বাংলার বিভিন্ন জেলায় সেনা নামাকে কেন্দ্র করে উত্তাল সংসদ। ‘রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে কেন নামানো হল সেনা? রাজ্যে কী সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে?’ বৃহস্পতিবার রাতে প্রশ্ন করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার সেই প্রশ্নেরই প্রতিধ্বনিতে উত্তাল লোকসভা এবং রাজ্যসভা। শুধু তৃণমূল নয়, বিএসপির প্রশ্নের মুখেও পড়েছে সরকার। কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্য পুলিশকে জানিয়েই রুটিন মহড়ায় নেমেছে সেনা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর আচরণকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নবান্নে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেনা ব্যারাকে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত তিনি নবান্ন ছাড়বেন না, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। কলকাতায় তৃণমূলনেত্রীর এই অগ্নিমূর্তি শুক্রবার সকাল হতেই সরগরম করে তুলেছে দিল্লিকেও। সংসদে বিরোধীদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক তথা কেন্দ্রীয় সরকারকে। লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘সেনাবাহিনী কী বলছে, বোঝা যাচ্ছে না। তারা বলছে, রুটিন মহড়া চলছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য নাকি এই মহড়া। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে পড়ে না।’’ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সংসদে অভিযোগ করেছেন, সেনাবাহিনী বাংলায় মহড়া দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের অনুমতি নেয়নি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘রাজ্যকে না জানিয়ে যে ভাবে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, তা যুক্ররাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত।’’
রাজ্যসভায় বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। তিনি জানান, বাংলার ১৯টি জায়গায় সেনা নেমেছে, সরকারকে কিছুই জানানো হয়নি। এমন ঘটনা বাংলায় আগে ঘটেনি বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
আরও পড়ুন: টোল প্লাজায় সেনা কেন? সারারাত নবান্নে ঘাঁটি গেড়ে রইলেন মমতা
সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কম্যান্ড অবশ্য বৃহস্পতিবার রাত থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করছিল। রাতেই বাহিনীর তরফ থেকে টুইটারে জানানো হয়, রুটিন মহড়া দিচ্ছে সেনা এবং বিষয়টি পুলিশকে আগে থেকেই জানানো হয়েছিল। শুক্রবার সকালে সেনাবাহিনীর বেঙ্গল এরিয়া সদর দফতরের তরফ থেকে সাংবাদিক বৈঠক করা হয়েছে। বাহিনীর তরফে সেখানে জানানো হয়েছে, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে মালবাহী গাড়ির প্রয়োজন হলে খুব দ্রুত কত গাড়ি জোগাড় করা সম্ভব, সেনাবাহিনী রাস্তায় নেমে সেই সমীক্ষাই চালাচ্ছে। এটি সেনার বার্ষিক মহড়ার অঙ্গ এবং রাজ্যের পুলিশের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই এই মহড়ার দিন স্থির করা হয়েছে।
সংসদে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকরও শুক্রবার একই কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, পুলিশকে আগেই জানানো হয়েছিল যে সেনাবাহিনী ২৮, ২৯ ও ৩০ নভেম্বর মহড়া দেবে। কিন্তু ২৮ তারিখ বন্ধ ও অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকায় ওই দিন মহড়ার বিষয়ে পুলিশ আপত্তি জানায়। সেই আপত্তি মেনে নিয়ে ৩০ নভেম্বর এবং ১ ও ২ ডিসেম্বর মহড়ার তারিখ স্থির করা হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ দিন বলেছেন, ‘‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রী যে আচরণ করছেন, তা দেখে তিনি বিস্মিত এবং ব্যাথিত।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ‘রাজনৈতিক হতাশা’ থেকে সেনাকে যে ভাবে রাজনীতির মধ্যে টানছেন, তা ‘দুর্ভাগ্যজনক’।