Advertisement
E-Paper

ও-পার বাংলার রানওয়ে বন্ধ, দুর্ভোগ এ-পারে

রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। তাই রাতে বন্ধ থাকছে ঢাকা বিমানবন্দরের রানওয়ে। আর তার জন্য ভোগান্তির সীমা নেই কলকাতার যাত্রীদের! প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নিয়মিত মালপত্র পাচ্ছেন না হংকং থেকে কলকাতায় আসা যাত্রীরা। রবিবার রাতে অন্তত ৫০ জন যাত্রীর মালপত্র আসেনি। ড্রাগন এয়ার বিমান সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ওই মালপত্র পাওয়া যাবে তিন-চার দিন পরে।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৪ ০২:৪৫

রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। তাই রাতে বন্ধ থাকছে ঢাকা বিমানবন্দরের রানওয়ে। আর তার জন্য ভোগান্তির সীমা নেই কলকাতার যাত্রীদের!

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নিয়মিত মালপত্র পাচ্ছেন না হংকং থেকে কলকাতায় আসা যাত্রীরা। রবিবার রাতে অন্তত ৫০ জন যাত্রীর মালপত্র আসেনি। ড্রাগন এয়ার বিমান সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ওই মালপত্র পাওয়া যাবে তিন-চার দিন পরে।

ঢাকার জন্য এই দুর্ভোগ কেন?

যে-সব আন্তর্জাতিক উড়ান কলকাতায় নামে, তাদের ক্ষেত্রে কলকাতার বিকল্প হিসেবে রাখা থাকে ঢাকার রানওয়ে। কোনও কারণে কলকাতায় নামতে না-পারলে বিমান চলে যায় ঢাকায়। মূলত দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কথা ভেবে বিশ্বের সব উড়ানের জন্যই গন্তব্য বিমানবন্দরের আশেপাশে একটি বিমানবন্দরকে বিকল্প হিসেবে রাখা হয়। সম্প্রতি ঢাকা জানিয়েছে, তাদের রানওয়ে আপাতত বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষত রাতের দিকে। তাই কলকাতায় নামতে আসা ড্রাগন এয়ার, এমিরেটস, কাতার-সহ প্রায় সমস্ত আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাই বিকল্প হিসেবে অন্য বিমানবন্দর ব্যবহার করছে। এমিরেটস ব্যবহার করছে তাইল্যান্ডের চেংমাই। কাতার ব্যবহার করছে কাঠমান্ডুকে। তাই এয়ারওয়েজ ব্যবহার করছে লখনউ। ড্রাগনের মতো সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ব্যবহার করছে ইয়াঙ্গন।

বিকল্প হিসেবে ইয়াঙ্গন বিমানবন্দর রাখার ফলে হংকং থেকে ওড়ার আগে বেশি জ্বালানি তুলতে হচ্ছে ড্রাগন এয়ারের বিমানকে। কারণ, শুধু কলকাতায় পৌঁছলেই হবে না। কোনও কারণে নামতে না-পারলে যাত্রীদের নিয়ে তো ইয়াঙ্গন পৌঁছতে হবে। তাই হিসেব করে সেই পরিমাণ জ্বালানি তুলতে হবে। কলকাতা থেকে ঢাকার আকাশপথের দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। আর কলকাতা থেকে ইয়াঙ্গন ১৬০০ কিলোমিটারেরও বেশি। ফলে এখন অনেক বেশি জ্বালানি লাগছে। ড্রাগন এয়ার হংকং-কলকাতা রুটে ব্যবহার করে এয়ারবাস-৩২০ বিমান। যাতে সাধারণ ও বিজনেস শ্রেণি মিলিয়ে যাত্রী ধরে ১৫৮ জন। কিন্তু প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বেশি জ্বালানি ও যাত্রী নিয়ে বিমানের ওজন যা দাঁড়াচ্ছে, তাতে যাত্রীদের মালপত্র আনা যাচ্ছে না।

সিঙ্গাপুর, এমিরেটস বা অন্যান্য সংস্থার এই সমস্যা হচ্ছে না কেন?

এমিরেটস, তাই, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স তুলনায় বড় বিমান ব্যবহার করে। তাদের জ্বালানি নেওয়ার ক্ষমতা এমনিতেই বেশি। ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম। ড্রাগনের মতো এয়ারবাস-৩২০ বিমান ব্যবহার করে শুধু কাতার। তারা বিকল্প হিসেবে কাঠমান্ডুকে রাখায় তাদেরও বেশি জ্বালানি তুলতে হচ্ছে। তবে ওই বিমান সংস্থার বক্তব্য, যতটা অতিরিক্ত জ্বালানি তুলতে হচ্ছে, তার জন্য যাত্রীদের মালপত্র ফেলে রাখার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে না।

রবিবার রাতে হংকং থেকে কলকাতায় আসার পরে অন্তত ৫০ জন যাত্রী মালপত্র পাননি। তাঁদের মধ্যে আছেন ভারতীয় রেল বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য সুভাষরঞ্জন ঠাকুর। তিনি বেড়াতে গিয়েছিলেন আমেরিকায়। ৩৭ জনের দল। নিউ ইয়র্ক থেকে ক্যাথে প্যাসিফিকের বিমান ধরে হংকং পৌঁছন। সেখান থেকে রবিবার রাতে ড্রাগন এয়ারের (ক্যাথে-র সহযোগী সংস্থা) উড়ানে কলকাতায়। বিমানবন্দরে নেমে দেখেন, তাঁদের ৩৭ জন ছাড়াও অন্য অনেক যাত্রীর মালপত্র আসেনি। তবে না-আসার কারণ হিসেবে এত কিছু কেউ ব্যাখ্যা করেননি। একটি ফর্ম পূরণ করিয়ে ফোন নম্বর নিয়ে বলে দেওয়া হয়েছে, তিন-চার দিন পরে মালপত্র বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। সুভাষবাবুর কথায়, “এর জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। চাওয়াও হয়েছিল। কিন্তু তা নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি বিমান সংস্থা।”

১৮ জুন কলকাতায় এসে অন্য এক অভিজ্ঞতা হয়েছে চিকিৎসক শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের। সান-ফ্রান্সিসকো থেকে হংকং পৌঁছনোর পরে তাঁকে হংকং-কলকাতা রুটের বোর্ডিং কার্ড দেওয়া হচ্ছিল না। বলা হয়েছিল, কলকাতা যাওয়ার উড়ান ভর্তি। জায়গা নেই। বিস্মিত শুভাশিসবাবু জিজ্ঞাসা করেন, “আমার তো বৈধ টিকিট রয়েছে! বিমানে উঠতে পারব না কেন?” বিমান ছাড়ার প্রায় এক ঘণ্টা আগে তাঁকে বোর্ডিং কার্ড দেওয়া হয় এবং তা নিয়ে বিমানে উঠে হতবাক শুভাশিসবাবু দেখেন, ঢাউস বিমানের অর্ধেক আসনই ফাঁকা। জানা যায়, শেষ মুহূর্তে এয়ারবাস ৩২০-র বদলে ৩৩০ ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে সাধারণ ও বিজনেস শ্রেণি মিলিয়ে যাত্রী ধরে ২৮৫ জন।

বিমান সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, বেশি জ্বালানি নিতে গিয়ে হংকং থেকে মালপত্র তোলা যাচ্ছে না। ফলে তা জমে জমে পাহাড়প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে হংকং বিমানবন্দরে। সেই জন্য তিন-চার দিন অন্তর একটি বড় ৩৩০ বিমান চালিয়ে আটকে থাকা মালপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে কলকাতায়। আবার শুরু হচ্ছে পুরনো রুটিন।

sunanda ghosh dhaka airport kolkata airport
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy