নয়াদিল্লি ও ঢাকার মধ্যে সম্পর্ক এখন ভাল নয়, সরাসরি বললেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। রাষ্ট্রপুঞ্জের বার্ষিক সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে নিউ ইয়র্কে তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের ছাত্ররা যা করেছেন, সেটা ভারতের পছন্দ নয়। কারণ, ওই বিক্ষোভই শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়েছে।” তাঁর দাবি, হাসিনাকে নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করছিল ভারত। আর তাতেই হাসিনা দেশে সমস্যা পাকাচ্ছিলেন। তাঁর বক্তব্য, ভারত থেকে প্রচুর ভুয়ো খবর আসছে যাতে বাংলাদেশের ঘটনা ‘ইসলামি আন্দোলন’ বলে প্রচার করা হচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে। এতেই সম্পর্ক আরও খারাপ হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ইউনূস।
গত অগস্টে ছাত্র অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে বাংলাদেশ থেকে টানা আসতে থাকা ভারত বিদ্বেষী বার্তা এবং দেশের উত্তর-পূর্ব অংশ দখলের হুমকি প্রসঙ্গে নয়াদিল্লি একাধিক বার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। উদ্বেগ জানানো হয়েছে এই পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশে বেড়ে চলা সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায়। সে সবে আমল দেয়নি ইউনূস সরকার। এ দিকে, বাংলাদেশ থেকে গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নানা সমস্যায় ভারতকেই দায়ী করেন ইউনূস। ভারতের বিরুদ্ধে সার্ক-এ দাদাগিরির অভিযোগ করেন তিনি। ইউনূস বলেন, “একটা দেশের রাজনীতির উপরে তো সার্ক চলতে পারে না। তাই কাজ হচ্ছে না।”
বস্তুত, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিয়োনাল কোঅপারেশন (সার্ক)-এর শেষ বৈঠক হয়েছিল ২০১৪ সালে। তার পরের অধিবেশন ২০১৬ সালে ইসলামাবাদে হবে বলে ঠিক ছিল। তার আগে জম্মু-কাশ্মীরের উরিতে পাকিস্তানের মদতে সন্ত্রাসবাদী হামলার অভিযোগ ওঠে এবং সেটা ভেস্তে যায়। নয়াদিল্লি দৃঢ় ভাবে বলেছে, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসে পাকিস্তান মদত দিয়ে যাওয়ার ফলেই সার্কের কাজ করা যাচ্ছে না। সার্কের সদস্য থাকলেও ভারত গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেছে বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে ভারত ও পড়শি রাষ্ট্রগুলির জোট ‘বিমস্টেক’-এ। এপ্রিলে ষষ্ঠ বিমস্টেক সম্মেলনের পার্শ্ববেঠকে ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাইল্যান্ডে মুখোমুখি হয়েছিলেন। এই মঞ্চ থেকেই নয়াদিল্লি বাংলাদেশকে ঘিরে নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছিল।
ভোট নিয়ে টালবাহানার অভিযোগ ঘিরে ইউনূস আর বাংলাদেশের সেনার সম্পর্কে দেখা দিয়েছে জটিলতা। ভোট আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে করাতে হবে বলে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপ দেওয়া হয়েছে সেনার তরফেও। ইউনূস নিউ ইয়র্কে বলেছেন, তাঁর প্রশাসন আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই ‘অবাধ, স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ সাধারণ নির্বাচন’ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। বাংলাদেশবাসী ১৫ বছর পরে খাঁটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ পাবেন বলেও দাবি করেছেন তিনি।
এ দিকে, ঢাকায় ‘ঝটিকা মিছিল আয়োজনের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির’ চেষ্টা করার অভিযোগে ইউনূসের প্রশাসন গত কাল ২৪৪ জন আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করে। আজ আওয়ামী লীগ একটি বিবৃতিতে বলে, ‘অবৈধ দখলদার খুনি-ফ্যাসিস্ট ইউনূস সমগ্র দেশটাকে জাহান্নামে পরিণত করেছে।’ বিএনপির ‘সন্ত্রাসী-ক্যাডার বাহিনী’ ওই মিছিলে হামলা করেছিল বলেও অভিযোগ করা হয়।
মে মাসে আওয়ামী লীগকে কার্যত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ইউনূস প্রশাসন। তার পরে হাসিনার দল রাজনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। কর্মী-সমর্থকদের উপরে সরকার দমনপীড়ন চালাচ্ছে বলে দাবি করে তারা বার্তা দিয়েছে, এখন রাস্তাই একমাত্র রাস্তা। গত কাল আওয়ামী লীগ ও তাদের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন ঢাকার পথে নেমেছিল। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, ১৪টি ‘ককটেল’ এবং সাতটি ব্যানার উদ্ধার করা হয় মিছিল থেকে। ওই মিছিলে যোগ দেওয়া লোকজনকে যাঁরা অর্থ, আশ্রয় অথবা জনবল দিয়ে সাহায্য করেছেন, তাঁদের তথ্য সংগ্রহ চলছে বলেও জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এর আগে পুলিশ ধারাবাহিক অভিযানে গ্রেফতার করেছে আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনের পাঁচশোরও বেশি নেতাকর্মীকে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)