‘বাংলাদেশি ভাষা’ খুঁজে পেয়ে বিতর্ক আর বিজেপির অস্বস্তি, দু’টোই বাড়িয়েছে অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশ। শাহেরই দল বিজেপির শাসন ত্রিপুুরায়। সেখানকার বহু মানুষের মুখেরবাংলায় পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে পূর্ববঙ্গের প্রভাব বেশি। কথার টানেই তা প্রকট। তা হলে এই রাজ্যের বাসিন্দাদের বিজেপি কি বাংলাদেশি বলবে? এই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে ত্রিপুরার বিরোধী শিবির।
পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া ভারতের আর একটি বাংলাভাষী রাজ্য হল ত্রিপুরা। এই রাজ্যের গা ঘেঁষেই বাংলাদেশ। অনেককাল আগে থেকে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ ত্রিপুরায় বসবাস করছেন। ত্রিপুরার দক্ষিণ জেলার সাব্রুম মহকুমায় চাটগাঁইয়া ভাষা, বিলোনিয়ায় নোয়াখালির, উদয়পুর-সোনামুড়া এলাকায় কুমিল্লা অঞ্চলের ভাষার টান রয়েছে। কমলপুর, কৈলাসহর, ও ধর্মনগর এলাকায় শোনা যায়শ্রীহট্টের বাংলা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা থেকে আগরতলায় এসে বসতি গড়েছেন বহু মানুষ। ফলে বাংলাদেশের এই দুই অঞ্চলের ভাষার সংমিশ্রণের ফলে ত্রিপুরার রাজধানীর বাসিন্দাদের বাংলাতে আলাদা টান রয়েছে। ফলে বিরোধীদের বক্তব্য, এই পূর্ববঙ্গীয় বাংলাকে অস্বীকার করলে তো ত্রিপুরার ভাষাকেই অস্বীকার করতে হয়!
ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি আশিসকুমার সাহার মতে, বাংলা ভাষা সংবিধানের অষ্টম তফসিলের অন্তর্ভুক্ত। ফলে বিজেপি এক রকম সংবিধানকেই অমান্য করছে। তিনি বলেন, ‘‘পূর্ব-পাকিস্তান হওয়ার আগেই যাঁরা ত্রিপুরা এবং অসমে এসেছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই পশ্চিমবঙ্গের মতো বাংলা বলেন না। ভাষায় ও-পারের বিভিন্ন অঞ্চলের টান রয়েছে। এমনকি ত্রিপুরার জনজাতিদের একাংশও ককবরক নয়, বাংলা বলেন।’’ আশিসের প্রশ্ন, এঁরা সবাই কি বাংলাদেশি?
ত্রিপুরা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা পলিটব্যুরো সদস্য জিতেন্দ্র চৌধুরীর কথায়, ‘‘১৯৭১ সালের আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকেরা ত্রিপুরায় এসে বসবাস করছেন। ফলে এখানকার বেশির ভাগ মানুষের ভাষায় ও-পারের বিভিন্ন অঞ্চলের টান রয়েছে। এখন যদি ত্রিপুরার কাউকে ভাষার কারণে দিল্লির পুলিশ আটক করে, তা হলে তাঁদেরও ‘বাংলাদেশি’ বলে চিহ্নিত করবে। কারণ এই জায়গার বাংলা তো পশ্চিমবঙ্গের মতো নয়।’’
ত্রিপুরা বিজেপির প্রধান মুখপাত্র সুব্রত চক্রবর্তী কিন্তু মেনে নিচ্ছেন, দিল্লির বঙ্গভবনে সংশ্লিষ্ট নোটিসটি দিতে গিয়ে দিল্লি পুলিশের ‘ভুল হয়ে থাকতে পারে’। তিনি বলেন, ‘‘সমস্ত বাংলাভাষী বাংলাদেশি নন। আবার সমস্ত বাংলাভাষী ভারতীয় নন। বাংলাভাষী ও বাংলাদেশি দু’টি (আলাদা) বিষয়। কিন্তু বিরোধীরা দু’টিকে এক করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। ভাষার টান কোনও বিষয় নয়। বাংলাদেশি চিহ্নিত করার জন্য আলাদা কোনও বিষয় আছে কি না, সেটাই মূল বিষয়।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)