লোকসভার ভোটপর্বই এখনও শুরু হয়নি। তার মধ্যেই বিজেপির সম্ভাব্য উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি অরুণ জেটলির নাম নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিল এনডিএ জোটের শরিক অকালি দল। যা নিয়ে রীতিমতো আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে বিজেপি ও জোটের অন্দরে। বিষয়টি নিয়ে বিড়ম্বনা এড়াতে শেষ পর্যন্ত মুখ খোলেন জেটলি নিজেই। জানিয়ে দেন, তিনি এ ধরনের কোনও দৌড়ে নেই।
অতীতে এনডিএ ক্ষমতায় থাকাকালীন লালকৃষ্ণ আডবাণীকে উপপ্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন শরিক দলের নেতা জর্জ ফার্নান্ডেজ। এ বারেও প্রস্তাবটা উঠল এনডিএ-র শরিক দলের পক্ষ থেকেই। জোটের অন্যতম শরিক অকালি দলের নেতা প্রকাশ সিংহ বাদল কাল পঞ্জাবে এক জনসভায় সরাসরি বলেন, মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে উপপ্রধানমন্ত্রী হবেন জেটলি। আর না হলে? সে সমাধানও ছিল বাদলের কাছে। জানান, জেটলি অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্বও পেতে পারেন।
স্বাভাবিক ভাবেই বাদলের এই মন্তব্য নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে এনডিএ-র অন্দরে। দলের একাংশ বলছেন, এটা ঠিক যে, গত কয়েক মাস ধরেই রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি নিজেকে মোদীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে তুলে ধরেছেন। বিজেপির অন্দরে এখন জেটলিকে অনেকেই ‘নম্বর-টু’ হিসেবে দেখেন। দলের অনেক নেতাই মনে করেন, মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে তিনিই সেই জায়গাটি নেবেন, যেটি কেন্দ্রে মন্ত্রী থাকাকালীন কংগ্রেসে ছিল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। প্রণববাবু বরাবরই ‘নম্বর-টু’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ বারেও গোটা বিজেপি যখন মনে করছে, লোকসভা ভোটের পরে দল কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসবে এবং মোদীই প্রধানমন্ত্রী হবেন, তখন জেটলিও রাজ্যসভার সাংসদ তকমা ঝেড়ে পঞ্জাবের অমৃতসর থেকে ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিজেপি সূত্রেই খবর, ভোট লড়ার জন্য তিনি অনেক আগে থেকে প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছিলেন। ফলে তাঁকে নিয়ে আলোচনাটা এগোতেই পারে।
বিষয়টি নিয়ে সঙ্ঘও তাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছে। সঙ্ঘের বক্তব্য, দল কাকে উপপ্রধানমন্ত্রী করবে, সেটি বিজেপির অভ্যন্তরীণ বিষয়। জেটলি সেই পদে গেলে সঙ্ঘের কোনও আপত্তি নেই। সঙ্ঘের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশেরই বক্তব্য হল, মোদীকে যখন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হয়, তখনই তাঁর সেনাপতি হিসেবে জেটলির নামেও সিলমোহর বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিছু নেতা আবার বলছেন, যদি ভোটের পর শরিক জোটাতে গিয়ে মোদীর নামে আপত্তি ওঠে, তা হলে জেটলিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এগিয়ে দেওয়া যেতেই পারে। জেটলির মতো আধুনিক, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির লোক অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হতে পারে বলে বক্তব্য এই শিবিরের।
কিন্তু এ সব তো পরের কথা। ভোটের আগেই বাদল আচমকা এমন মন্তব্য করে বসলেন কেন?
বিজেপি শিবিরের বক্তব্য, বাদলের সঙ্গে মোদীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সম্প্রতি উভয়ে মিলে এক মঞ্চে অনেক অনুষ্ঠান করেছেন। বাদল গুজরাতেও গিয়েছেন বহু বার। সুতরাং মোদীর সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়া পোড় খাওয়া রাজনীতিক বাদল এমন আলটপকা মন্তব্য করেছেন, এমনটা মানতে চাইছেন না কেউই। এর পিছনে কোনও সুচিন্তিত কৌশল থাকতেই পারে।
কিন্তু আপাতত সেই কৌশল নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন অনেকেই। দলে কোনও আনুষ্ঠানিক আলোচনা ছাড়া জেটলির নাম এ ভাবে উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভেসে ওঠায় অসন্তুষ্ট সুষমা স্বরাজের মতো অনেকেই। এনডিএ জোটের অন্যতম শরিক শিবসেনাও খুশি নয় বিষয়টি নিয়ে। তাদের নেতা সঞ্জয় রাউত অবশ্য প্রকাশ্যে বলেছেন, “মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে কাকে উপপ্রধানমন্ত্রী করবেন, সেটি তাঁর বিষয়। তবে এ নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি।”
তাঁকে নিয়ে দিনভর দল ও শরিকের এই অস্বস্তি কাটাতে অবশেষে ময়দানে নামতে হয় খোদ জেটলিকে। তিনি যে এই ধরনের কোনও পদের দৌড়ে নেই, তা স্পষ্ট করতে গিয়ে জেটলি বলেন, “আমি কোনও পদের দাবিদারই নই। আর মোদীকে সরিয়ে আমার পদ নেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। মোদীই প্রধানমন্ত্রী হবেন।” তা হলে বাদলের এই বক্তব্য কি একেবারেই ভিত্তিহীন? জেটলির জবাব, “প্রচারের সময় এ ধরনের অনেক কথাই হয়। হতে পারে, বাদলের মনে হয়েছে, অমৃতসর কেন্দ্র থেকে এমন একজনের সাংসদ হওয়া উচিত, যিনি এলাকার বিষয়গুলি দিল্লির দরবারে নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু আমি এমনিতেই সেই বিষয়ে যথেষ্ট সক্ষম। তার জন্য কোনও পদের দরকার নেই।”
বিজেপির একটি সূত্রের বক্তব্য, বাদল যা বলেছেন, তার পিছনে পঞ্জাবের স্থানীয় রাজনীতি রয়েছে। জেটলির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ। যিনি শুধু রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীই নন, বাদলের প্রবল প্রতিপক্ষও। বিজেপির এক নেতা বলেন, “জেটলিকে জেতানোর জন্য দলের কর্মীরা তো পরিশ্রম করছেনই। কিন্তু বাদলও এখন অমরিন্দরকে হারিয়ে জেটলিকে জেতাতে উঠেপড়ে লেগেছেন। তাঁর কাছে আত্মসম্মানের প্রশ্ন এটা।” ওই নেতার বক্তব্য, বাদল দেখাতে চেয়েছেন, জেটলির মর্যাদা অমরিন্দরের থেকে ঢের বেশি। অমরিন্দর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু জেটলি দেশের উপপ্রধানমন্ত্রী কিংবা অর্থমন্ত্রী হতে পারেন।
আসল বিষয় যা-ই হোক, বাদলের এই একটি মন্তব্যে দিল্লির ক্ষমতার অলিন্দে ভোটের আগেই কয়েক ধাপ এগিয়ে গেলেন অরুণ জেটলি।