Advertisement
E-Paper

লজ্জা কি শুধু ওই তরুণীর? রাঘববোয়ালদের নয়?

রোজ খবরের শিরোনামে তিনি। পরীক্ষায় প্রথম হয়ে প্রথম বার এসেছিলেন খবরে। তবে তিনি অন্য প্রথম স্থানাধিকারীদের মতো নন। ব্যতিক্রমী। তাই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলপ্রকাশের রেশ থিতিয়ে যাওয়ার পরেও তিনি মাঝেমধ্যেই শিরোনামে আসছেন। গত কয়েকদিনে রোজ আসছেন।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৬ ০০:১৬
আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রুবিকে। ছবি: পিটিআই।

আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রুবিকে। ছবি: পিটিআই।

রোজ খবরের শিরোনামে তিনি। পরীক্ষায় প্রথম হয়ে প্রথম বার এসেছিলেন খবরে। তবে তিনি অন্য প্রথম স্থানাধিকারীদের মতো নন। ব্যতিক্রমী। তাই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলপ্রকাশের রেশ থিতিয়ে যাওয়ার পরেও তিনি মাঝেমধ্যেই শিরোনামে আসছেন। গত কয়েকদিনে রোজ আসছেন।

আসলে বিহারের উচ্চমাধ্যমিক বোর্ডের পরীক্ষার ফল প্রকাশের রেশ থিতিয়ে যেতে পারেনি তাঁকে কেন্দ্র করেই। তিনি রুবি রাই। দেশের প্রায় কোনও প্রান্তেই এখন তাঁর নামটা আর অচেনা নয়। উচ্চমাধ্যমিকে ‘প্রথম স্থানাধিকারী’ তরুণী আসলে যে প্রথম স্থানাধিকারী নন, তা ফাঁস হতে খুব একটা সময় লাগেনি। তার জেরেই রুবি রাইয়ের ‘নাম’ এখন দেশজোড়া।

সংবাদমাধ্যমে রুবি এখন রোজকার চর্চার বিষয়। তিনি পলিটিক্যাল সায়েন্সকে কী উচ্চারণ করেছেন, তিনি তুলসীদাস সম্পর্কে একটি বাক্যে কেমন ‘অসামান্য’ রচনা লিখেছেন, ভারতের মানচিত্রে তাঁর নিজের রাজ্য বিহারের অবস্থান জানতে চাওয়ায় তিনি কী জবাব দিয়েছেন— তাঁর সম্পর্কে এমন বিভিন্ন তথ্য রোজ সামনে আসছে। হাসাহাসি, কটাক্ষ, রসিকতা চলছে বিস্তর। রুবি রাইয়ের গ্রেফতার হওয়ার খবরেও সর্বস্তরে কেমন একটা ‘বেশ হয়েছে’ গোছের প্রতিক্রিয়া।

অপরাধ করলে শাস্তি যে প্রাপ্য, তা নিয়ে নিশ্চয়ই কোনও সংশয় নেই। বিপুল অর্থের বিনিময়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মেধাতালিকার প্রথম স্থান বা অন্য যে কোনও গৌরবজনক স্থান কিনে নেওয়ার চেষ্টা যে অপরাধ, তা নিয়েও কোনও দ্বিমত থাকা উচিত নয়। কিন্তু মূল অপরাধী কি তিনিই? বিহারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মেধাতালিকা নিয়ে যত আলোচনা, যত নিন্দা-মন্দ, যত অবিশ্বাস, সেই সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে কি রুবি রাইয়ের থাকার কথা?

যাঁরা বিপুল ঘুষ নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকা বিক্রি করলেন, তাঁদের লজ্জা কি কোনও অংশে কম? শিক্ষাব্যবস্থা সামলানোর গুরুভার অর্পিত যাঁদের কাঁধে, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলার দায়িত্ব যাঁদের হাতে, তাঁদের কলঙ্ক কি লঘু? দেশের ভবিষ্যৎ বেচে দিয়ে লক্ষ-কোটি টাকা লুঠ করলেন বা বছরের পর বছর ধরে করে আসছেন যাঁরা, তাঁদের অপরাধ কি আরও মারাত্মক নয়?

অন্ধকারটা আসলে অনেক গভীর, অনেক গাঢ়। এর গভীরতা শুধু রুবি রাইকে দিয়ে মাপা সম্ভব নয়। শুধু মাত্র বিহারের উচ্চমাধ্যমিক বোর্ডকে আতস কাচের তলায় রেখেও এই কলঙ্ক-লিখনের সবক’টা পাতার পাঠোদ্ধার সম্ভব নয়। শিকড় অনেক গভীরে। গোটা ব্যবস্থাটাই প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে। রুবি রাই এই গোটা পর্বে একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র চরিত্র। ব্যবস্থায় বিপুল ক্লেদ আর অস্বচ্ছতা জমাট বাঁধলে ফল কী হয়, রুবি রাই তার উদাহরণ মাত্র। আসল রাঘববোয়ালরা তো অন্য! তাঁদের গর্দানেও টান পড়তে শুরু করেছে মানছি। বিহারে পর পর গ্রেফতারির খবর আসছে।

কিন্তু আবার বলি, শুধু বিহারকে দিয়ে এ আঁধারের গভীরতা মাপা যাবে না। যেটুকু সামনে এসেছে, তা হিমশৈলের শিখর মাত্র। অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে আরও অনেকটা।

লজ্জা আজ শুধু রুবি রাইয়ের নয়। এই ঘৃণ্য অস্বচ্ছতা গোটা ব্যবস্থার লজ্জা, গোটা ভারতের লজ্জা।

স্বচ্ছ ভারত অভিযান চলছে দেশে। বহিরঙ্গের সেই স্বচ্ছতায় কী লাভ, যখন ব্যবস্থার অন্তর এমন ক্লেদাক্ত?

Rubi Rai Bihar Topper Anjan Bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy