Advertisement
E-Paper

জাকিরের সব বক্তৃতার সিডি খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে, বললেন রাজনাথ

ভারত, বাংলাদেশ ও এই উপমহাদেশে সন্ত্রাসবাদে উস্কানি দেওয়ার ব্যাপারে জাকির নাইকের ভূমিকা কতটা, তা খতিয়ে দেখতে শুরু করল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ শুক্রবার বলেছেন, ‘‘আমরা এখন জাকির নাইকের বিভিন্ন মন্তব্য আর সভা-সমিতিতে দেওয়া ভাষণের যাবতীয় সিডি আর ভিডিও ভাল ভাবে খতিয়ে দেখছি। তারই প্রেক্ষিতে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৬ ১৮:৩৪

ভারত, বাংলাদেশ ও এই উপমহাদেশে সন্ত্রাসবাদে উস্কানি দেওয়ার ব্যাপারে জাকির নাইকের ভূমিকা কতটা, তা খতিয়ে দেখতে শুরু করল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। ভারতে জাকিরের মালিকানাধীন একটি টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করার জন্য দিল্লিকে অনুরোধ করেছিল বাংলাদেশ সরকার। ঢাকার অভিযোগ ছিল, ওই টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে উস্কানিমূলক ধর্মীয় প্রচার করে চলেছেন ‘ধর্মপ্রচারক’ জাকির নাইক। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ বার জাকিরের ধর্মপ্রচার সংক্রান্ত বিভিন্ন সিডি ও ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ শুক্রবার বলেছেন, ‘‘আমরা এখন জাকির নাইকের বিভিন্ন মন্তব্য আর সভা-সমিতিতে দেওয়া ভাষণের যাবতীয় সিডি আর ভিডিও ভাল ভাবে খতিয়ে দেখছি। তারই প্রেক্ষিতে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’ ঢাকার গুলশনে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর জাকিরের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ ওঠে তিনিই পরোক্ষে ওই সন্ত্রাসবাদীদের ‘দীক্ষিত’ করেছিলেন। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশও এ দিন বলেছেন, ‘‘আমি মুম্বইয়ের পুলিশ কমিশনারকে জাকিরের সব ভাষণ আর বিবৃতির ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখে রিপোর্ট দিতে বলেছি।’’

জাকিরের বিরুদ্ধে অভিযোগটা এই প্রথম উঠল, এমন নয়। উস্কানিমূলক ধর্মীয় মন্তব্যের জন্য এর আগেও বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন জাকির নাইক। ২০০৬ সালের ১১ জুলাই ট্রেনে বিস্ফোরণের ঘটনার পর মহারাষ্ট্র পুলিশের সন্ত্রাসদমন শাখা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। কিন্তু যথাযথ তথ্যপ্রমাণ না থাকায় সে যাত্রায় রেহাই পেয়ে গিয়েছিলেন জাকির। ২০০৬ সালের ওই ঘটনায় মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় ট্রেনে বিস্ফোরণের পর পর ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ২০৯ জনের। জখমের সংখ্যা ছিল ৭০০-র বেশি।

ওই সময় প্রকাশ্যে জাকিরের বিবৃতি বা ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল মহারাষ্ট্র পুলিশ। নিহত আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে ‘জঙ্গি’ মানতে রাজি না হওয়ায় জাকিরকে ব্রিটেন ও কানাডায় কোনও ধর্মীয় সম্মেলন করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাঁর উস্কানিমূলক ধর্মীয় মন্তব্যের জন্য মালয়েশিয়া সহ ১৬টি মুসলিম রাষ্ট্র তাঁকে নিষিদ্ধ করেছিল। এমনকী, গত ৬ দশক ধরে তিনি রয়েছেন যেখানে, সেই মুম্ব্রাতেও তাঁর মন্তব্য ও গতিবিধির ওপর জারি হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা।

গালে কাঁচাপাকা দাড়ি। মাথায় ফেজটুপি। বয়স বছর পঞ্চাশেক। মুখে চোস্ত ইংরেজি, আবার কোনও কিছুর ব্যাখ্যায় প্রয়োজনে মুম্বইয়া বুলি। ধর্মপ্রচারক জাকির নাইককে এত দিন এ ভাবেই টিভিতে ইসলামের গুণগান করতে দেখেছেন অনেকে। বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠেছে, তিনি নাকি ধর্মপ্রচারের নামে সন্ত্রাসের প্রচার চালান। কট্টরপন্থী বক্তব্যের জন্য ব্রিটেন বা কানাডায় তাঁর প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও ভারতে কিন্তু তিনি দিব্যি ছিলেন। জন্ম মুম্বইয়ে, ১৯৬৫ সালে। কর্নাটকের একটি কলেজ থেকে করেছিলেন এমবিবিএস। তার পরেই হয়ে যান ধর্মপ্রচারক।

বাদ সাধল ঢাকার গুলশনে জঙ্গি হামলা। সে দেশের দাবি, হামলাকারী জঙ্গির মধ্যে দু’জন জাকির নাইকের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত ছিল। এমনিতেই জাকিরের পিস চ্যানেল বাংলাদেশে ভীষণ জনপ্রিয়। এই তথ্য পেয়েই ঢাকা পিস চ্যানেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নয়াদিল্লিকে অনুরোধ জানায়। আবার ওই ইসলামি নেতার সঙ্গে একই মঞ্চে হাজির থাকায় বিজেপির গোলার মুখে পড়েছেন কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ।

গত কাল থেকেই বিভিন্ন টিভি চ্যানেল জাকিরের কয়েকটি বিতর্কিত ভিডিও ক্রমাগত সম্প্রচার করছে। তাদের দাবি, একটি ভিডিওয় জঙ্গি কার্যকলাপে উস্কানি দিয়েছেন তিনি। অন্য একটায় ওসামা বিন লাদেনকে সমর্থন করেছেন।

এ সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জাকিরের পাল্টা দাবি, তিনি কোনও ভাবেই জঙ্গি কার্যকলাপে উস্কানি দেননি। একটি ভিডিওয় কারসাজি করে তাঁর মুখে ওসামাকে সমর্থনের কথা বসানো হয়েছে। আর বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ওই দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ আমায় চেনেন। তাঁদের মধ্যে ৫০ শতাংশ আমার ভক্ত। কিন্তু ভক্তেরা আমার সব কথা মেনে চলেন না।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, হয়তো অনেকে তাঁর কথা শুনে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হন। ফলে অন্য ইসলামি প্রচারকদের কথা শুনতে তাঁদের আগ্রহ বাড়ে। পরে অন্য প্রচারকের কথায় তাঁদের মনে কট্টরপন্থার প্রভাব পড়তে পারে।

জাকির যাই বলুন, এ যাত্রা তাঁকে সহজে রেহাই দিতে রাজি নয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কারণ, নানা সূত্র থেকে জাকির ও পিস টিভি সম্পর্কে তথ্য হাতে এসেছে গোয়েন্দাদের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, জাকিরের ওই চ্যানেল দুবাই থেকে সম্প্রচার করা হয়। ভারতের কিছু অংশে তা দেখা যায় কেব্‌ল টিভি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। চ্যানেলের নথিবদ্ধ সদর দফতর মুম্বইয়ে। তাই পিস টিভি নিয়ে আলাদা তদন্ত শুরু করেছে মুম্বই পুলিশ। রাজ্যগুলিকে পিস টিভির সম্প্রচার নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছেন নয়া তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু।

জাকির আপাতত সৌদি আরবে। ১১ জুলাই তাঁর দেশে ফেরার কথা। ফিরলে তাঁকে জেরা করা হবে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর। গুলশন কাণ্ড ছাড়াও তাঁর বক্তব্যে প্রভাবিত হয়ে জঙ্গি কার্যকলাপে জড়ানোর তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি।

সম্প্রতি হায়দরাবাদে আইএসের একটি মডিউলের সদস্যদের গ্রেফতার করে এনআইএ। গোয়েন্দাদের দাবি, ওই মডিউলের মাথা মহম্মদ ইব্রাহিম ইয়াজদানি স্বীকার করেছে, সে জাকিরের বক্তব্যেই প্রভাবিত হয়েছিল। গত বছর নিউ ইয়র্ক সাবওয়েতে আত্মঘাতী হামলা চালাতে গিয়ে ধরা পড়ে আফগান বংশোদ্ভূত মার্কিন নাজিমুল্লা জাজি। আবার গ্লাসগো বিমানবন্দরে হামলা চালায় বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা কপিল আহমেদ। দু’জনেই জাকিরের ভক্ত বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।

আরও পড়ুন- শোলাকিয়ায় রাতভর সাঁড়াশি অভিযান, এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার মোট ৮

জাকিরের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন থাকায় অনেক আগেই পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করেছে ব্রিটেন, কানাডার মতো দেশ। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে ভারত এত দিন এই ইসলামি নেতা সম্পর্কে সচেতন হয়নি কেন? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা মানছেন, সত্যিই ‘দেরি’ হয়েছে।

এক অনুষ্ঠানে জাকিরের সঙ্গে একই মঞ্চে হাজির থাকায় বিতর্কে জড়িয়েছেন কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ। বিজেপি নেতা শ্রীকান্ত শর্মার কথায়, ‘‘কংগ্রেস সব সময়েই জঙ্গিদের নিয়ে রাজনীতি করে।’’ দিগ্বিজয়ের পাল্টা দাবি, ‘‘যে অনুষ্ঠানের ভিডিও দেখানো হচ্ছে, তাতে সন্ত্রাসের বিরোধিতা করা হয়েছিল। আমি সব ধরনের সন্ত্রাসের বিরোধী। ঢাকা বা দিল্লির হাতে জাকিরের বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকলে তারা পদক্ষেপ করুক।’’

Zakir Naik Was Questioned By ATS For 11 7 Mumbai Train Blasts zakir naik will be questioned after his return from Saudi Arab in 11th July, 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy