এক দিন সিডনি। পরের দিন পেশোয়ার। তার পরের দিন কি দিল্লি? নাকি ভারতেরই অন্য কোনও বড় শহর? দুনিয়া কাঁপানো দুই জঙ্গি হামলার পর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা কিন্তু তেমনই আশঙ্কা করছেন।
মাত্র পাঁচ সপ্তাহ পরেই প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি হয়ে দিল্লি আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার আগে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-সহ বিভিন্ন সূত্র থেকে সতর্কবার্তা এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। যার সারমর্ম হল এক মাসের মধ্যেই ভারতে বড় ধরনের হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে একাধিক জঙ্গি সংগঠন। তাদের লক্ষ্য হল, ওবামার সফরের আগে হামলা চালিয়ে বিশ্ব জুড়ে সাড়া ফেলে দেওয়া।
এই পরিস্থিতিতে আজ সমস্ত রাজ্যের পুলিশ প্রধানকে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে কেন্দ্র। বলা হয়েছে, ‘প্রতিবেশী দেশে ও বিশ্বের অন্য প্রান্তে যে ভাবে সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে, তা রুখতে দেশের প্রতিটি গোয়েন্দা সংস্থা-সহ রাজ্য পুলিশকে জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত সতর্ক (হাই অ্যালার্ট) থাকতে বলা হচ্ছে।’ গোয়েন্দাদের মতে, এ দেশে জঙ্গিদের প্রথম পছন্দ হল রাজধানী দিল্লি। পেশোয়ার নয়, এ ক্ষেত্রে সিডনির লিন্ড কাফের উদাহরণই তুলে ধরছেন তাঁরা। বলছেন, সিডনির ধাঁচেই দিল্লির একাধিক হোটেলের লবিতে হামলা চালাতে পারে জঙ্গিরা।
গোয়েন্দাদের মতে, সিডনির ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে, মাত্র এক জন মানুষ কী ভাবে একাধিক লোককে পণবন্দি করে রাখতে পারে। এই ধরনের হামলা হোটেল ছাড়াও হতে পারে কফি শপ, শপিং মল, স্কুল-কলেজে। রাজধানীর কনট প্লেস, লাজপত নগর, সরোজিনী নগরের মতো জনবহুল ও বাজার এলাকাগুলি নিয়ে বিশেষ চিন্তিত গোয়েন্দারা। আগামী কয়েক দিন ওই এলাকাগুলিতে সাবধানে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে দিল্লিবাসীকে। দিল্লি পুলিশের কমিশনার বি এস বাসি বলেছেন, “নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” পুলিশ সূত্রে খবর, পেশোয়ারের হানার পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লির ১৬০টি থানাকে স্কুল ও কলেজগুলির নিরাপত্তায় বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে, প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি বাড়াতে। দিল্লি ছাড়াও সব ক’টি রাজ্যের বাস টার্মিনাস, বড় স্টেশন ও বিমানবন্দরগুলিতে নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
কিন্তু কারা চালাতে পারে ওই হামলা? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, সিআইএ বলেছে, এই হামলার ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা নিতে পারে লস্কর-ই-তইবার প্রকাশ্য সংগঠন জামাত-উদ-দাওয়া। তাদের প্রধান হাফিজ সইদ তেমনই পরিকল্পনা নিয়েছে। নাশকতার কাজে তারা এ দেশে সিমি-র নেটওয়ার্ককে ব্যবহার করতে পারে বলেও জানতে পেরেছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। রাজ্যগুলিকে পাঠানো সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, সিমি ছাড়াও ভারতে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের যে নেটওয়ার্ক এখনও রয়ে গিয়েছে, তারাও হামলা চালাতে পারে। জামাত উদ দাওয়া তথা লস্করের পাশাপাশি পাকিস্তানের আরও কিছু জঙ্গি সংগঠনকে নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে। আশঙ্কা রয়েছে আইএস-কে নিয়ে। আইএস ভারতকে ‘শত্রু রাষ্ট্র’ ঘোষণা করেছে। গোয়েন্দাদের মতে, ভারতে বসবাসকারী ওই সংগঠনের ভাবধারায় বিশ্বাসীরাও হামলা চালাতে পারে।
তাই দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক, তা আজ কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেই কারণেই সন্ত্রাস দমনে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ে জোর দিয়েছে দিল্লি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy