লাডেই মুদুলি ওরফে লিলি।
বাবাকে দেখেছেন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে। টানাটানির সংসারে অল্প বয়সেই তিন দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। সংসার চালাতে বাবাকে সাহায্য করতে নিজেই কাজে নেমে পড়েছিলেন লিলি। যখন যা পান সেই কাজই করেন। কখনও ইট বয়েছেন, কখনও বালি তুলেছেন। না, এ কাজে বিন্দুমাত্র সঙ্কোচ নেই তাঁর। পেটে যখন খিদে, কাজে আবার লাজ কী!
তবে এর মধ্যেই তিলে তিলে স্বপ্ন বোনার কাজ শুরু করে দিয়েছেন লিলি। তিন দিদিকে যে ভাবে অল্প বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল, তেমনটা চান না লিলি। তিনি তাঁর জীবনকে অন্য খাতে বয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। অভাবের সংসার এবং তাঁদের সমাজের রীতিকে অবদমিত করে উচ্চশিক্ষার দৌড়ে নিজের নাম লিখিয়েছেন লিলি।
ওড়িশার কোরাপুট জেলার দেবীঘাট পঞ্চায়েতের ভোগেইপাদার গ্রামের বাসিন্দা লাডেই মুদুলি ওরফে লিলি। তিনি পারাজা আদিবাসী সম্প্রদায়ের মেয়ে। তবে গ্রামের সকলের কাছে তিনি লিলি নামেই বেশি পরিচিত। বাবা রামচন্দ্র মুদুলি, মা বল্লা মুদুলি। লিলিরা চার বোন। ছ’জনের এই সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী রামচন্দ্র। তিনি খেতমজুর। যা আয় করেন তাই দিয়ে কোনও মতে সংসার চলে। অভাবের সংসারে তিন মেয়ের বিয়ে আগেই দিয়ে দিয়েছিলেন।
বয়স তখন ১২। সংসারের অবস্থা দেখে সেই বয়সেই হাতে তুলে নিয়েছিলেন কোদাল, ঝুড়ি। নির্মাণশ্রমিক হিসাবে দিনমজুরের কাজ শুরু করেন লিলি। শৈশব থেকেই লিলির স্বপ্ন ছিল সরকারি চাকরি করবেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর লক্ষ্য বদলেছিল। কোরাপুটের সরকারি গার্লস স্কুলে পড়ার সময় লিলি স্থির করেন তিনি শিক্ষকতার চাকরি করবেন। লিলি বলেন, “শিক্ষকরা যে ভাবে আমাদের পড়াতেন, সেই পড়ানো থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম, যদি চাকরি করতে হয় তা হলে শিক্ষকতার চাকরিই করব। দিনমজুর হিসাবে কাজ করার জন্য কোনও দিন লজ্জিত হইনি। দিনে ২০০ টাকা পেতাম। তাই দিয়েই নিজের পড়াশোনার খরচ জোটাতাম। কিছু টাকা সংসারেও দিতাম।”
তাঁদের পারাজা সম্প্রদায়ের মধ্যে মেয়েদের অল্প বয়সেই বিয়ের রীতি রয়েছে। কিন্তু সেই রীতিকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন লিলি। কোরাপুট মহিলা কলেজ থেকে ৬২ শতাংশ পেয়ে দ্বাদশ পাশ করেন। তার পর এলিমেন্টারি এডুকেশন-এ ডিপ্লোমা করেন। ৮৫ শতাংশ পেয়ে পাশ করেছেন। শিক্ষক হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন লিলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy