্তু ঠিক কী কারণে আরিফ ওরফে আরিব মাজিদকে ভারতে ফিরতে অনুমতি দিল জঙ্গি সংগঠন আইএস, তা নিয়ে রীতিমতো ধন্দে গোয়েন্দারা। টানা সাত মাস ইরাক-সহ বিভিন্ন দেশে আইএস-এর হয়ে লড়াই করার পরে গত কাল ভোরে দেশে ফিরেছেন মহারাষ্ট্রের ঠাণে জেলার কল্যাণের যুবক আরিফ মাজিদ। এনআইএ-র গোয়েন্দারাই তুরস্কের ইস্তানবুল গিয়ে নিয়ে আসেন তাঁকে।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫৮
Share: Save:

দেশে ফেরার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে গ্রেফতার করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। কিন্তু ঠিক কী কারণে আরিফ ওরফে আরিব মাজিদকে ভারতে ফিরতে অনুমতি দিল জঙ্গি সংগঠন আইএস, তা নিয়ে রীতিমতো ধন্দে গোয়েন্দারা।

টানা সাত মাস ইরাক-সহ বিভিন্ন দেশে আইএস-এর হয়ে লড়াই করার পরে গত কাল ভোরে দেশে ফিরেছেন মহারাষ্ট্রের ঠাণে জেলার কল্যাণের যুবক আরিফ মাজিদ। এনআইএ-র গোয়েন্দারাই তুরস্কের ইস্তানবুল গিয়ে নিয়ে আসেন তাঁকে। কাল রাতের মধ্যেই গ্রেফতার হন আরিফ।

কিন্তু আইএস-এর মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর নাগাল এড়িয়ে আরিফ কী ভাবে ভারতে ফিরলেন?

এই বিষয়টিই এখন সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে ভারতীয় গোয়েন্দাদের। গোয়েন্দাদের একটা বড় অংশের ধারণা, আরিফকে নিশ্চয়ই কোনও বড়সড় নাশকতার দায়িত্ব দিয়ে ভারতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইএস। সেই ছকটা জানতেই গোয়েন্দারা এখন বদ্ধপরিকর।

কাল রাতে গ্রেফতারির পরে আজই এনআইএ-র বিশেষ আদালতে হাজির করানো হয়েছিল ২৩ বছরের যুবককে। তাঁকে আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত এনআইএ-র হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এনআইএ-র বক্তব্য, আরিফের কাছ থেকে বহু তথ্য পাওয়া এখনও বাকি। তাই তাঁকে নিজেদের হেফাজতে চেয়েছেন গোয়েন্দারা। আইএস-এর মতো জঙ্গি সংগঠন ভারত বা অন্য দেশের যুবকদের কী ভাবে সদস্য বানাচ্ছে, ইরাকে আরিফ-সহ কল্যাণেরই চার যুবককে তারা কী ভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, সেই সব তথ্যই এখন আরিফের কাছ থেকে জানতে চান তাঁরা। একই সঙ্গে তাঁদের ভাবাচ্ছে আরিফের ভারতে আসার উদ্দেশ্যও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনআইএ-র এক কর্তা আজ জানিয়েছেন, আরিফের মধ্যে অনুতাপের কোনও চিহ্ন দেখতে পাননি তাঁরা। আরিফ তাঁদের এ-ও জানিয়েছেন, ইসলামি ওই জঙ্গি সংগঠনের হয়ে লড়াইটা তিনি ধর্মীয় দায়বদ্ধতা হিসেবেই মানেন। তা হলে কীসের টানে দেশে ফিরলেন তিনি? সরাসরি জবাব দেননি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই প্রাক্তন ছাত্র। তবে আরিফ জানিয়েছেন, বুলেট ক্ষতের চিকিৎসা করানোটা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

গত ২৩ মে বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন আরিফ। সঙ্গে ছিলেন কল্যাণেরই আরও তিন যুবক। বাগদাদ পৌঁছনোর পরের দিন আরিফ বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছিলেন, সেখানকার এক ধর্মস্থান দর্শনে এসেছেন তাঁরা। যে দলটির সঙ্গে আরিফরা ইরাক গিয়েছিলেন, তার সদস্যরা ফিরে এসে জানান, ইরাক পৌঁছনোর দিন ছ’য়েক পরেই একটি ট্যাক্সি করে ফালুজায় চলে যান ওই চার যুবক। সেই সময় আইএস জঙ্গিদের বড় ঘাঁটি ছিল ইরাকের ওই শহরে।

অগস্টে আরিফের বাড়িতে ফোন করে তাঁর সঙ্গী এক যুবক জানান, লড়াইয়ে ‘শহিদ’ হয়েছেন আরিফ। সেই মতো বাড়ির ছেলের পারলৌকিক ক্রিয়াও সেরে ফেলে মাজিদ পরিবার। কিন্তু গত সপ্তাহে আরিফ নিজে ফোন করে তাঁর বাবাকে জানান, ইরাক থেকে সিরিয়া হয়ে তুরস্কে পালিয়ে গিয়েছেন তিনি। এখন দেশে ফিরতে চান। ছেলেকে ফেরাতে এর পরেই কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আরিফের বাবা।

ইরাকে যুদ্ধ করতে গিয়ে কী ভাবে আহত হয়েছিলেন, তা-ও গোয়েন্দাদের বিস্তারিত জানিয়েছেন আরিফ। জানিয়েছেন, আল রাক্কায় লড়তে গিয়ে বোমার আঘাতে জখম হন তিনি। সেখানকার একটা অস্থায়ী হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু সেই হাসপাতালটি বিমান হানায় উড়ে যায়। তবে প্রাণে বেঁচে যান আরিফ। আরিফের বক্তব্য, ওই বিমান হানার পরেই তাঁর সঙ্গীরা ভেবেছিলেন তিনি আর বেঁচে নেই।

কাল এনআইএ প্রথমে জানিয়েছিল, আরিফের বিরুদ্ধে মামলা শুরুর কোনও ইচ্ছে তাদের নেই। তাঁকে শুধু কিছু প্রশ্ন করার জন্য আটকে রাখা হয়েছে। কিন্তু রাতের মধ্যে কী এমন হল যে আরিফকে তড়িঘড়ি গ্রেফতার করতে হল? গোয়েন্দারা এই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন। এনআইএ-র মুখপাত্র ইন্সপেক্টর জেনারেল আর শাস্ত্রী শুধু জানিয়েছেন, ইউএপিএ-র অন্তর্গত ১৬, ১৮ ও ২০ নম্বর ধারায় আরিফের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। কোনও জঙ্গি সংগঠনের সদস্য হিসেবে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মে লিপ্ত থাকলে এই ধারায় মামলা হয়। এ ছাড়া, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৫ ধারাও দেওয়া হয়েছে আরিফের বিরুদ্ধে। ভারতের কোনও মিত্র দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে সাধারণত এই ধারায় মামলা রুজু করা হয়।

একটি সূত্র জানাচ্ছে, আপাতত মুম্বইয়ের একটি বাড়িতে লুকিয়ে রাখা হয়েছে আরিফকে। সম্ভবত সেখানে রয়েছে তাঁর পরিবারও। আরিফ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। আজ গুয়াহাটিতে পুলিশ কর্তাদের এক বৈঠকের ফাঁকে তিনি বলেন, “সরকার কোনও ভাবেই কারও হেনস্থা চায় না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE